ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আগের অবস্থানেই অনড় মিয়ানমার ॥ ঘনীভূত হচ্ছে রোহিঙ্গা সঙ্কট

প্রকাশিত: ০৫:০৭, ১০ ডিসেম্বর ২০১৭

আগের অবস্থানেই অনড় মিয়ানমার ॥ ঘনীভূত হচ্ছে রোহিঙ্গা সঙ্কট

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা ইস্যুতে আগের অবস্থানে এখনও অটল থাকায় সঙ্কট ক্রমশ ঘনীভূত হচ্ছে। ইতোপূর্বেকার ন্যায় স্রোতের মতো না আসলেও এখনও বিক্ষিপ্তভাবে ছোট ছোট দলে রোহিঙ্গা আগমন অব্যাহত রয়েছে। শনিবারও টেকনাফ সীমান্তে এসেছে অর্ধশতাধিক। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ার স্বাভাবিক পরিস্থিতির ক্রমাগত অবনতি ঘটছে। রাস্তার দু’পাশ থেকে সরে গেলেও উখিয়া টেকনাফের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে যত্রতত্র রোহিঙ্গারা অস্থায়ী বসতি গেড়ে বসেছে। সরকার তাদের আশ্রয়ের জন্য ইতোমধ্যে যে বিপুল পরিমাণ খাস জমি বরাদ্দ দিয়েছে তার নির্মাণ কাজ এখনও সম্পন্ন করা যায়নি। এছাড়া ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচীর আওতায় আনার যে ঘোষণা ছিল তা এখনও কার্যকর হয়নি। তবে সেনা তৎপরতায় ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চলছে। অপরদিকে, টেকনাফ থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি পর্যন্ত সীমান্তে বিজিবির টহলদারি জোরদার থাকলেও ওপার থেকে যখন রোহিঙ্গারা ফাঁক ফোঁকরে চলে আসে তাদের ফিরিয়ে না দিয়ে গ্রহণ করে নির্ধারিত আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। সরকারী পরিসংখ্যান অনুযায়ী এ শনিবার পর্যন্ত ৭ লাখ ৭৩ হাজার রোহিঙ্গার নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে। নতুন নতুন যে সব রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটছে তাদের সকলেরই অভিযোগ রাখাইন রাজ্যে এখনও অস্থিতিশীল। বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমার প্রত্যাবাসন প্রশ্নে সমঝোতা চুক্তি সম্পাদন করলেও সেখানে অবস্থানগত রোহিঙ্গারা এর কোন অগ্রগতি দেখছে না। এছাড়া উগ্র মগ সন্ত্রাসীদের নানামুখী নিপীড়ন অব্যাহত রয়েছে। তারা আরও জানিয়েছে, যদিও মংডু শহরের কয়েকটি এলাকা ছাড়া রাখাইন রাজ্যের অধিকাংশ পয়েন্ট থেকে সেনা সদস্যদের ব্যারাকে ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে। কিন্তু সেখানকার পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের রোহিঙ্গাবিরোধী তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। মিয়ানমার সরকার আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মুখে যাই বলুক না কেন, বাস্তব পরিস্থিতি ভিন্ন। নতুন অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা আরও জানিয়েছে, প্রত্যাবাসন প্রশ্নে দু’দেশের স্মারক সমঝোতায় তারা আশাবাদী হয়েছিল। কিন্তু চুক্তি সম্পাদনের ১৬ দিন পেরিয়ে গেলেও এর বাস্তবায়নের কোন লক্ষণ দেখছে না। এছাড়া নাগরিকত্বসহ মৌলিক ও মানবাধিকার নিশ্চিত করা না হলে সেখানে রোহিঙ্গাদের ফিরে গিয়ে আবারও মৃত্যুর মুখে পতিত হতে হবে। অপরদিকে, প্রত্যাবাসন শুরু করার কথা বলে রাখাইনে বাড়িঘর হারা রোহিঙ্গাদের জন্য যে ক্যাম্প তৈরির ঘোষণা সে দেশের সরকার দিয়ে রেখেছে তাতেও কোন অগ্রগতি নেই। রাখাইন রাজ্যের মংডুর নলবুনিয়ার বিশাল এলাকাজুড়ে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় শিবির স্থাপন করার ঘোষণা রয়েছে। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে শেড নির্মাণকল্পে শুধুমাত্র নির্মাণ সামগ্রী মজুদ করে চলেছে। শনিবার পর্যন্ত জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় শিবির নির্মাণ জন্য বাঁশ, গাছ ও গোলপাতাসহ বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রী সেখানে মজুদ করা হচ্ছে। ইতোপূর্বে বাংলাদেশ থেকে ফেরত যাওয়া ৫ শতাধিক রোহিঙ্গা পরিবারকে থাকার জন্য সে দেশের সরকার এ ধরনের আশ্রয় শিবির করেছে। সেখানে ওসব রোহিঙ্গারা বসবাস করছে। এদিকে, কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া অঞ্চলের স্থায়ী বাসিন্দাদের দুর্ভোগ ক্রমাগতভাবে বেড়েই চলেছে। সর্বত্র চলছে এক ধরনের হাহাকার। বাজারে নিত্যপণ্যের অগ্নিমূল্য। হাটে বাজারে দোকানে সর্বত্র রোহিঙ্গা আর রোহিঙ্গায় সয়লাব হয়ে আছে। শুধু তাই নয়, কক্সবাজারের লিংক রোড থেকে শাহপরীরদ্বীপ পর্যন্ত স্বাভাবিক যানবাহন চলাচল ব্যবস্থায় বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে এসেছে। বেসরকারী পর্যায়ে আগের তুলনায় ত্রাণ সামগ্রী এখন হ্রাস পেয়েছে। শুরুতে যেভাবে বেসরকারী পর্যায় থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ সরবরাহে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সে দৃশ্য এখন আর নেই। তবে ৭১টি এনজিও সংস্থার পক্ষে বিভিন্নভাবে ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত রাখা হয়েছে। এর পাশাপাশি কিছু কিছু এনজিও’র বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরে না যাওয়ার যে উস্কানি সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে, সে ব্যাপারে তদন্ত চলছে। এছাড়া রোহিঙ্গারা অবৈধভাবে কক্সবাজার শহর এলাকায় বাসা বাড়ি ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে মিশে থাকছে তাদের বিরুদ্ধে যে অভিযান চলার কথা তাও এখনও গতিহীন। এ অবস্থায় রোহিঙ্গা ইস্যুতে যারা সজাগ তাদের পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়েছে আগামীতে গোটা কক্সবাজার অঞ্চল রোহিঙ্গাদের নিয়ে বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়বে। কূটনৈতিক পর্যায়ে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে যে তৎপরতা চলছে তা এখনও অব্যাহত এর সুফল এখনও বয়ে আসেনি। ফলে এ সঙ্কট আরও ঘনীভূত হওয়ার পথেই যাচ্ছে বলে প্রতীয়মান।
×