ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দিল্লীতে প্রাঙ্গণেমোরের ‘আমি ও রবীন্দ্রনাথ’ এবং ‘ঈর্ষা’

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১০ ডিসেম্বর ২০১৭

দিল্লীতে প্রাঙ্গণেমোরের ‘আমি ও রবীন্দ্রনাথ’ এবং ‘ঈর্ষা’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রাঙ্গণেমোর বাংলাদেশের অন্যতম নন্দিত নাট্য সংগঠন। দলটির বিভিন্ন প্রযোজনা দেশে এবং বিদেশেও প্রশংসিত। বাংলাদেশে নিয়মিতভাবে রবীন্দ্র নাট্যচর্চার ক্ষেত্রে নতুন প্রাণ সঞ্চার করেছে দলটি। বিদেশের মাটিতে নাটক মঞ্চায়নের ধারাবাহিকতা এবার দিল্লীতে প্রাঙ্গণেমোর নাট্যদলের ২টি নাটক নিয়ে মঞ্চস্থ হবে। এর মধ্যে আগামী ১৬ ডিসেম্বর ‘আমি ও রবীন্দ্রনাথ’ ১৭ ডিসেম্বর ‘ঈর্ষা’ নাটকটি মঞ্চস্থ হবে। ইন্ডিয়ার নিউ দিল্লীর লোদি রোডের হ্যাবিটাট সেন্টারে পরপর দু’দিন সন্ধ্যা ৭টায় ওই দুটি নাটকের মঞ্চায়ন হবে বলে জানা গেছে। গ্রিনরুম থিয়েটারের সহযোগিতায় দুইদিনব্যাপী এই নাট্য প্রদর্শনীর আয়োজনে রয়েছে ইমপ্রেসারিও এ্যান্ড হ্যাবিটাট সেন্টার। প্রাঙ্গণেমোরের ‘আমি ও রবীন্দ্রনাথ’ নাটকটি রচনা, নির্দেশনা, পোশাক ও মঞ্চ পরিকল্পনার পাশাপাশি নাটকের একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয়ও করেন নূনা আফরোজ। এছাড়া নাটকটিতে আরও অভিনয় করেন অনন্ত হিরা, আউয়াল রেজা, রামিজ রাজু, তৌহিদ বিপ্লব ও সরোয়ার সৈকত। সঙ্গীত পরিকল্পনায় রামিজ রাজু ও আলোক পরিকল্পনায় তৌফিক রবিন। নাটকের কাহিনীতে দেখা যায়, অথৈ একদিন তার বন্ধুর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিধন্য কুষ্টিয়ার শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে বেড়াতে যায়। কুঠিবাড়ি দেখতে দেখতে একসময় অথৈ একাই দোতলার সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে যায়। হঠাৎ অথৈয়ের সামনে এসে হাজির হন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ। তিনি অথৈকে কুঠিবাড়ি ঘুরিয়ে দেখার আহ্বান জানান। অথৈ ভুলে যায় তার বন্ধুসহ পৃথিবীর সবকিছু। সে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে কথা বলতে থাকে। অথৈয়ের সামনে পরপর হাজির হয় ২৯ বছর, ৬৯ বছর, ২১ বছর ও ৮০ বছরের ভিন্ন ভিন্ন রবীন্দ্রনাথ। এই চার বছরের রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে অথৈয়ের কথা হয় সেই সময়ের রবীন্দ্রনাথের ব্যক্তিজীবন ও তার সৃজনশীলতা নিয়ে। আর রবীন্দ্রনাথের প্রতিটি বয়সের সঙ্গে অথৈও বদলে যেতে থাকে ভিন্ন ভিন্ন চরিত্র ও বয়সে। বিভিন্ন বয়সী রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে অথৈয়ের কথোপকথনের