হাতিটার চার পায়ে চাকা লাগানো। হাতিটা হাটে সেই চাকা দিয়ে। আম্মুর সঙ্গে মেলায় এসে এমনি একটা হাতি পছন্দ হলো সাজিদের। আম্মুকে পছন্দের কথা বলতেই কিনে দিল সেই হাতি। হাতির শুঁড়ে ছোট্ট করে একটা সাদা প্লাস্টিকের রশি লাগানো আছে। সেই রশি ধরে সাজিদ মেলার বাইরে হাতিটাকে টেনে বের করতে শুরু করল। ঠিক মেলার বাইরে বের হয়ে কয়েক গজ যেতে না যেতেই সাজিদ পড়ল বিপদে। হাতিটা আর সামনে এগোয় না। আবার পেছনের দিকে ঠেললে পেছনেও যায় না। সাজিদ প্রত্যেকটা চাকার নিচে দেখলো কোন কিছু সমস্যা আছে কিনা। নাহ্ কোন সমস্যা সে খুঁজে পেল না। অনেকটা বিরক্ত হয়ে সে হাতিটাকেই জিজ্ঞেস করল, এই হাতি তুই কি শুরু করলি? তোর জন্য কি আমি রাস্তায় বসে থাকব নাকি?’
-তা কেন হবে? মেলা থেকে আমাকে কিনেছো বলে তোমার সঙ্গেই আমাকে যেতে হবে তেমন চুক্তি তো তোমার সঙ্গে আমার হয় নাই। আমি কি তোমার মর্জিতে চলব? আমি চলব আমার মর্জি মতো।
সাজিদ শুনে যেন তাজ্জব বনে গেল। এই হাতি তো খেলনা হাতি। এই হাতি কেমনে কথা বলতে পারে। তাছাড়া জ্যান্ত হাতিরাও তো কথা বলে না। সাজিদ ভেবে কোন কূলকিনারা পায় না। হাতি আবার বলে,
-কি কোন কথা বলছো না কেন ক্রেতা ।
- ক্রেতা কী?
-ক্রেতা হচ্ছে যিনি ক্রয় করেন মানে যিনি কিনেন আর কি। তো তুমি আমাকে কিনে ক্রেতা হয়েছো।
-আমার নাম সাজিদ। ক্রেতা না বলে তুই আমাকে সাজিদ বলে ডাকতে পারিস।
হাতিটা একটু কণ্ঠ ভারি করে বলল, তুমি আমাকে তুই তুই করে বলবে না। হাতি হচ্ছে সম্মানী প্রাণী। তুমি আমাকে তুমি তুমি করে বলতে পার।
-ও আচ্ছা! বলেই একটু থামে সাজিদ। এরপর আবার বলে,আচ্ছা বলো তোমার কী সমস্যা? তোমার কি হাঁটতে সমস্যা হচ্ছে? নাকি তোমার চাকায় কোন কিছু আটকে গেছে।
হাতি বলে, নাতো আমার তো কোন সমস্যা নেই।
-তাহলে তুমি চলতে চলতে হঠাৎ দাঁড়িয়ে পরলে কেন?
-তুমি আমাকে কিনেছো সেই সূত্রে তুমি আমার মালিক। তুমি মালিক হলেও আমার কিছু স্বাধীনতা তো থাকতেই পারে। কি পারে না?
সাজিদ বলে, হু পারে।
-তো তুমি মনে করতে পার আমি আমার স্বাধীনতা আছে বলে দাঁড়িয়েছি। কোন সমস্যা?
- না কোন সমস্যা নেই। বাধ্য ছেলের মতো বলে সাজিদ। এরপর বলে, তো এখন তো চলো।
হাতি বলে, তোমার সঙ্গে যাওয়ার আগে আমার কিছু শর্ত আছে। সেই শর্তগুলো মানলে আমি তোমার সঙ্গে যাব। অন্যথায় যাব না।
-শর্ত মানে?
-শর্ত মানে নিয়ম। নিয়মগুলো জানতে চাইলে বলব।
সাজিদ বলল, বল তোমার শর্তগুলো।
হাতি বলল, নম্বর-এক। তুমি আমাকে নিয়ে গ্রামে গ্রামে এমন কি শহরেও ঘুরতে পার। তবে, আমাকে দিয়ে কার পথ রোধ করে টাকা নিতে পারবে না।
সাজিদ বলে,ওমা আমি কেন মানুষের কাছে টাকা নিব? নেব না কোন টাকা।
হাতি বলে, সার্কাসের হাতি গুলোকে তো তোমাদের মতো মানুষই নিয়ে বেড়ায়। আর রাস্তায় রাস্তায় মানুষের পথ রোধ করে টাকা আদায় করে নেয়।
-রাজি, তোমার শর্তে রাজি।
-আমার দুই নং শর্ত। সার্কাসের মতো ছোট্ট একটা গোল পোস্ট দিয়ে আমাকে বলতে পারবে না যে এক শুটে গোল দাও।
সাজিদ বলে,ও তো নেইমার, রোনালদো আর মেসির কাজ। তুমি ফুটবল খেলবে কেন? আর কেনই বা তোমাকে গোল দিতে হবে? রাজি রাজি! আমি তোমার এ শর্তেও রাজি।
-আমার তিন নং শর্ত। তুমি আমাকে গ্রামে গ্রামে নিয়ে বেড়ালে বেড়াতে পার। তোমার বয়সী কোন ছেলেমেয়ে উঠতে চাইলে উঠাতেও পার। তবে বিনিময়ে তাদের কাছে কোন টাকা নেয়া যাবে না।
-আমি তোমার এ শর্তেও রাজি। চলো তো এখন চটজলদি বাসায় ফিরে যাই।
হাতি বলল,আমার যে আরও ৪নং ৫নং শর্ত আছে।
-আমি তোমার সব শর্তে রাজি। এবার চল।
-তুমি তো রাজি। পরে আবার সাজিও না যেন পাজি। উঠে পড়ো আমার পিঠে। চলো এবার যাওয়া যাক তোমাদের বাসায়।
হাতির কথা মতো সাজিদ উঠে বসল হাতির পিঠে। হাতি চলতে থাকল সাজিদদের বাসার উদ্দেশ্যে। সারা পথে নানা বকাবকানি করে এলো হাতি আর সাজিদ। বকবকানি করতে করতে সাজিদ যে কখন বাসার কাছে এসে পৌঁছেছে বুঝতে পারেনি। পেছন থেকে শোনা গেল,
-বাবা সাজিদ এবার তো অন্তত নামো। সারা পথে তো তোমাকে ঠেলে নিয়ে আসলাম আর কতো? বাসা তো চলে আসছি না।
সাজিদ হাতির পিঠে থেকেই পেছনে ফিরে দেখল। সাদিয়া মানে সাজিদের আম্মু আবার বলল, নামো বাবা। সাজিদ লক্ষ্মী ছেলের মতো নেমে খেলনা হাতিটাকে চুপি চুপি আবার বলল, তোমার শর্তগুলো আমার মনে থাকবে। শুনেছো মিস্টার হাতি। কিন্তু এবার আর খেলনা হাতি সাজিদের কথার কোন জবাব দিল না।
অলঙ্করণ : প্রসূন হালদার