ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পদ্মা সেতুর দ্বিতীয় স্প্যান নামছে ১৫ ডিসেম্বর

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ৯ ডিসেম্বর ২০১৭

পদ্মা সেতুর দ্বিতীয় স্প্যান নামছে ১৫ ডিসেম্বর

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মাওয়া থেকে ফিরে ॥ মাওয়ার কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে দ্বিতীয় স্প্যান পদ্মায় নামছে ১৫ ডিসেম্বর। ভাসমান ক্রেনের সাহায্যে স্প্যানটি জাজিরা প্রান্তের ৩৮ ও ৩৯ নম্বর পিলারের কাছে নেয়া হবে। সেখানে পিলারের বেয়ারিংয়ে ওপর বসিয়ে দেয়া হবে স্প্যানটি। বিজয় দিবসের আগে না হলেও বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যরে দ্বিতীয় স্প্যানটি। সেতুর এই স্প্যান যেখানে বসছে এই খুঁটির ওপরের ভাগ সেই অনুযায়ী তৈরি করতে বিলম্ব হয়ে যায়। এই ‘গ্যারোটিং’ সমস্যার কারণে সিডিউল পিছিয়ে দেয়া হয়েছে বলে দায়িত্বশীলরা শুক্রবার নিশ্চিত করেছেন। বিজয় দিবসের আগেই দ্বিতীয় স্প্যান স্থাপনের টার্গেট নেয়া হয়েছিল। দায়িত্বশীল প্রকৌশলীরা জানান, আরও দু’টি স্প্যান বসানোর মতো খুঁটি (পিয়ার) প্রস্তুত হয়ে গেছে। কিন্তু খুঁটির ওপরে স্প্যানটি বসানো উপযোগী করা নিয়ে কিছুটা বিলম্ব হয়ে যায়। কারণ ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে যেভাবে স্প্যানটি বসিয়ে দেয়া হয়েছে এখন তার চেয়ে আরও সময় বেশি লাগছে। ৩৮ নম্বর খুঁটির সঙ্গে দ্বিতীয় স্প্যানটির এক প্রান্ত যুক্ত করতে হচ্ছে। আর স্প্যানটির অপর প্রান্ত বসছে ৩৯ নম্বর খুঁটিতে। একইভাবে ৩য় স্প্যানটির (৭সি) এক পাসের ৩৯ নম্বর পিয়ারে এবং অপর প্রান্ত বসবে ৪০ নম্বর পিয়ারে। এই ৩৯ ও ৪০ নম্বর পিয়ারই তৈরি সম্পন্ন। কিন্তু এর মাথায় ক্যাপের সঙ্গে সেট করা নিয়েই ‘গ্যারোটিং’ করা হচ্ছে এখন। তাই ১০ ডিসেম্বরের পরিবর্তে ১৫ ডিসেম্বর স্প্যান রওনা হচ্ছে। এর পর এটি বাসাতে আরও কয়েকদিন লেগে যাবে। তবে কবেনাগাদ ২য় স্প্যানটি বসানো হবে তা নিশ্চিত জানাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। তবে তারা নিশ্চিত করেছেন বিজয়ের মাসেই দ্বিতীয় স্প্যান বসছে। জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে তৃতীয় স্প্যানটি বসানোর সম্ভাবনার কথা জানায় কর্তৃপক্ষ। প্রায় ৩ হাজার টন ওজনের ‘৭বি’ নম্বর স্প্যানটি ৩৬শ’ টন ধারণক্ষমতার বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ভাসমান ক্রেনের সাহায্যে পদ্মা নদী পাড়ি দেবে। এ লক্ষ্যে মাওয়া প্রান্তের কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে ‘৭বি’ নম্বরের স্প্যানটি পুরোপুরি প্রস্তুত করা হয়েছে এখন। নতুন হ্যামার অলস বসে আছে ॥ এদিকে পদ্মা সেতুর নতুনযুক্ত হওয়া বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সাড়ে ৩ হাজার কিলোজুল ক্ষমতার হ্যামারটি (হাতুড়ি) এখনও পাইল ড্রাইভ করা শুরু করতে পারেনি। এটির সফটওয়্যার এবং কন্ট্রোল বক্স আসতে বিলম্ব হচ্ছিল। বিমানে ইতোমধ্যে এই কন্ট্রোল বক্স এসে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমেছে। শীঘ্রই এটি এনে সেট করা হবে। ১ নম্বর খুুঁটির কাজ শুরু হচ্ছে ॥ পদ্মা সেতুর ৪২টি খুুঁটির মধ্যে অধিকাংশ খুঁটিতেই কাজ চলছে। ইতোমধ্যেই ৪টি (৩৭, ৩৮, ৩৯ ও ৪০ নম্বর) খুঁটির কাজ সম্পন্ন হয়ে গেছে। এমনকি সর্বশেষ অর্থাৎ ৪২ নম্বর খুঁটির কাজ সম্পন্ন হওয়ার পথে। কিন্তু এখনও মাওয়া প্রান্তের প্রথম খুঁটির কাজ শুরু করা যায়নি। ৩৫ লাখ কংক্রিট ব্লক প্রস্তুত ॥ পদ্মা সেতুর মূল কাজের পাশাপাশি নদী শাসনের কাজও দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। আর এ জন্য প্রয়োজন পড়বে কমপক্ষে ১ কোটি ৩৩ লাখ কংক্রিট ব্লক। এরই মধ্যে প্রায় ৩৫ লাখ ব্লক তৈরি হয়েছে। আরও কমপক্ষে ১ কোটি ব্লক প্রস্তুত করতে হবে। এই পর্যন্ত নদী শাসনের মোট কাজ হয়েছে ৩৪ ভাগের বেশি। তবে এই সময়ে কাজের অগ্রগতি থাকার কথা ছিল প্রায় ৫৬ শতাংশ । জাজিরা অংশে ড্রেজিংয়ের পর এখন এখন পাথর, বস্তা ফেলা ও ব্লক বিছানো হচ্ছে। কাওড়াকান্দি ঘাটের উজানে কাজ চলছে এখন। মাঝিকান্দি সিনোহাইড্রো ঘাট থেকে কাঁঠালবাড়ি মেনেম ঘাট পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার উজান পর্যন্ত কাজ হচ্ছে। কাঁঠালবাড়ির থেকে উজানে বস্তা ফেলা হচ্ছে। এবছরও জাজিরায়ই নদী শাসনের কাজ বেশি হচ্ছে। আড়াই কিলোমিটার নদী শাসনের কাজ সম্পন্ন হওয়ার টার্গেট রাখা হয়েছে। তবে এ বছর মাওয়ায় আধা কিলোমিটার এলাকায় নদী শাসনের কাজের টার্গেট ধরা হয়েছে। পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী (নদী শাসন) সারফুল ইসলাম জনকণ্ঠকে জানান, মাওয়ার মাছ বাজারের আশপাশে এখন ব্লক বিছানোর জন্য মাটি কম্পেকশন করা হচ্ছে। মাছ বাজারের কাছ থেকে ভাটির দিকে আধা কিলোমিটার নদী শাসনের কাজ সম্পন্ন হবে এই শুষ্ক মৌসুমে। যেমন আছে পদ্মা সেতুর পুনর্বাসনের বাসিন্দারা ॥ পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের আওতায় মাওয়া অংশের কুমারভোগ ও যশলদিয়া পুনর্বাসন কেন্দ্র দুটির মধ্যে মৌলিক কোন পার্থক্য না থাকলেও সুযোগসুবিধার দিক দিয়ে কিছু পার্থক্য আছে। পার্থক্য আছে শ্রেণী বিভাজনেও। কেন্দ্র দুটির প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সেবার মান নিয়ে কারও কোন অভিযোগ নেই। কুমারভোগ পুনর্বাসন কেন্দ্রে বাজার স্থাপন করা হলেও সেখান কোন বাজার বসে না। অন্যদিকে যশলদিয়া কেন্দ্রে বাজার থাকলেও সেখানে মাছ ও শাকসবজি পাওয়া যায় না। কমিউনিটি সেন্টার নেই উভয় কেন্দ্রেই। যশলদিয়া কেন্দ্রে