ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আজ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস

প্রকাশিত: ০৫:০২, ১০ ডিসেম্বর ২০১৭

 আজ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আজ ১০ ডিসেম্বর, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস। ১৯৪৮ সালের এই দিনে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র গৃহীত হয়। ১৯৫০ সালে এই দিনটিকে জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। সেই থেকে বিশ্বজুড়ে এ দিনটি পালিত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া পৃথক বাণী দিয়েছেন। দিবসটি উদযাপনে দিনব্যাপী কর্মসূচী পালন করবে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে দেয়া বাণীতে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বাংলাদেশের সংবিধানে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সকল মানবাধিকার ও সুশাসনের নিশ্চয়তা বিধান করা হয়েছে উল্লেখ করে বলেছেন, বর্তমান সরকার মানবাধিকার রক্ষায় বদ্ধপরিকর। তিনি বলেন, সর্বস্তরে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন-২০০৯ প্রণয়ন এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশন গঠন করা হয়েছে। জনগণের মৌলিক অধিকার সমুন্নত রাখতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ‘বিশ্ব মানবাধিকার দিবস’ পালিত হচ্ছে জেনে রাষ্ট্রপতি সন্তোষ প্রকাশ করেন। রাষ্ট্রপতি বলেন, ১৯৪৮ সালের এই দিনে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্র গৃহীত হয়। এরপর থেকে মানবাধিকারের প্রতি জাতিসমূহের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করতে প্রতিবছর ১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবস পালিত হয়ে আসছে। তিনি বলেন, সরকার দারিদ্র্য বিমোচন, জনগণের জীবনমান উন্নয়নসহ মানবাধিকার রক্ষায় দেশ ও দেশের বাইরে নিরলস প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ সম্প্রতি মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত বিপুল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়ে মানবাধিকার রক্ষায় এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। মানবতার এ অনন্য নিদর্শন স্থাপনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ উপাধি প্রদান করা হয়েছে। আবদুল হামিদ বলেন, মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সমুন্নত রাখার দায়িত্ব রাষ্ট্রের পাশাপাশি সকল প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির। দেশের সব নাগরিকের বিশেষ করে শিশু ও নারীর মানবাধিকার রক্ষায় সরকারী-বেসরকারী সংস্থার পাশাপাশি সর্বস্তরের জনগণকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। দিবসটি উপলক্ষে দেয়া বাণীতে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের পাশাপাশি মানবাধিকার সুরক্ষার কাজে নিয়োজিত বেসরকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা, উন্নয়ন সহযোগী, সিভিল সোসাইটি, গণমাধ্যম, মালিক ও শ্রমিক সংগঠনসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে আরও কার্যকর ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকার দেশের জনগণের মানবাধিকার সুরক্ষায় বদ্ধপরিকর উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘২০০৯ সালে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে আমরা জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগ করি। আমরা জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন প্রণয়ন ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশন গঠন করি। সরকার ইতোমধ্যে কমিশনকে ৪৮ জন জনবল প্রদান করেছে। কমিশনকে আরও শক্তিশালী করতে বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়েছে। ফলে কমিশন স্বাধীন এবং নিরপেক্ষভাবে কাজ করে যাচ্ছে।’ এ উপলক্ষে শেখ হাসিনা বাংলাদেশসহ বিশ্বের অগণিত মানুষকে আন্তরিক শুভেচ্ছা এবং বিশ্বের শোষিত-নিপীড়িত মানুষের সংগ্রামের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর বাণীতে বলেন, আমরা স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেছি। সংবিধান সংশোধন করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পথ বন্ধ করেছি। আমরা সব মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার করার মাধ্যমে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছি। জাতির পিতার হত্যার বিচারের রায় কার্যকর করা হয়েছে। ‘৭১ এর যুদ্ধাপরাধী-মানবতাবিরোধীদের বিচারের রায় কার্যকর করা হচ্ছে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন শোষিত, নির্যাতিত, মেহনতি মানুষের বন্ধু। তিনি আজীবন বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করেছেন। জাতির পিতা বলেছিলেন ‘বিশ্ব আজ দু’ভাগে বিভক্ত, একদিকে শোষক, আরেকদিকে শোষিত- আমি শোষিতের পক্ষে’। তাঁর নেতৃত্বে ১৯৭২ সালে প্রণীত বাংলাদেশের প্রথম সংবিধানে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারকে রাষ্ট্র পরিচালনার অন্যতম মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করা হয় বলে বাণীতে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সব কর্মসূচীর সার্বিক সাফল্য কামনা করেন। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া তার বাণীতে বলেন, দেশের মানুষের মানবাধিকার শূন্যের নিচে অবস্থান করছে। দেশে ভয়াবহ দুঃশাসন চলছে। দেশের মানুষের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের অনুষ্ঠানসূচী ॥ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে দিনব্যাপী অনুষ্ঠান মালার আয়োজন করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। সকাল সাড়ে আটটায় রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউর খামার বাড়ির সামনে থেকে র‌্যালি শুরু হয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনে কেন্দ্রে গিয়ে শেষ হবে। পরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রেই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সম্মেলনে প্রধান অতিথি থাকবেন স্পীকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত রেনে হলেস্টেইন এবং জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক মিয়া সেপ্প। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক সম্মেলনে সভাপতিত্ব করবেন।
×