মধ্য দিয়ে উঠে এসেছে রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিকর্ম ও তার ব্যক্তিজীবনের নানাদিক। অন্যদিকে প্রাঙ্গণেমোরের ‘ঈর্ষা’ নাটকটি রচনা করেছেন সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক। নির্দেশনা দিয়েছেন অনন্ত হিরা। নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নূনা আফরোজ, রামিজ রাজু ও অনন্ত হিরা। নাটকের মঞ্চ পরিকল্পনায় শাহীনুর রহমান, আলো জিল্লুর রহমান, সঙ্গীত রামিজ রাজু ও পোশাক নূনা আফরোজ। কাব্য নাটক ‘ঈর্ষা’র গল্প জীবন থেকে জীবনে বিস্তৃত আর দ্বন্দ্ব-সংঘাতে মুখর যা বর্ণনাতীত। সেই সঙ্গে আছে শিল্পের সঙ্গে শিল্পের দ্বন্দ্ব শিল্পীর সঙ্গে শিল্পীর দ্বন্দ্বও। আছে মানুষের সঙ্গে মানুষের এবং শিল্পীর সঙ্গে শিল্পীর প্রেম, ভালবাসা; আছে মানবজীবনের আরেক অপরিহার্য এবং অত্যন্ত গোপন বিষয় শারীরিক সম্পর্ক বা যৌনতার কথা। আছে রূপসী বাংলার, শ্যামল উজ্জ্বল, রূপশালী গর্ভবতী ধানের বাংলার রূপের বর্ণনা, আছে মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধও। ‘প্রেমিকের হৃদয় যদি পোড়ে তো একমাত্র ঈর্ষার আগুনে পোড়ে, ঈর্ষায় যে পোড়েনি, প্রেম সে হৃদয়ে ধরেনি, ঈর্ষা এক ঠা-া নীল আগুন’। অথবা ‘রাষ্ট্রের বির্পযয়ে পথে নামা যায়, বক্তৃতা করা যায়, করা যায় মিটিং মিছিল, গেরিলাও হওয়া যায়। কিন্তু বিপর্যয় হয় যদি ব্যক্তিগত, যদি নষ্ট হয়ে যায় নিজেরই ফসলের মাঠ, কি তবে কর্তব্য হয়? মিছিল কি নামানো যায়? সেøাগান কি দেয়া যায়? গড়ে তোলা যায় গোপন বাহিনী শুধু নিজেকে নিয়ে?’ অথবা ’অবরুদ্ধ শৃঙ্খলিত যেখানে স্বদেশ, রং তুলি কাগজ সব অর্থহীন। বাড়িতে ডাকাত যদি পড়ে, বেহালা যে বাজায় তাকেও বল্লম হাতে তুলে নিতে হয় অথবা বেঘোরে প্রাণ দিতে হয় নর্দমায় বেহালা গড়ায়’। এ রকম অসংখ্য জীবন তত্ত্ব কথাসমৃদ্ধ নাট্য কথনে বিমুগ্ধ হয় দর্শক। ১ ঘণ্টা ৫০ মিনিটের এই নাটকের তিনটি দৃশ্যে রয়েছে মাত্র ৭টি সংলাপ। নাটকটির সবচেয়ে বড় সংলাপের ব্যাপ্তি ৩৬ মিনিট এবং সবচেয়ে ছোট সংলাপটি ১৬ মিনিট ব্যাপ্তিকালের। নাটক প্রসঙ্গে নির্দেশক অনন্ত হীরা বলেন, নাটকটির বিশেষত্ব হলো এটি কাব্যিক নাটক। নাটকের গল্পটি তিন চিত্রশিল্পীর শিল্পের দ্বন্দ্ব নিয়ে। চারুকলার একজন নারী, এক পুরুষ শিক্ষক ও এক ছাত্র এই তিন চরিত্র নিয়েই পুরো নাটকটি। এই কথাটি সন্দেহাতীতভাবেই বলা যায় এ রকম কাঠামোতে নাটক লেখার নিরীক্ষা এর আগে বাংলা ভাষায় হয়নি। এ ধরনের নাটক মঞ্চে এনে দর্শক ধরে রাখাটা সত্যিই চ্যালেঞ্জিং। অবশ্যই দীর্ঘ এই গাম্ভীর্যপূর্ণ সংলাপগুলোর প্রক্ষেপণে অভিনয়শিল্পীদের কৌশল বেশ ভালই উপভোগ করেন দর্শকরা।
×