ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দুদক চেয়ারম্যানের মন্তব্য

সৗদি আরবে জিয়া পরিবারের সম্পদ-দুর্নীতি ॥ তদন্ত হবে

প্রকাশিত: ০৪:৫৫, ১০ ডিসেম্বর ২০১৭

সৗদি আরবে জিয়া পরিবারের সম্পদ-দুর্নীতি ॥ তদন্ত হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সৌদি আরবে জিয়া পরিবারের সম্পদ থাকার দুর্নীতি তদন্তে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল হাসান মাহমুদ। একইসঙ্গে দুর্নীতিবাজরা ঔদ্ধত্যের সীমা ছাড়িয়েছে, তাই খাতওয়ারি দুর্নীতিবাজদের তালিকা করে ধরা হবে ও সমাজের সকল প্রকার দুর্নীতি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। শনিবার সকালে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস ২০১৭ পালন উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন। সৌদি আরবে জিয়া পরিবারের সম্পদ থাকার বিষয়ে দুদক তদন্ত করবে কিনা, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কারও নাম বলার প্রয়োজন নেই। আমরা কারও নাম বলতে চাই না। দুর্নীতিবাজের পরিচয় যাই হোক, তার পরিচয় দুর্নীতিবাজ। তাদের কোন ছাড় নেই। তাদের দুর্নীতির তদন্তে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। ‘আসুন, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ হই’ এ প্রতিপাদ্যে দেশে প্রথমবারের মতো জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস ২০১৭ পালিত হয়। এ উপলক্ষে দেশব্যাপী বর্ণাঢ্য কর্মসূচী গ্রহণ করে দুদক। ইকবাল মাহমুদ বলেন, খাতওয়ারি দুর্নীতিবাজদের তালিকা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। জনগণের অর্থ লোপাটের দিন শেষ। ব্যাংকগুলোকে অবশ্যই এখন থেকে আইনকানুন মেনে ঋণ দিতে হবে। বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির বিষয়ে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমাদের তদন্ত চলছে। তদন্ত সংশ্লিষ্টদের ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। কে দোষী বা কে নির্দোষ তা তদন্ত শেষেই বলা যাবে। পরে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, টাকা নয়, জ্ঞানের পেছনে ঘুরতে হবে, তবেই কেবল দেশ থেকে দুর্নীতি দূর করা সম্ভব হবে। সেদিন হয়ত বেশি দূরে নয়, যেদিন আমাদের দেশ থেকে দুর্নীতি চলে যাবে। তখন দুদকও থাকবে না। দেশ থেকে দুর্নীতি চলে যাবে। এই কমিশনকে তখন ডাকা হবে সুনীতি বিকাশ কমিশন। যারা সুনীতির বিকাশে কাজ করে যাবে। ভবিষ্যত বাংলাদেশে তিনি এমনটাই আশা করেন। ড. জাফর ইকবাল বলেন, বাংলাদেশ অবশ্যই দুর্নীতিমুক্ত হবে। কারণ, কোন কাগজে স্বাক্ষর করে বাংলাদেশের জন্ম হয়নি। এদেশের মানুষ যুদ্ধ করে বুকের তাজা রক্ত দিয়ে এ দেশকে স্বাধীন করেছে। টাকা পয়সা বা ক্ষমতার মাধ্যমে জীবনকে উপভোগ করা যায় না। নিঃস্বার্থভাবে সমাজকে কিছু দান করেই জীবনকে উপভোগ করতে হয়। তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমরা প্রথমত নিজে সৎ থাকব, অন্যায় করব না এবং অন্যকে অন্যায় করতে দেব না। তিনি বলেন, টাকার ওপর বসে থাকার জন্য জীবন নয়। নতুন সহস্রাব্দে পৃথিবীর বিখ্যাত বুদ্ধিজীবীরা মনে করেন সম্পদই হচ্ছে জ্ঞান। ঠিকমতো লেখাপড়া করেই জ্ঞান অর্জন করতে হয়। জাফর ইকবাল বলেন, তোমরা যদি ঠিকমতো জ্ঞান অর্জন করতে পার তাহলে ঐশ্বর্য তোমাদের পেছনে ঘুরবে। তোমাদের মনে রাখতে হবে আমরা অবশ্যই প্রযুক্তি ব্যবহার করব কিন্তু প্রযুক্তি যেন আমাদের ব্যবহার না করে। জাফর ইকবাল বলেন, অর্থের পেছনে না ছুটে জ্ঞান অর্জন ও নিজেকে যোগ্য করে তোলাকে জীবনের লক্ষ্য হিসেবে স্থির করতে হবে। তরুণদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমাদের জীবনটা কত বড় বলো। ছোট এতটুকু একটা জীবন। আমাকে যদি আনন্দ পেতে চাই কিন্তু আমি যদি দুর্নীতিবাজ হই, অসৎ হই, আমার জীবনে কোন আনন্দ নাই। আয়নার সামনে দাঁড়াও, দেখ নিজেকে, তোমার মন বলবে- একটা চোর দাঁড়িয়ে আছে। তখন কেমন লাগবে বলো? জীবনে যদি আনন্দ পেতে চাই, সুখী হতে চাই তাহলে প্রথম কাজ হচ্ছে সিদ্ধান্ত নেয়া যে, আমি অনেস্ট থাকব, অন্যায় করব না, অন্যকে অন্যায় করতে দেব না, অন্যের জন্য স্বার্থহীন ভাবে কিছু করব। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক বলেন, যারা দুর্নীতিবাজ মানুষ, তারা অনেক টাকা উপার্জন করে এত টাকার কি দরকার আছে, বলো? একজন মনুষকে যদি খুবই সুখে-শান্তিতে থাকতে হয় তাহলে কত টাকা লাগে? কোটি টাকা তো লাগে না। অনেকে ভাবে আমাকে অনেক টাকা উপার্জন করতে হবে। নইলে জীবনে কিছু হবে না। সে টাকা উপার্জন করার জন্য দুর্নীতি করে। কিন্তু আমার কথা হচ্ছে দুর্নীতি পরিহার করতে হবে। যুবকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তোমাদের টাকার পেছনে ঘুরতে হবে না দেখবে- তোমরা যদি ভাল হও, যোগ্য হও তাহলে তোমার পেছনে টাকা ঘুরবে। কারণ টাকার চেয়ে জ্ঞান অনেক মূল্যবান সম্পদ। বুদ্ধিমান ও চৌকস মানুষেরা পৃথিবীতে ‘অসম্ভব মূল্যবান’। যারা কাজকর্ম করতে পারে, মাথায় জ্ঞান আছে, বুদ্ধি আছে, সমস্যা সমাধান করতে পারে, তারা অসম্ভব মূল্যবান এই পৃথিবীতে। কাজেই আমি কেন খামাখা টাকার পেছনে ঘুরব? আমি জ্ঞানের পেছনে ঘুরব, নিজেকে যোগ্য করে গড়ে তুলব। আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল হাসান মাহমুদ বলেন, দুর্নীতিবাজরা ঔদ্ধত্যের সীমা ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশের দুর্নীতিবাজদের বিষদাঁত ভেঙ্গে দেয়ার সময় এসেছে। ব্যাংক, সরকারী খাতসহ এমন কোন জায়গা নেই যেখানে এখন দুর্নীতি হচ্ছে না। দেশের ভবিষ্যত প্রজন্মকে একটি দুর্নীতিমুক্ত সমাজ উপহার দিতে দুর্নীতিবিরোধী লড়াইয়ে সবাইকে সোচ্চার ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়ে ইকবাল মাহমুদ বলেন, দুর্নীতি এক ধরনের নেশা। দুর্নীতি করে যারা টাকা উপার্জন করে ও সম্পদ জমায় তারা কিন্তু ভোগ করতে পারে না। দুর্নীতিবাজরা এই ব্যাপারটা বুঝতে পারে না। শরীর স্বাস্থ্যের কারণে পারে না, বয়সের কারণেও পারে না। তাদের সম্পূর্ণ কাজটা হচ্ছে একেবারেই একটা নেশা। টাকার নেশা এবং ক্ষমতার নেশা। তাদের এই দুই নেশার কারণে আজকে আমরা দেখছি ব্যাংক লুট, সরকারী কাজে ঘুষ, ব্যবসায় অনিময়, প্রশ্নপত্র ফাঁস করা হয়। কোথায় নেই দুর্নীতিবাজরা? এক কথায় তাদের ঔদ্ধত্য সীমা ছাড়িয়ে গেছে। দুর্নীতিবাজ নির্মূলে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে ইকবাল মাহমুদ বলেন, আমরা আমাদের দেশ, আমাদের ভবিষ্যত অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিতে পারি না। দুর্নীতিবাজ নামের এই শকুনদের আমরা উৎখাত করতে চাই। যারা দুর্নীতি করছে তাদের আমরা দাঁতভাঙ্গা জবাব দিতে চাই। তবে এই কাজ একা দুর্নীতি দমন কমিশনে পক্ষে করা সম্ভব নয়, কমিশন অনুঘটকের কাজ করবে। আমাদের আহ্বান থাকবে, সমাজের সর্বস্তরের মানুষের প্রতি অন্তত নিজেদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে একটি দুর্নীতিমুক্ত সুন্দর সমাজ উপহার দেয়ার জন্য যার যার জায়গা থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হোন, সোচ্চার হোন। অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে এ সময় হুঁশিয়ারি দিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আমরা তোমাদের ছাড়ব না। আমরা দুর্নীতি বন্ধ করবই। আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দুদক কমিশনার এএফএম আমিনুল ইসলাম, সচিব ড. মোঃ শামসুল আরেফিন প্রমুখ। দিবসটি পালন উপলক্ষে সকাল সোয়া নয়টায় কমিশনের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ শান্তির প্রতীক পায়রা ও ফেস্টুন উড়িয়ে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবসের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে তিনি কমিশনের মিডিয়া সেন্টারের রক্ষিত রেজিস্টারে স্বাক্ষরের মাধ্যমে দুর্নীতিবিরোধী গণস্বাক্ষর কর্মসূচীর উদ্বোধন করেন। কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশের প্রতিটি মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মানববন্ধন, আলোচনা সভা, তথ্যচিত্র প্রদর্শন এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালিত হয়।
×