ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মৌলভীবাজারে দুই ছাত্র খুনের নেপথ্যে

ছাত্রলীগের কোন্দলের জের, ঝরে গেল দুটি তাজা প্রান

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ৯ ডিসেম্বর ২০১৭

ছাত্রলীগের কোন্দলের জের, ঝরে গেল দুটি তাজা প্রান

নিজস্ব সংবাদদাতা, মৌলভীবাজার, ৮ ডিসেম্বর ॥ তারা সবাই একই সংগঠন এবং দল ও মতের কর্মী, প্রায় সমবয়সীও। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে এরা সবাই আছেন একই গ্রুপে। মূলত এদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব ও মতভেদ নিজ গ্রুপে নিজেদের আধিপত্য নিয়ে। সিনিয়র-জুনিয়র নিয়ে মনস্তাত্ত্বিক এ দ্বন্দ্ব চলছে দীর্ঘ ৩-৪ মাস ধরে। কিন্তু ভেতরে ভেতরে চলমান এই দ্বন্দ্ব চাপা পড়েছিল এতদিন, এর বহির্প্রকাশ হচ্ছিল না। নিজ গ্রুপের বড় ভাইদের কাছেও এ বিষয়টি জানায়নি তারা। কিন্তু একপর্যায়ে জেনে যান গ্রুপের বড় ভাইরাও। মাসখানেক আগে বড় ভাইয়েরা বিষয়টি সমাধান করে দেন। এরপর থেকে অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে যায় পরিস্থিতি। কিন্তু যাদের মধ্যে এ দ্বন্দ্ব চলছিল, তারা আর আগের মত একে অন্যের সঙ্গে বেশি মিশত না। সংগঠনের কর্মী, সহপাঠী, স্বজন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নাহিদ আহমদ মাহি ৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকে মৌলভীবাজার সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে দিবা শাখার একজন নিয়মিত ছাত্র। ৯ম শ্রেণী থেকে সে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। দলের বড় ভাইদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠায় বয়সের কারণে সে ছাত্রলীগের পদ-পদবীতে না থাকলেও ছিল একজন সক্রিয় কর্মী। নিজ গ্রুপের কর্মী ও একই স্কুলের ৯ম শ্রেণীর কয়েকজন শিক্ষার্থী মাহিসহ অন্য সিনিয়রদের নাম ধরে ডাকত। এ বিষয়টি পছন্দ হয়নি গ্রুপের উঠতি কয়েকজন নেতার। এ বিষয়ে ওদের সঙ্গে মাহিও নালিশ দিয়েছিল গ্রুপের বড় ভাইদের কাছে। নালিশ করায় জুনিয়ররা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। স্কুল-কর্মীদের ওই গ্রুপটি দেখভাল করত মোহাম্মদ আলী শাবাব। শাবাব ছিল মৌলভীবাজার সরকারী কলেজ ও সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের শিক্ষার্থী। ছাত্রলীগের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান রনির অনুসারী ও সরকারী কলেজ ছাত্রলীগের নেতা। শাবাব জুনিয়র সিনিয়র নিয়ে ওদের মধ্যে দ্বন্দ্বের ঘটনা শুনে দু’পক্ষকে ডেকে বিষয়টি মিটমাট করে দেন। এরপর মাহি সামনে এসএসসি পরীক্ষা থাকায় দলে ও গ্রুপে বেশি সময় দিতে পারত না। এটা যাদের সঙ্গে আগে দ্বন্দ্ব হয়েছিল তারা ও গ্রুপের অন্যরা খুব সহজভাবে মেনে নিতে পারেনি। এরই প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সারাদিন কোচিং ও প্রাইভেট পড়া শেষে বাড়ি ফেরার পথে গ্রুপের সক্রিয় কর্মী বেরির চরের রুবেল তাকে সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় খেলার মাঠের পশ্চিম প্রান্তের নির্জন স্থানে ডেকে নিয়ে যায়। রুবেল ও তার সহযোগীরা ওখানে নিয়ে তাকে মারধর করে। এসময় মুঠোফোনে শাবাবকেও ওই স্থানে নেয়া হয়। শাবাব ওখানে পৌঁছালে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে রুবেলসহ অন্যরা তাদের দুজনকেই স্টেপিং করে। পরে আহত অবস্থায় তাদেরকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নেয়ার পর কর্মরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। নিহত দুই ছাত্রলীগ কর্মী সাহবাব ও মাহির মরদেহ মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ময়নাতদন্ত কাজ সম্পন্ন শেষে শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১টায় পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বাড়িতে লাশ নিয়ে গেলে পাড়া প্রতিবেশী ও স্বজনরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। নিহত নাহিদ আহমদ মাহির নামাজে জানাজা বাদ জুম্মা সদর উপজেলার কনকপুর ইউনিয়নের দুর্লভপুর গ্রামে অনুষ্ঠিত হয়। অপরদিকে বিকেল সাড়ে ৪টায় নিহত মোহাম্মদ আলী সাহবাবের নামাজে জানাজা মৌলভীবাজার টাউন ঈদগাহ মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। একই স্থানে মাহির ২য় নামাজে জানাজাও অনুষ্ঠিত হবে। সকালে স্থানীয় সংসদ সদস্য সৈয়দা সায়রা মহসীন ও জেলা প্রশাসক নিহত দুই ছাত্রলীগ কর্মীর লাশ দেখতে হাসপাতালের মর্গে যান। মৌলভীবাজার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুহেল আহমদ জানান, শুক্রবার ভোর রাতে পুলিশ ওই হত্যাকান্ডে জড়িত সন্দেহে রুবেল নামে একজনকে রাজনগর উপজেলা থেকে গ্রেফতার করেছে।
×