বাজার, স্কুল, মসজিদ, স্বাস্থ্যকেন্দ্র একসঙ্গে পাশাপাশি থাকলেও কুমারভোগ কেন্দ্রে সেসব রয়েছে একটি থেকে অন্যটি বেশ দূরে দূরে। কাকতালীয়ভাবে কুমারভোগ কেন্দ্রের বাসিন্দারা যশলদিয়া কেন্দ্রের বাসিন্দাদের চেয়ে তুলনামূলক আর্থিক দিকে ভাল। যশলদিয়া কেন্দ্রের বাসিন্দাদের কর্মস্থলে যেতে অনেক বেগ পেতে হয় রাস্তাঘাটের দুরবস্থার কারণে। এতে তাদের একদিকে যেমন ভোগান্তি রয়েছে, অন্যদিকে যাতায়াত ভাড়ায় বেশ খরচ হচ্ছে। উভয় কেন্দ্রে রোপিত গাছ নিয়ে বাসিন্দাদের অসন্তুষ্টি আছে। তাদের বেশিরভাগের অভিমত হলো- ঝাউগাছ ও তেঁতুলগাছ লৌহজংয়ে বেমানান, এখানে স্থানীয় পরিবেশের সঙ্গে মিলিয়ে উপযুক্ত গাছ রোপণ করা উচিত। রাতে বিদ্যুতের আলো ও নাইট গার্ডের ব্যবস্থা নেই কোন কেন্দ্রেই। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য এখানে ক্ষুদ্র শিল্প স্থাপন করে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যায় অনায়াসেই। কেন্দ্রের ভেতরে খালি জায়গায় শিশুদের জন্য রাইড নির্মাণ করে বিনোদনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। কেন্দ্র দুটি থেকে বাসাবাড়ির ময়লা-আবর্জনা ফেলার নির্দিষ্ট কোন জায়গা নেই। নেই আবর্জনা নিতে আসা লোকবল। ফলে পুনর্বাসনের বাসিন্দাদের যত্রতত্র ময়লা ফেলতে হয়। পুনবার্সনে ড্রেন থাকলেও তা পরিষ্কার করার জন্য কোন লোক নেই। ময়লা, ধুলোবালি জমে আটকে থাকা ড্রেন পরিষ্কার না করায় পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের কোন উপায় থাকে না। নাইট গার্ড না থাকায় এখানে প্রায়শই চুরি হচ্ছে। গত এক থেকে দেড় বছরে এই পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে অন্তত ৭টি অটোরিক্সা চুরি হয়েছে বলে জানান কেন্দ্রের বাসিন্দা অটোরিক্সাচালক মোঃ দাদন বেপারী। কুমারভোগ কেন্দ্রে ভাড়াটিয়াদের ঠিকানা ও তালিকা স্থানীয় থানায় জমা দেয়ার নিয়ম থাকলেও অনেকেই তা পালন করছে না। প্লট বরাদ্দ পাওয়া পরিবার ও ভাড়াটিয়া মিলে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার লোকের বসবাস এই কুমারভোগ পুনর্বাসন কেন্দ্রটিতে। প্রাথমিক বিদ্যালয় ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র নিয়ে বাসিন্দাদের সন্তুষ্টি থাকলেও অন্যান্য বিষয়ে অসন্তুষ্টি রয়েছে। উপরোক্ত বিষয় নিয়ে কথা হয় কুমারভোগ পুনর্বাসন কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি শাহ আলম কাওড়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, আমাদের কমিটি বেশিদিন হয়নি গঠন করা হয়েছে। আমরা সবাই বসলে সমস্যাগুলোর সমাধান করা সহজ হবে। তবে পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী (পুনর্বাসন) তোফাজ্জল হোসেন জানিয়েছেন, বাসিন্দাদের সুবিধার্থেই সব কিছু করা হচ্ছে।
×