ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ফাইনালে ঢাকা ॥ রংপুর খেলবে কুমিল্লার সঙ্গে

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ৯ ডিসেম্বর ২০১৭

ফাইনালে ঢাকা ॥ রংপুর খেলবে কুমিল্লার সঙ্গে

মিথুন আশরাফ ॥ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের (বিপিএল টি২০) পঞ্চম আসরে সবার আগে ফাইনালে খেলা নিশ্চিত করে নিয়েছে ঢাকা ডায়নামাইটস। গত আসরের চ্যাম্পিয়ন ঢাকা এবার প্রথম কোয়ালিফায়ারে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে ৯৫ রানে হারিয়ে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। এলিমিনেটর ম্যাচে ক্রিস গেইলের অপরাজিত ১২৬ রানের ঝড়ো ইনিংসে খুলনা টাইটান্সকে ৮ উইকেটে হারিয়ে ফাইনালে খেলার আশায় আছে রংপুর রাইডার্স। রবিবার দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে হারাতে পারলেই রংপুর ফাইনালে খেলবে। আর যদি ম্যাচটিতে কুমিল্লা জিতে, তাহলে ১২ ডিসেম্বর ফাইনালে ঢাকার প্রতিপক্ষ থাকবে কুমিল্লা। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে প্রথম কোয়ালিফায়ার ম্যাচে টস জিতে ঢাকা। আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয়। ৭ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৯১ রানের বিশাল স্কোরও গড়ে ঢাকা। ঢাকার ব্যাটসম্যানরা ঐক্যবদ্ধ নৈপুণ্য দেখান। শুরুতে এভিন লুইস (৪৭), এরপর জো ডেনলি (৩২), কাইরন পোলার্ড (৩১), শহীদ আফ্রিদি (৩০) ব্যাট হাতে নৈপুণ্য দেখান। বল হাতে হাসান আলী ৩ উইকেট নেন। জবাব দিতে নেমে ১৮ ওভারে ৯৬ রান করতেই অলআউট হয়ে যায় কুমিল্লা। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩১ রান করেন তামিম ইকবাল। বল হাতে ৩ উইকেট নেন শহীদ আফ্রিদি। এত বড় টার্গেট অতিক্রম করতে গিয়ে ২৯ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় কুমিল্লা। লিটন কুমার দাস, জস বাটলার ও ইমরুল কায়েস আউট হওয়াতে খাদের কিনারায় পড়ে যায় কুমিল্লা। তামিম ইকবালও এমন সময়ে ‘নতুন জীবন’ পান। তামিমের ওপরই ভরসা থাকে। ৫৫ রানে ৪ উইকেট পড়ার পর দল আরও বিপদে পড়ে। তবুও আশা থাকে। কিন্তু আফ্রিদির বলে ৫৫ রানের সময়ই যখন তামিম স্টাম্পিং হয়ে সাজঘরে ফেরেন, তখন আশার আলোও নিভে যায়। বাকি সময়টা যেন কুমিল্লা হারের ব্যবধান কত কমাতে পারবে, সেই দিকে মনোযোগ থাকে সবার। ৫৫ রানে স্যামুয়েলস আউট হওয়া থেকে যে কুমিল্লার ইনিংসে ধস নামে ৫ রানের মধ্যে ৪ উইকেটের পতন ঘটে যায়। ৫৫ রানের পর একটি রানও না হতেই ৩ উইকেট হারায় কুমিল্লা। শেষপর্যন্ত ১০০ রানও করতে পারেনি কুমিল্লা। শুরুতে ১১ রানে এক উইকেট হারানোর পর ৮০ রানে গিয়ে লুইসকে হারায় ঢাকা। ১২৩ রানে পোলার্ড আউট হতেই ঢাকার ইনিংসে একটু ধস নামে। ১৪৪ রানের মধ্যে ৫ উইকেট হারিয়ে বসে ঢাকা। ২১ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারায়। এরপর আফ্রিদির ঝড়ো ব্যাটিংয়ে শেষপর্যন্ত এত বড় স্কোর দাঁড় হয়। আফ্রিদি মাঝপথে ব্যাট হাতে নেমে চারটি ছক্কা হাঁকান। ১৯ বলেই ৩০ রান করেন। তাতেই দ্রুত রান