ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যায় শহীদদের নিবেদিত লোকগানের আসর

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ১০ ডিসেম্বর ২০১৭

বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যায় শহীদদের নিবেদিত লোকগানের আসর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাইরে ঝরছে ঝিরঝির বৃষ্টি। মিলনায়তনে ভেসে বেড়ায় মৃত্তিকালগ্ন গানের সুর। শেকড়ের সুরে সুরে সিক্ত হয় শ্রোতার হৃদয়। জলমগ্ন সন্ধ্যায় কেটে যায় অনাবিল সময়। লালন, হাছনসহ বাংলার লোককবিদের মরমী বাণীতে আপ্লুত হয় ব্যস্ত শহরের নাগরিক মন। গানের মাঝে খুঁজে নেয় ফেলে আসা গ্রামীণ জীবনকে। শনিবার সন্ধ্যায় জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত লোকগানের আসরটি এভাবেই প্রভাবিত করল সঙ্গীতপ্রেমীদের। বিজয়ের মাসে শহীদদের নিবেদিত এ অনুষ্ঠানে পরিবেশনা উপস্থাপন করে গানের দল বহ্নিশিখা। সঙ্গীতসন্ধ্যাটির আয়োজন করে ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র (আইজিসিসি)। পরিবেশনা শুরুর আগে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পরিচালক জয়শ্রী কু-ু। বহ্নিশিখার পক্ষে শুভেচ্ছা বক্তব্যে সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, বিজয়ের মাসে সঙ্গীতানুষ্ঠানটি উৎসর্গ করা হলো একাত্তরের বীর শহীদদের। আর মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ভিত্তি পাওয়া সম্পর্কটি আারও দৃঢ় হচ্ছে এ ধরনের সাংস্কৃতিক বিনিময়ের মাধ্যমে। বহ্নিশিখার ১৪ শিল্পীর দলটির নেতৃত্বে ছিলেন আবিদা রহমান সেতু। লোকগানের পাশাপাশি পরিবেশিত হয় রবীন্দ্রসঙ্গীত, নজরুলসঙ্গীত ও ডিএল রায়ের গান। পরিবেশনার শুরু হয় দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের দেশাত্মবোধক গানের সুরে। অনেক কণ্ঠ এক সুরে গেয়ে শোনায় ‘ধন ধান্য পুষ্প ভরা, আমাদের এই বসুন্ধরা’। এরপর গীত হয় আবদুল লতিফের ‘সোনা সোনা লোকে বলে শোনা’ ও শ্যামল দত্তের ‘আমরা সবাই বাঙালি’ গান। রবীন্দ্রনাথের ‘তুমি রবে নীরবে’ গানের পরেই পরিবেশিত হয় নজরুলের ‘আলগা করো গো খোঁপার বাঁধন’। এরপর আবার আসে লোকগানের পালা। শুরু হয় ফকির লালন সাঁইয়ের ‘এসব দেখি কানার হাট-বাজার’ দিয়ে। এরপর একে একে বহ্নিশিখার শিল্পীরা গেয়ে শোনায় অসমের লোকগান ‘জারুলের ফুলে দলে দলে ভ্রমর’ এবং বাংলার সংগৃহীত ‘সোহাগ চাঁদ বদনি ধোনি নাচ তো দেখি’ ও ‘সোনার বাঁন্ধাইলা লাও’ শিরোনামের গান। হাছনরাজার ‘বাউলা কে বানাইলো রে’ গানের পরেই শোনা যায় রসিক লাল দাসের ‘বন্ধের বাঁশি বাজে’, সিরীন চক্রবর্তীর ‘নাও ছাড়িয়া দে’, ভূপেন হাজারিকার ‘আজ জীবন খুঁজে পাবি’, কেশব মহন্তের ‘শিলে শিলে ঠেকা খালে’ গান। এর পর পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের লোকগান ‘কালো জলে কুচলা তলে’ গেয়ে শোনান শিল্পীরা। এ সুর থামতেই পর পর দুটি শাহ আবদুল করিমের গান ‘কোন মেস্তরি নাও বানাইলো’ ও ‘গ্রামের নওজোয়ান হিন্দু-মুসলমান’। সব শেষে প্রয়াত শিল্পী কালিকা প্রসাদের ‘আমি তোমারই নাম গাই’ গানটির মাধ্যমে শেষ হয় আয়োজন। আলোকচিত্রে রোহিঙ্গাদের অনিশ্চিত জীবন ॥ বাংলাদেশ উপকূলে সাম্পান থেকে নামছে একদল রোহিঙ্গা, মাথা গোঁজার ঠাঁই গড়তে জমি সমান করছেন এক মহিলা, এক শিশুর স্থবির মুখ, অন্য ফ্রেমে এই দুর্যোগের কালেও খেলায় মেতে উঠেছে শিশুরাÑরোহিঙ্গাদের অনিশ্চিত জীবনের খ- খ- চিত্র তুলে ধরেছেন আলোকচিত্রী সুমন পাল। সেসব ছবি নিয়ে ধানম-ির ইএমকে সেন্টারে শনিবার থেকে শুরু হলো ‘অনিশ্চিত জীবনের দোটানা’ শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনী । মিয়ানমারের জাতিগত সংঘাতের শিকার হয়ে বাংলাদেশের সমুদ্রবর্তী সীমান্তে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মানবেতর জীবনযাপনের গল্প উঠে এসেছে এ প্রদর্শনীতে। প্রতিটি ছবির মধ্যে উঠে এসেছে রাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত ভূমিহীন মানুষের বেদনা। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলোকচিত্রী আবীর আবদল্লাহ ও ইএমকে সেন্টারের পরিচালক এম কে আরেফ প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন। প্রদর্শনী সম্পর্কে সুমন পাল বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, রোহিঙ্গাদের এখন আর নিজের স্থায়ী আশ্রয় বলে কিছু নেই, কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলোই এখন তাদের মাথার ওপর একমাত্র ছাদ হয়ে আছে। তাদের জীবন এবং সংসার একেবারেই অনিশ্চিত। তাদের ভবিষ্যত কি? অনিশ্চিত জীবনের এই কঠিন দোটানা আর কতদিন বয়ে বেড়াতে হবে ওদের? প্রশ্নগুলোর উত্তরই খুঁজে ফেরা হয়েছে প্রদর্শনীর আলোকচিত্রগুলোয়। আগামী ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে এ প্রদর্শনী। প্রতিদিন সকাল সাড়ে নয়টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকবে। রোকেয়া দিবসে কণ্ঠশীলনের ‘মহীয়সী রোকেয়া’ ॥ শনিবার ছিল বাঙালী নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার জন্ম ও মৃত্যুদিবস। দেশব্যাপী দিনটি পালন করা হয়েছে রোকেয়া দিবস হিসেবে। এ উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার স্টুডিও থিয়েটার হলে কণ্ঠশীলন পরিবেশন করে আবৃত্তি প্রযোজনা ‘মহীয়সী রোকেয়া’। নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার জীবন ও কর্ম নিয়ে সাজানো হয়েছে আবৃত্তির পূর্ণাঙ্গ প্রযোজনাটি। তার বিখ্যাত গ্রন্থাবলী অবরোধবাসিনী, মতিচুর, সুলতানার স্বপ্ন, চিঠি-পত্র ও পদ্মরাগ উপন্যাসের বিষয়গুলো নিয়ে সাজানো ছিল প্রযোজনাটি। এটির নির্দেশনায় ছিলেন কণ্ঠশীলন প্রশিক্ষক ও নির্দেশক গোলাম সারোয়ার। অনুষ্ঠানের শুরুতে নাট্যজন লাকী ইনাম বলেন, বেগম রোকেয়া ছিলেন নারী শিক্ষার একটি প্রতিষ্ঠান। ঊনবিংশ শতাব্দীর কুসংস্কারাচ্ছন্ন রক্ষণশীল সমাজের শৃঙ্খল ভেঙ্গে নারী জাতির মধ্যে ছড়িয়ে দেন শিক্ষার আলো। ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে নারীর প্রতি সমাজের অন্যায় ও বৈষম্যমূলক আচরণের মূলে আঘাত হানেন। তিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনসহ সমাজ উন্নয়নমূলক বিভিন্ন কাজের মধ্য দিয়ে পশ্চাৎপদ নারী সমাজকে আলোর পথ দেখান। প্রযোজনায় অংশগ্রহণ করেছেন হাসিনা হাসি, ইলা রহমান, খাইরুন নাহার স্নিগ্ধ, রাজিয়া সুলতানা মুক্তা, মিফতাহুল জান্নাত নিপুণ, শিরিন সুলতানা মিথিলা, শাহানা রহমান, আফরিন খান, আয়শা বিনতে খালেক, অনুপমা আলম, রাবেয়া হক, রোখসানা ফেরদৌসী কুইন ও সানজিদা সুলতানা। প্রযোজনাটির আলোক পরিকল্পনা করেছেন ওয়াসিম আহমেদ, সঙ্গীত পরিকল্পনায় অনিন্দ্য মাহদী, কোরিওগ্রাফিতে ছিলেন সানজিদা আলম আঁখি এবং মঞ্চ পরিকল্পনায় মোস্তফা কামাল। আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে যন্ত্রসঙ্গীতের আসর ॥ বৃষ্টিস্নাত বিকেলে ভেসে বেড়ায় পশ্চিমা ক্ল্যাসিকাল গানের সুর। সেই সুরে আপ্লুত সঙ্গীতানুরাগীদের অন্তরাত্মা। সঙ্গীতাসরটি অনুষ্ঠিত হলো ধানম-ির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে। ইফতেখার আনোয়ার পরিচালিত যন্ত্রসঙ্গীতের দল ফ্লেমিং এ্যাকোউস্টিকস শনিবার বিকেলে বাজিয়ে শোনায় দারুণ সব সুর। ঘণ্টাব্যাপী এ অনুষ্ঠানে ছিল ইয়োহান সেবাস্টিয়ান বাখ, লুডভিগ ফন বেটোভেন, নিকোলো পাগানিনি, জোয়াকিন রদ্রিগোর কম্পোজিশন থেকে সলো, ডুয়েট এবং ট্রিও পরিবেশনা। ক্ল্যাসিকাল গিটার, ভায়োলিন ও বাঁশির সমন্বয়ে পরিবেশিত হয় এসব সুর।
×