ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মার্কিন প্রেসিডেন্টের লন্ডন সফরকালে ব্যাপক বিক্ষোভের আশঙ্কা

ট্রাম্পযুগে ব্রিটিশ-মার্কিন সম্পর্ক চ্যালেঞ্জের মুখে

প্রকাশিত: ০৪:১৭, ১০ ডিসেম্বর ২০১৭

ট্রাম্পযুগে ব্রিটিশ-মার্কিন সম্পর্ক চ্যালেঞ্জের মুখে

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিকে ব্রিটেনে সরকারী সফরে আসতে পারেন বলে গত রবিবার এক খবর প্রকাশিত হলে ব্রিটিশ নাগরিকদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। খবর-খ্রীস্টান সায়েন্স মনিটরের। ট্রাম্পের সফরের সম্ভাব্য সময় ২৬ থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে হতে পারে বলে জানানো হয়েছে। কিন্তু খবরটি প্রচার হওয়ার পর মুহূর্তের মধ্যে বিভিন্ন সংস্থার কর্মীরা তার বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিবাদ বিক্ষোভ আয়োজনের ডাক দেয়। ভূরাজনৈতিক কারণে ব্রিটেনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত মিত্রতা ও “বিশেষ সম্পর্ক” বিদ্যমান। সুদূর অতীত তো বটেই, নিকট অতীতের বিশ্ব পরিস্থিতিতেও উভয় দেশের ভূমিকা একে অন্যের পরিপূরক ছিল। ইরানের মোসাদ্দেক সরকার হটানো, ইরাক-ইরান যুদ্ধ, ইরাক-কুয়েত যুদ্ধ, আফগান যুদ্ধ, সাদ্দামকে ক্ষমতাচ্যুত করার নীলনক্সা এবং সর্বশেষ আরব বসন্ত নামে আফ্রো-এশীয় বিভিন্ন সরকার উৎখাতে উভয় দেশের ভূমিকা এক সূত্রে গাঁথা ছিল। এজন্য বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারকে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডব্লিউ বুশের সমকামী সঙ্গী হিসেবে ব্যাঙ্গাত্মক ছবিও ছাপা হয়েছিল। এই দুটি দেশ শুধু পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রেই অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে না; বরং পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি ও সংরক্ষণ, গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা তথ্যের নিয়মিত আদান প্রদান এবং বিশেষ বাহিনী সমূহ নিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ কার্যক্রমে উভয় দেশের ভূমিকা এক সূত্রে গাঁথা ছিল। লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সের গবেষক টিম অলিভার বলেন, যুক্তরাষ্ট্র শুধু ব্রিটেনের সঙ্গেই ঘনিষ্ঠ মিত্রতা বজায় রাখেনি;বরং ইউরোপীয় নিরাপত্তা বিধানে ন্যাটো জোটকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদানসহ এই অঞ্চলে রাশিয়ার আগ্রাসন প্রতিরোধে বিভিন্ন জোট বা বলয় গড়ে তুলেছিল কিন্তু ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পরিস্থিতি দ্রুত বদলে যেতে থাকে। ন্যাটো জোটের প্রতি তিনি শত্রু মনোভাবাপন্ন আচরণ করতে থাকেন। ব্রাসেলসের ন্যাটো সদর দপ্তরে উপস্থিত গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের প্রতি ট্রাম্পের উন্নাসিক আচরণ সবাইকে ক্ষুব্ধ করে তোলে। ট্রাম্পের সেদিনের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে জার্মান চ্যান্সেলর এ্যাঞ্জেলা মেরকেল বলেন, এখন থেকে ইউরোপীয়দের আত্মরক্ষার জন্য নিজেদের লড়াই করতে হবে। ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার পর সর্বপ্রথম ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে তাকে অভিনন্দন জানাতে সশ্বরীরে ওয়াশিংটন গিয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানা ধরনের উস্কানিমূলক বক্তব্য ও পদক্ষেপের জন্য ব্রিটিশদের মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রতি তীব্র বিতৃষ্ণা বিরাজ করছে। গত মার্চে হোয়াইট হাউসে এক মুখপাত্র বলেন, ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় তখনকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার পক্ষ নিয়ে ট্রাম্প টাওয়ারে আড়ি পাতা যন্ত্র বসিয়েছিল। এই অভিযোগ ব্রিটিশ গোয়েন্দা দফতর ভিত্তিহীন বলে প্রত্যাখ্যান করে। এরপর গত জুনে লন্ডন ব্রিজে সন্ত্রাসী হামলার সময় ট্রাম্প তার টুইটারে লন্ডনের মেয়র সাদিক খানকে নিয়ে উল্টাপাল্টা মন্তব্য করেন। যা লন্ডনবাসী সহজভাবে গ্রহণ করেনি। এছাড়া ট্রাম্পের “আমেরিকা ফার্স্ট” অনুকরণে “ব্রিটেন ফার্স্ট” নামে একটি অতি ডানপন্থী সংস্থা অভিবাসী বিরোধী প্রচার প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে। এর সমর্থনে ট্রাম্প টুইট বার্তা প্রেরণ করলে ব্রিটিশদের মধ্যে ব্যাপক নিন্দার ঝড় ওঠে এবং প্রধানমন্ত্রী টেরেসাও এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
×