স্কোরবোর্ডে যোগ হয়। রানও স্কোরবোর্ডে বাড়ে। এই রানই ঢাকাকে সুবিধাজনক স্থানে নিয়ে যায়। শেষপর্যন্ত জিতেও ঢাকা। জিতে ফাইনালে খেলা নিশ্চিত করে। এরআগে এলিমিনেটর ম্যাচে গেইল তা-বে ফাইনালে খেলার আশা জিইয়ে রেখেছে রংপুর রাইডার্স। গেইলের ধুমধারাক্কা ব্যাটিংয়ে খুলনা টাইটান্সকে ৮ উইকেটে হারিয়ে দিয়েছে রংপুর। গেইলের ৫১ বলে ১৪ ছক্কা ও ৬ চারে করা অপরাজিত ১২৬ রানের ইনিংসে খুলনার বিদায় ঘণ্টা বাজে। টস হেরে আগে ব্যাট করে ৬ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৬৭ রান করে খুলনা। আরিফুল হক সর্বোচ্চ ২৯ রান করেন। জবাব দিতে নেমে ২ উইকেট হারিয়ে ১৫.২ ওভারে ১৭১ রান করে জিতে রংপুর। গেইল এমন ধামাকাই দেখান, তাতে যেন পুড়ে ছারখার হয়ে যায় খুলনা। মোহাম্মদ মিঠুনও দুর্দান্ত ব্যাটিং করেন। গেইলের সঙ্গে তৃতীয় উইকেট জুটিতে ১৪৬ রানের জুটি গড়ার সঙ্গে নিজেও অপরাজিত ৩০ রান করেন। দুই উইকেট দ্রুত পড়লেও আর কোন উইকেট হারায়নি রংপুর। একপ্রান্ত মিঠুন আগলে রাখেন। আরেকপ্রান্তে গেইল নিজের জাত চেনাতে থাকেন। ছক্কা-চার হাঁকাতে থাকেন। তা যেন দর্শকের মতো দেখতে থাকেন খুলনার ফিল্ডাররা। আর আনন্দে মেতে ওঠেন দর্শকরা। লীগ পর্বে তেমন জ্বলে উঠতে পারেননি গেইল। তার কাছ থেকে বড় একটি ইনিংস যেন পাওনাই ছিল। এমন সময়ই গেইল জ্বলে উঠলেন, যখন জয়টি রংপুরের খুব দরকার ছিল। হারলেই যে বিদায় হয়ে যেত। এমন ম্যাচে গেইল জ্বললেন। অন্ধকারে ডুবল খুলনা। মনে করা হচ্ছিল, এবার বোধহয় সেঞ্চুরিহীনই থাকবে বিপিএল। লীগ পর্ব শেষেও যে কোন সেঞ্চুরি হয়নি। কিন্তু সেরা চারের জমজমাট লড়াই শুরু হতেই সেঞ্চুরি মিলে গেল। গেইলের ব্যাট থেকেই সেই সেঞ্চুরিটি আসল। এবারের বিপিএলের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান হয়ে গেলেন গেইল। সেই সঙ্গে বিপিএলে ১০ সেঞ্চুরির মধ্যে ৪টিই গেইল নিজের দখলে রাখেন। আবার ১২৬ রানের ইনিংস যে খেলেন, সেটি বিপিএলের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংসও হয়ে থাকল। গেইলের এমন ব্যাটিংয়ে রংপুরেরও ফাইনালে খেলার আশা টিকে থাকল। রবিবার দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচ হবে। ম্যাচটিতে রংপুরের প্রতিপক্ষ হচ্ছে কুমিল্লা। ম্যাচটিতে যে দল জিতবে, তারাই ফাইনালে উঠবে। যদি খুলনার বিপক্ষে এলিমিনেটর ম্যাচে হেরে যেত রংপুর, তাহলে বিদায় নিত। এখন কুমিল্লাকে হারাতে পারলেই ফাইনালে খেলবে রংপুর। সেই আশা গেইলের ঝড়ও ইনিংসের জন্য টিকে থাকল। স্কোর ॥ ঢাকা-কুমিল্লা প্রথম কোয়ালিফায়ার ম্যাচ-মিরপুর ঢাকা ডায়নামাইটস ইনিংস ১৯১/৭; ২০ ওভার (মারুফ ৬, লুইস ৪৭, ডেনলি ৩২, পোলার্ড ৩১, সাকিব ৯, আফ্রিদি ৩০, মোসাদ্দেক ৩, নারাইন ৯*, অমি ৩*; হাসান ৩/১৬, ব্রাভো ২/৪৫)। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ইনিংস ৯৬/১০; ১৮ ওভার (তামিম ৩১, লিটন ০, বাটলার ৫, ইমরুল ৯, স্যামুয়েলস ৬, মালিক ৭, ব্রাভো ০, সাইফউদ্দিন ০, হাসান ১৮, মেহেদী ১৫*, আল আমিন ০; আফ্রিদি ৩/১৬, সাকিব ২/১৯, মোসাদ্দেক ২/২৪)। ফল ॥ ঢাকা ডায়নামাইটস ৯৫ রানে জয়ী।
×