ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

তিউনিসীয় নারীরা সমবায় গড়ে কৃষিতে বড় অবদান রাখছে

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ১০ ডিসেম্বর ২০১৭

তিউনিসীয় নারীরা সমবায় গড়ে কৃষিতে বড় অবদান রাখছে

মধ্য তিউনিসিয়ার প্রত্যন্ত এলাকা মেনজেল মিহিরি। সেখানকার কৃষাণী নারীদের একটি দল তাহাদি নামে এক সমবায় সংস্থা গড়ে তুলেছেন। আরবী তহাদি অর্থ হচ্ছে চ্যালেঞ্জ। ধীফলাওই ও কয়েকজন কৃষাণী তাহাদি সমবায় সংস্থাটি গড়ে তোলে। তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে নারীদেরকে উদ্বুদ্ধ করত সমবায় সংস্থায় যোগ দেয়ার জন্য। পাশাপাশি তারা তাদের জ্ঞান, নিজেদের পণ্য বিক্রি করার উদ্যোগও গ্রহণ করত আলোচনার মাধ্যমে। নারীরা আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রকল্পটির সুবিধা নিয়ে স্থানীয় পণ্য ও প্রশিক্ষণ নিত। যাতে তাদের পণ্যগুলো মানসম্পন্ন ও বাণিজ্যিকভাবে বিপণন করা সহজ হয়। এএফপি। গত দু’বছরে তারা ইরিম নাম নিয়ে বাণিজ্যিকভাবে সস বিক্রি করে আসছে। যা কারুকাজ করা সরু এক বোতলে বোতলজাত করা হয়। হাসিমুখে ধীফলাওই বলেন, এটি তিউনিসিয়ান নারীদের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার একটি উপায় কঠোর পরিশ্রম, নিখাদ ও উদ্যোম এজন্য জরুরী। তিনি যখন কথা বলছিলেন তখন রোদ্রের তাপ ও মরিচের ঝালের কারণে কপাল থেকে ঘাম ঝরছিল। তাহাদিতে এখন এক শ’ ৬৪ জন লোক কাজ করেন। এটিই হচ্ছে তিউনিসিয়ার প্রথম খামার যেটি স্থানীয় প্রত্যন্ত নারীদের নিয়ে কাজ করছে। যা পর্যায়ক্রমে একের পর অন্যজন করে যাচ্ছে। এর কর্মীরা সুবিধাজনক সময়ে কাজ করে যাচ্ছেন। এর নিখুঁত সাদা গবেষণাগারটিতে নারীরা মশলা গুঁড়ো করা ও বোতলজাত করার কাজটি করে যাচ্ছে। এখানকার নারীরা হাত ধুয়ে গ্লাভস পরে স্থানীয়ভাবে তৈরি বিভিন্ন পণ্য দিয়ে লাল এক ধরনের পেস্ট তৈরি করেন। নারীদের ভূমিকা তিউনিসিয়ার অর্থনীতিতে প্রধান ভূমিকা রাখছে বলে ফারুক বেন সালাহ জানান। জাতিসংঘ, সুইজারল্যান্ড ও তিউনিশিয়ার ত্রিপক্ষীয় এক প্রকল্লের কর্মী হচ্ছেন সালাহ। এই প্রকল্পটির লক্ষ্য হচ্ছে, স্থানীয় পণ্য বাজারজাত করা। সালাহ বলেন, যত দ্রুত সম্ভব তাদের জন্য কাজের পরিবেশ সৃষ্টি করাই এর প্রধান উদ্দেশ্য। হারিসা তৈরির জন্য কর্মীদের উৎপাদন পর্যায়ে দৈনিক ১৫ দিনার (পাঁচ ইউরো) দেয়া হয়। অন্যরা বাড়িতে থেকে কাজগুলো করে। প্রকল্প সম্পাদন করতে প্রয়োজনীয় কাজগুলো করে ও কিছু বাড়তি আয়ও করে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে মরিচ ধুয়ে পরিষ্কার করা ও নিজেদের বাড়ির ছাদে সেগুলো শুকানো। ধীফলাওই সম্পূর্ণ উদ্যোমের সঙ্গে বলেন, এই কাজগুলো নারীরা নিজেদের সুবিধাজনক সময়ে করে থাকে। এজন্য তারা নিজেদেরকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করে তুলতে পারছে। ফলে তাদের আত্মবিশ্বাস ও দক্ষতা বাড়ছে। তারা প্রতিনিয়তই সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। নারীদের জন্য গঠিত সমবায় সংস্থাটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর কৃষাণীরা একে অন্যকে উৎসাহ দিচ্ছে নিজেদের কাজ করার জন্য। শুধু শিক্ষক বা ডাক্তার নয় এখন তারাও কাজ করছে ও অনুভব করছে যে সমাজে তাদেরও একটি স্থান রয়েছে। ধীফলাওই জানান, এখন অনেক নারী তাহাদি সমবায় সংস্থায় কাজ করে। আগে তারা অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে মাঠে কাজ করত। অথবা তারা তাদের স্বামীর আয়ের ওপর নির্ভরশীল ছিল। এখন তাদের কাজের স্বাধীনতা এসেছে। ২০১৫ সালের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব স্ট্যাটিকটিকস প্রতিবেদন অনুযায়ী, তিউনিসিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলে নারীরা লিঙ্গ বৈষম্য ও চাকরির নিরাপত্তার অপ্রতুলতায় ভোগে। জাতীয় পর্যায়ে দেশটিতে বেকার নারীর সংখ্যা হচ্ছে ২২ দশমিক পাঁচ শতাংশ। যা প্রত্যন্ত প্রদেশগুলোতে গিয়ে ৩৫ শতাংশেরও বেশি হয়ে থাকে। নাজোউয়া নামে এক নারী বলেন, এখন নারীরা মাসে বেতন পাচ্ছে। যা তাদের স্বামীর জন্য খুবই সহায়ক হিসেবে দেখা দিয়েছে। এজন্য নিজেদের মধ্যে দায়িত্ববোধ জেগে উঠছে। নিজেদের লক্ষ্য নির্ধারণ করা ও কাজের মাধ্যমে জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করে যাচ্ছে। সালাহর মতে, পামপাত তাহাদিকে তাদের পণ্য উৎপাদনে সহায়তা করছে। যা সমবায়ের মাধ্যমে অনেক বেশি নারীদের কাজ করার সুযোগ করে দিচ্ছে। সেই সব নারীদের যারা প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাস করে। এরিম হারিসা তৈরি ইতোমধ্যে এর নাম হয়েছে। জাতীয়ভাবে যারা খেতে ভালবাসেন তারা খাবার সংরক্ষণ করে বিক্রি করে থাকেন। এটি সুইজারল্যান্ড ও জার্মানিতে পাওয়া যায়। যা ফ্রান্স ও ইতালিতে বিস্তার লাভ করেছে। এখন কানাডাতে রফতানি করার প্রক্রিয়া চলছে।
×