ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদা তারেকের সৌদি বিনিয়োগের মুনাফায় জঙ্গী অর্থায়ন

প্রকাশিত: ০৫:০১, ১০ ডিসেম্বর ২০১৭

খালেদা তারেকের সৌদি বিনিয়োগের মুনাফায় জঙ্গী অর্থায়ন

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ জঙ্গী অর্থায়ন প্রতিরোধে দুর্নীতি দমনে সৌদি আরবের সঙ্গে ভারত একযোগে কাজ করছে। তারই অংশ হিসেবে বর্তমান ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের নির্দেশে পরিচালিত দুর্নীতি বিরোধী তদন্তে সৌদি আরবে অর্থ পাচারে বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধানদের জড়িত থাকার কাহিনী বেরিয়ে আসছে। ওই তদন্তে দেখা যায়, সৌদি আরবে খালেদা জিয়া এবং তার বড় ছেলে তারেক রহমান যে ১২শ’ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছেন, তার মুনাফার একটি অংশই চলে যেত জঙ্গী অর্থায়নে ও মৌলবাদীদের পৃষ্ঠপোষকতায়। যার মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশকে একটি কট্টর মৌলবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করা এবং ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা অস্থিতিশীল করা। যে কারণে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকার তারেক রহমানকে ভিসা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। উইকিলিকস থেকে পাওয়া তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টির পাঠানো প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, রাজনৈতিক দুর্নীতির কারণেই বাংলাদেশে মার্কিন দূতাবাস ওই সময়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানের ভিসা স্থগিত করেছিল। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, খালেদা জিয়া সরকারের দুর্নীতির কারণেই ২০০৬ সাল পর্যন্ত টানা চারবার শীর্ষ দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশ প্রথম হয়। ওই সময় পুরো সরকারী ব্যবস্থায় দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়েছিল। যা ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের পথ প্রশস্ত করেছিল। প্রতিবেদনে তারেক রহমানকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ‘নটরিয়াস’ এবং ‘ওয়াইডলি ফেয়ার্ড’ পুত্র হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, জিয়াউর রহমান প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমান প্রতিটি সরকারী ক্রয় ও নিয়োগে ঘুষ চাইতেন। তারেক ছিলেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির ও দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারের প্রতীক। অনেকগুলো দুর্নীতির মামলা থাকা সত্ত্বেও তাকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার মুক্তি দিয়েছে বিদেশে চিকিৎসার জন্য। আমরা বিশ্বাস করি, তারেক রহমানের অনেকগুলো পাসপোর্ট আছে, যার মধ্যে নতুন একটিতে যুক্তরাজ্য সরকার ভিসা দিয়েছে। তার আরও একটি পাসপোর্ট আছে, যেটিতে ২০০৫ সালে পাঁচ বছরের বি-১/বি-২ ভিসা দেয়া হয়। এটি সম্ভবত সরকার আটক করেছে। তারেক রহমানের দুর্নীতির খতিয়ান তুলে ধরে জেমস এফ মরিয়ার্টির প্রতিবেদনে বলা হয়, তারেক রহমান তার মায়ের সরকারের আমলে শত শত মিলিয়ন ডলারের সম্পদের মালিক হন। স্থানীয় বড় বড় ব্যবসায়ীদের হুমকি দিয়ে বড় অঙ্কের চাঁদা আদায় ছিল তার নিয়মিত ব্যাপার। তার এই দুর্নীতি শুধু স্থানীয় ব্যবসায়ী গ্রুপগুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে কমিশন আদায়ও নিয়মিত ব্যাপার ছিল। প্রতিবেদনে প্রত্যক্ষদর্শীর উদ্বৃতি দিয়ে বহুজাতিক কোম্পানি সিমেন্স থেকে তারেক ও তার ভাই কোকোর ঘুষ গ্রহণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, তারেক সিমেন্সের কাছ থেকে দুই শতাংশ ঘুষ গ্রহণ করেছে। এছাড়া দেশের একটি বৃহত্তম ব্যবসায়ী গ্রুপ ও কনস্ট্রাকশন কোম্পানি এবং হারবিন কোম্পানি ও জিয়া অরফানেজ থেকে তারেক ৪১ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ ঘুষ আদায় করেছেন। এরমধ্যে বিদেশী কোম্পানি থেকে মার্কিন ডলারের এবং দেশীয় কোম্পানি থেকে বাংলাদেশী টাকায় এই ঘুষ গ্রহণ করা হয়। তারেকের এই দুর্নীতির সংস্কৃতির কারণে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকা-ে ব্যাঘাত ঘটেছে। বিশেষ করে, বাংলাদেশে মার্কিন ব্যবসাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্র যে স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ দেখতে চায়, সেই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ মডারেট দেশটির স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করেছে। দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত জিয়া পরিবারের সদস্যের অর্থ সৌদি আরবে পাচারের মাধ্যমে বিনিয়োগের তথ্যটি কিভাবে উদঘাটিত হয়েছে তার একটি চিত্র ভারতের সাবেক আইপিএস কর্মকর্তা শান্তানু মুখার্জি তার এক প্রবন্ধে তুলে ধরেছেন। গত ৬ ডিসেম্বর প্রকাশিত ওই প্রবন্ধে বলা হয়েছে, তারেক রহমান দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত লাখ লাখ ডলার বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগ করেছেন। এরমধ্যে একটি বড় অংশই বিনিয়োগ করা হয়েছে সৌদি আরব ও পশ্চিম এশিয়ার অন্যান্য দেশে। এর আগে তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে অভিযোগ এসেছে যে, ভারতের নিরাপত্তা বিঘিœত করতে তারেক রহমান আন্ডারওয়ার্ল্ডের মাফিয়ার সঙ্গে অর্থ বিনিয়োগ করেছেন। ওই মাফিয়া সব সময় পাকিস্তানের যোগসাজশে একটি চক্র গড়ে তুলে নিয়মিত ভারতকে অস্থিতিশীল করার প্রচেষ্টায় লিপ্ত। বিএনপি-জামায়াত জোটের শাসন আমলে এই বিশেষ ঘটনাগুলো ঘটেছে। বিএনপি-জমায়াতের অংশীদারিত্বের উদ্দেশ্যই ছিল ভারতকে সব সময় আঘাত করা। এজন্য তাদের শাসনামলে বাংলাদেশকে মৌলবাদী ও সন্ত্রাসী গ্রুপকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হয়েছে এবং ভারত বিরোধী মনোভাব লালন করেছে। খালেদা জিয়ার আমলে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে এই বিশাল বিনিয়োগের উদ্দেশ্যই ছিল ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপগুলোকে উস্কে দেয়া এবং ভারতের অভ্যন্তরে জঙ্গী গ্রুপগুলোকে সক্রিয় রাখা। ১৯৯১-১৯৯৬ ও ২০০১-২০০৬ মেয়াদে উলফা, এনএসসিএন (আই-এম), পিএলএ এবং অন্যান্য মনিপুুরি বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপগুলোর জন্য বাংলাদেশ ছিল নিরাপদ স্বর্গ। উলফা নেতা পরেশ বড়ুয়া ঢাকায় নিরাপদে গোয়েন্দা সংস্থার প্রশ্রয়ে অবস্থান করেছেন। ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ওই সময় ছবি ও অন্যান্য তথ্য প্রমাণ দিয়ে বাংলাদেশে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপের প্রশিক্ষণ ও তাদের প্রশ্রয়ের কথা জানিয়েছে। কিন্তু বিএনপি সরকার তা সব সময় অস্বীকার করে এসেছে। ভারতে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির এই নীল-নক্সার অংশই ছিল তারেক রহমান, যিনি যৌদি আরবে অর্থ পাচারের মাধ্যমে বিনিয়োগ করেছেন, যাতে তার মুনাফা দিয়ে ভারতের সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোতে অর্থায়ন করা যায়। সৌদি আরবের বর্তমান ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের দুর্নীতি বিরোধী অভিযানের কারণেই বিভিন্ন দেশের সাবেক ও বর্তমান সরকার প্রধানদের দুর্নীতির এই তথ্য বেরিয়ে এসেছে। ইতোমধ্যে ওই দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে সৌদি আরবের ১১ প্রিন্স ও মন্ত্রীকে আটক করা হয়েছে। আরব ভিত্তিক টিভি চ্যানেল গ্লোবাল ইন্টিলিজেন্স নেটওয়ার্ক (জিআইএন) ও কানাডার একটি টিভি চ্যানেলের অনুসন্ধ্যানেও এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে। ফলে রাজনৈতিকভাবে খালেদা জিয়ার টিকে থাকার সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ হয়ে উঠেছে।
×