ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে নির্বিকার মিয়ানমার

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৯ ডিসেম্বর ২০১৭

রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে নির্বিকার মিয়ানমার

হাসান নাসির/এইচএম এরশাদ ॥ মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সঙ্কট এখন বাংলাদেশে। সামরিক বাহিনীর নির্যাতন এবং জাতিগত সংঘাতে অধিকাংশই সীমান্ত পাড়ি দেয়ায় সুচি সরকার যেন অনেকটাই নির্ভার। বড়জোর ২ লাখ রোহিঙ্গা থাকতে পারে এখন রাখাইন রাজ্যে। তারাও নাফ নদী অতিক্রমের পথ খুঁজছে। নির্যাতন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরও বাংলাদেশের প্রতিই তাদের প্রবল আকর্ষণ। স্বজন, প্রতিবেশি এবং পরিচিতদের বেশিরভাগই চলে আসায় বাকিরাও পাইপ লাইনে। প্রতিদিনই অনুপ্রবেশ ঘটছে বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্টে। আর কত রোহিঙ্গা আসবে বাংলাদেশে, এ প্রশ্ন অনেকের। সময় যত গড়াচ্ছে রোহিঙ্গা নিয়ে আলোচনাও ততই কমছে। রোহিঙ্গা ইস্যুটি ধীরে ধীরে ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে কিনা সে আলোচনাও রয়েছে। এদিকে, উটকো এই জনগোষ্ঠী নিয়ে সঙ্কটে বাংলাদেশ। প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা ও সমঝোতার পাশাপাশি প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে কোথায় রাখা হবে তা নিয়েও ভাবছে সরকার। এতেই পরিষ্কার যে, দ্বিপক্ষীয় এবং বহুপাক্ষিক আলোচনা হলেও রোহিঙ্গারা দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রত্যাবাসিত হবে এমনটি আশা করা হচ্ছে না। তবে বনভূমি ও পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি সর্বোচ্চ বিবেচনায় নিয়ে তিন পার্বত্য জেলার কোথাও রোহিঙ্গাদের না রাখার সিদ্ধান্ত সরকারের। কিন্তু তাদের কোন দ্বীপে রাখা হলে তাতে হুমকির মুখে পড়তে পারে মৎস্য সম্পদসহ দেশের ব্লু ইকোনমি। ইন্টারন্যাশনাল মাউন্টেন ডে সামনে রেখে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কামাল উদ্দিন তালুকদার এক ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন, দেশের তিন পার্বত্য জেলা বান্দরবান, রাঙ্গামাটি এবং খাগড়াছড়িতে রোহিঙ্গাদের না রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে পাহাড় ও পরিবেশ রক্ষার বিবেচনায়। এছাড়া দেশের পরিবেশবিদ এবং পাহাড়ে রাবারসহ বিভিন্ন ধরনের বনায়ন সৃষ্টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তাদেরও উদ্বেগ রয়েছে লাখ লাখ রোহিঙ্গার অবস্থান নিয়ে। কেননা, এর মধ্যেই অন্তত ৬ হাজার একর বনায়ন বিনষ্ট হয়েছে। ঘর নির্মাণের জন্য গাছ কাটার পর এখন বৃক্ষ নিধন চলছে রান্নার লাকড়ি বানাতে। বাংলাদেশ রাবার গার্ডেন ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কামাল উদ্দিন এ প্রসঙ্গে বলেন, নাফ নদী পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের পর রোহিঙ্গাদের প্রাথমিক ধাক্কাটা পড়েছে পাহাড়ের ওপর। অন্তত ২ হাজার রাবার বাগান বিনষ্ট এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাবার গাছও কাটা পড়েছে অনেক। তিনি বলেন, শুধুমাত্র ব্যক্তি মালিকানার বাগান হিসাব করলে হবে না। রোহিঙ্গারা তো সরকারের খাস জমিতে অবস্থান করছে, এভাবে দেখাটাও ঠিক যৌক্তিক নয়। কেননা, সরকারী জমিতে স্থানীয় অনেকেই শাকসবজিসহ নানা ধরনের চাষাবাদ করত। চাষের জমিতে রোহিঙ্গাদের জন্য ঘরবাড়ি হয়ে যাওয়ায় অনেকেরই আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া বনায়ন ধ্বংসজনিত কারণে পরিবেশের ওপর ঝুঁকি তো রয়েছেই। সার্বিক বিবেচনায় রাখাইন থেকে আসা এ বিশাল জনগোষ্ঠীকে দীর্ঘ সময়ের জন্য পাহাড়ী এলাকায় থাকতে দেয়া ঠিক হবে না। জাতিসংঘে গৃহীত প্রস্তাবে মিয়ানমারের দ্বিমত ॥ চীনের সংবাদ মাধ্যম গ্লোবাল টাইমস জানিয়েছে, সর্বশেষ জেনেভায় অনুষ্ঠিত শরনার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচআরসি’র সভায় গৃহীত প্রস্তাবে দ্বিমত পোষণ করেছে মিয়ানমার সরকার। জাতিসংঘে নিযুক্ত দেশটির স্থায়ী প্রতিনিধি ইউ টিন লিন বলেছেন, সংস্থাটি রোহিঙ্গা মুসলিমদের সমস্যার বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা একপেশে। এমন সিদ্ধান্ত সমস্যার সমাধানের পথ নয়। আন্তর্জাতিক সহযোগিতা হওয়া উচিত সমাধানের জন্য। এ ধরনের রেজুলেশন সমস্যার সমাধান করবে না। কেননা, এতে আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মির (আরসা) সন্ত্রাসীদের মিয়ানমারের পুলিশ চৌকিতে হামলার কথা উল্লেখ করা হয়নি। তবে তিনি বলেন, মিয়ানমার সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করতে কাজ করছে। এ লক্ষ্যে ২৩ নবেম্বর দুদেশের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তিও সাক্ষরিত হয়েছে। রাখাইনে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকান্ড- ॥ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের পোক্ত শহরতলীর খিন্যিপ্রাং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে অগ্নিকান্ডে রোহিঙ্গাদের অন্তত ২০টি আশ্রয়স্থল পুড়ে গেছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সংক্রামক রোগ আতঙ্ক ॥ শতাধিক রোহিঙ্গার মধ্যে মরণব্যাধি এইডস রোগ শনাক্ত হওয়ার পর অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের আরও ছোঁয়াচে রোগ ধরা পড়ছে বলে জানা গেছে। বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত ১০৮ জন ডিপথেরিয়া রোগী শনাক্ত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। কৃষক বিপাকে ॥ কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় চাষাবাদ, সবজি ও পানের বরজের উৎপাদন কমে গেছে। অনুপ্রবেশকারী লাখ লাখ রোহিঙ্গার কারণে বিপাকে পড়েছে স্থানীয় কৃষকরা। কৃষি আর বনায়নের জমিতে রোহিঙ্গা ক্যাম্প হয়ে যাওয়ায় উৎপাদন কমে গেছে।
×