ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গণপরিবহনে নারীর নিরাপত্তা

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ১০ ডিসেম্বর ২০১৭

গণপরিবহনে নারীর নিরাপত্তা

গণপরিবহন কতটা নারীবান্ধব এটি নিয়ে নানা সময়ে নানা প্রশ্ন উঠলেও কোনক্রমেই নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। নারীরা গণপরিবহনে চলাচল করতে গিয়ে অনাকাক্সিক্ষত স্পর্শ, বিভিন্ন ধরনের অঙ্গভঙ্গি, কটূক্তিসহ নানা সহিংসতার শিকার হন। এমনকি গণধর্ষণের মতো ঘটনাও ঘটেছে। যে কারণে শতকরা ৪৯ ভাগ নারী গণপরিবহনকে অনিরাপদ মনে করেন। এখানে প্রতিবাদের সংস্কৃতি অনুপস্থিত। নারীরা সহিংসতার শিকার হতে দেখলেও তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ কমই দেখা যায়। এছাড়া গণপরিবহনের নক্সা ও চলাচলের পরিকল্পনার ক্ষেত্রে জেন্ডার সংবেদনশীলতার বিষয়টি মাথায় রাখা হয় না। মূলত পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতা, ধর্মীয় মৌলবাদ ও বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে নারী আজ নানা ধরনের সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের সমাজে গণপরিবহনে একের পর এক যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটছে। ২০১৪ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি মানিকগঞ্জে শুভেচ্ছা পরিবহনের চলন্ত একটি বাসে তরুণী ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় বাসচালক ও সহযোগী গ্রেফতার হন। ২০১৫ সালের ১২ মে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে কর্মস্থল থেকে ফেরার পথে চলন্ত বাসে এক পোশাককর্মীকে ধর্ষণ করে ফেলে দেন বাসচালক ও চালকের সহকারী। ঢাকায় এক গারো তরুণীকে চলন্ত মাইক্রোবাসে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। গত বছরের ২৩ জানুয়ারি বরিশালে সেবা পরিবহনের একটি বাসে দুই বোনকে ধর্ষণ করে পাঁচ পরিবহনকর্মী। চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি ময়মনসিংহের নান্দাইলে একটি বাসে এক কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে বাসচালকসহ তিন পরিবহনকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। কিছুকাল আগে টাঙ্গাইলের মধুপুরে চলন্ত বাসে ধর্ষণের পরে হত্যা করা হয় রূপাকে। এসব ঘটনায় গণপরিবহনে নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। সামগ্রিকভাবে পরিস্থিতি কতটা উদ্বেগজনক সাম্প্রতিক এক জরিপেও তার কিছুটা আভাস মিলেছে। গণপরিবহনে যাতায়াতকারী নারীদের বড় অংশই বলেছেন, নানাভাবে তারা হয়রানির শিকার হয়ে চলেছেন প্রতিনিয়ত। কিন্তু অবস্থা এমন যে, অধিকাংশ নারীই সেটি প্রকাশ করতেও বিব্রত বোধ করেন। শিক্ষা ও চাকরিসহ নানা প্রয়োজনে প্রতিদিন হাজার হাজার নারীকে ঘরের বাইরে বেরুতে হয়। অধিকাংশেরই একমাত্র ভরসা হলো বাস, মিনিবাস কিংবা টেম্পোর মতো গণপরিবহন। যৌন হয়রানি বন্ধে সুনির্দিষ্ট আইন না থাকায় সহায়তা চাইতে গেলে পুলিশের কাছে কম সহযোগিতা পান নারীরাÑ এমন অভিযোগ উঠেছে। উল্টো নারীদের যেভাবে প্রশ্ন করে সেটাও কিন্তু এক ধরনের অপরাধ। রাস্তা-ঘাটে যে হয়রানি করা হয়, তা থামানোর জন্য কঠোর আইন প্রণয়ন জরুরী হয়ে পড়েছে। সারা বিশ্বে নারীর প্রতি সহিংসতার বিষয়টি সামগ্রিক উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ। নারী-পুরুষের মধ্যে ক্ষমতার অসম সম্পর্ক আমাদের সমাজে স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ধর্ষণের যে ক্রমবর্ধমান হার তা আতঙ্কগ্রস্ত করে তোলে। প্রতিটি পরিবার থেকে নারীকে যথাযথ শিক্ষা দেয়ার, স্বাধীনভাবে গড়ে তোলার, ক্ষমতায়িত করার প্রচেষ্টা থাকে। কিন্তু তা সম্ভব হয় না। কারণ প্রতিটি পরিবারই নারীর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে দিন কাটান। গণপরিবহনের মালিক, শ্রমিক এবং তাদের সংগঠনগুলো আন্তরিকভাবে এগিয়ে না এলে শুধু সরকার, আইন কিংবা শাস্তি দিয়ে এই ব্যাধির নিরাময় সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। নারীর নিরাপত্তার প্রশ্নে রাষ্ট্রের পাশাপাশি সমাজকেও সোচ্চার হতে হবে। গড়ে তুলতে হবে শক্তিশালী সামাজিক প্রতিরোধ।
×