ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সৌদিতে জিয়া পরিবারের অর্থ দুদককে তদন্তের আহ্বান কাদেরের

প্রকাশিত: ০৫:০৭, ১০ ডিসেম্বর ২০১৭

সৌদিতে জিয়া পরিবারের অর্থ দুদককে তদন্তের আহ্বান কাদেরের

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, জিয়া পরিবারের দুর্নীতির বিষয়টি প্রমাণিত। তাদের দুর্নীতি নতুন করে প্রমাণ করার কিছু নেই। সত্য বলার সৎ সাহস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আছে। তথ্যপ্রমাণ ছাড়া শেখ হাসিনা কোন কথা বলেননি। তিনি যা বলেছেন, জেনে শুনেই বলেছেন এবং এর তথ্যপ্রমাণ আছে বলেই বলেছেন। এ বিষয়ে বিএনপি আদালতে গেলে সেখানেই তা মোকাবেলা করবে আওয়ামী লীগ। শনিবার সকালে ধানমন্ডি আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেল প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণ করতে না পারলে বিএনপির বিরুদ্ধেও মামলা করা হবে। ১২টি দেশে খালেদা জিয়া ও তার স্বজনদের বিনিয়োগের বিষয়ে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, জিয়া পরিবারের সৌদি আরবে অর্থ পাচার ও বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে যে অর্থ বিদেশে পাচার করেছে, এগুলোর তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমরা দুদককে আহ্বান জানাচ্ছি। ওবায়দুল কাদের বলেন, শেখ হাসিনার বক্তব্যকে খ-ন করতে গিয়ে মির্জা ফখরুল যে অশ্রাব্য ভাষা ব্যবহার করেছেন, সেটা আপনাদের আসল চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ। এক্ষেত্রে তাদের দাবি আষাঢ়ে গল্প। মির্জা ফখরুলের ওই বক্তব্য কখনও কখনও মনে হয়, শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা, কখনও মনে হয় সত্যকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা, কখনও মনে হয় অন্ধকারে ঢিল ছোড়ার চেষ্টা। ধান ভানতে শিবের গীত গেয়েছেন। দুদকে গিয়ে প্রমাণ করুন আপনাদের নেত্রী দুর্নীতিবাজ নয়। তিনি বলেন, তারা (বিএনপি) বুঝে ফেলেছে, ইতোমধ্যে দুর্নীতির মামলা ঝুলছে, আরও দুর্নীতির মামলা আসছে। নির্বাচন সামনে তারা এখন হাবুডুবু খাচ্ছে হতাশার সাগরে। তাই এখন আবোল-তাবোল বলা শুরু করেছে। সেতুমন্ত্রী বলেন, পাপ কখনও বাপকে ছাড়ে না। অপরাধ করলে তার বিচার হবেই। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী মিথ্যাচার করেছেন বলে যে অভিযোগ ফখরুল করেছেন, আদালতে তারা যদি তা প্রমাণ করতে না পারে তবে তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। ওবায়দুল কাদের বলেন, ক্ষমা তো বিএনপিকে চাইতে হবে। এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের ক্ষমা চাওয়ার কোন দৃষ্টান্ত নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তথ্যপ্রমাণ ছাড়া বিএনপির চেয়ারপার্সনের দুর্নীতির বিষয়ে কোন কথা বলেননি। ওবায়দুল কাদের বলেন, আপনাদের কি মনে আছে, আমি যখন ২০০৫ সালে পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সংবাদ সম্মেলন করে বিমানবন্দরে ৩০০টি স্যুটকেসের কথা বলেছিলাম, এই কাহিনী কোন কল্পকাহিনী নয়। প্রমাণিত সত্য আমেরিকা, সিঙ্গাপুরের আদালত। তারপরও আপনারা কোন দিন জাতির কাছে ক্ষমা চাননি। এগুলো কী করে অস্বীকার করবেন? তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সততা বাংলাদেশে সর্বজনস্বীকৃত ও প্রতিষ্ঠিত; বাংলাদেশের বাইরেও তার সততা স্বীকৃত। বিশ্বের ১৭৩ টি দেশের সরকার প্রধানদের মধ্যে সততার দিক থেকে তিনি বিশ্বের তৃতীয়। শেখ হাসিনার সৎ সরকার প্রধান হিসেবে নাম আসার পর থেকেই বিএনপির গাত্রদাহ শুরু হয়েছে। তারা তাদের মিথ্যাচারের পুরনো ভাঙ্গা রেকর্ড বাজানো শুরু করেছেন। সেতুমন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনা জিয়া পরিবারের দুর্নীতির বিষয়ে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বলেননি। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন। আর তাতেই বিএনপি গাত্রদাহ। ওবায়দুল কাদের বলেন, সত্য যতই অপ্রিয় হোক, যতই কঠিন হোক, সত্যের বন্যা অপ্রতিরোধ্য। যে সত্য দিবালোকের মতো পরিষ্কার, তা চাপা দিয়ে কারও কোন লাভ নেই। ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সৌদি আরবের প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে সেদেশের ১১ প্রিন্সসহ কিছু মন্ত্রীর নাম উঠে আসে। ওই অভিযানে আটক এক প্রিন্স বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, তার পুত্র তারেক রহমান ও খালেদা জিয়ার ভাই প্রয়াত সাঈদ ইস্কান্দারের সেদেশে বিনিয়োগ থাকার কথা স্বীকার করে।’ তিনি বলেন, ‘সৌদি আরব ও কাতারসহ বিশ্বের ১২টি দেশে বাণিজ্যিক বিতানসহ পেট্রো কেমিক্যাল ব্যবসায় জিয়া পরিবারের ১২ হাজার বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ রয়েছে বলে বিদেশী গণমাধ্যমের খবরে প্রকাশ পায়। এ সময় কাদের যুক্তরাজ্যের লন্ডনভিত্তিক প্যারাডাইস পেপার, গ্লোবাল এ্যাসেট রিকোভারি হ্যান্ডবুকে প্রকাশিত জিয়া পরিবারের বিদেশে পাচার করা সম্পদের প্রতিবেদন সাংবাদিকদের দেখান। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেলসহ সরকারের প্রতিটি মেগা প্রকল্প সম্পূর্ণ দুর্নীতিমুক্তভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ প্রকল্পগুলো নিয়ে বিএনপি দুর্নীতির যে অভিযোগ এনেছে তা বিএনপিকেই প্রমাণ করতে হবে। বিশ্বব্যাংক যেখানে দুর্নীতি খুঁজে পায় নি সেখানে তার এ অভিযোগ কতটা হাস্যকর তা দেশের মানুষ জানে। প্রমাণ দিতে না পারলে তাদের বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। এক প্রশ্নের জবাবে সেতুমন্ত্রী বলেন, দুদক ইতোমধ্যে জিয়া পরিবারের বিদেশের পাচার করা সম্পদের বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে। বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল রাখার জন্যই এসব অর্থ কেলেঙ্কারির সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচার হওয়া উচিত। সেতুমন্ত্রী বলেন, বিদেশে সম্পদ পাচারের জন্য জিয়া পরিবারকে শুধু ক্ষমা চাইলেই হবে না অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন ও পাচারের দায়ে তাদের বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। তিনি বলেন, বিএনপি মহাসচিব পদ্মা সেতু প্রকল্পসহ বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে দুর্নীতি খোঁজার চেষ্টা করেছেন। সংবাদ সম্মেলন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডাঃ দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, দফতর সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডাঃ রোকেয়া সুলতানা, আইন সম্পাদক এ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল হক, কেন্দ্রীয় কার্য নির্বাহী সংসদের সদস্য এস এম কামাল হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
×