ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আটকে রাখা হচ্ছে ডিটেনশন সেন্টারে

কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশী যাত্রীদের হয়রানি চলছেই

প্রকাশিত: ০৪:৫৮, ৯ ডিসেম্বর ২০১৭

কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশী যাত্রীদের হয়রানি চলছেই

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ বৈধ পাসপোর্ট, ভিসা ও রিটার্ন টিকেট থাকার পরেও কুয়ালালামপুর বিমানবন্দর ইমিগ্রেশনে বাংলাদেশীদের হয়রানি চলছে। বাংলাদেশী নাগরিকদের হয়রানি না করার জন্য মালয়েশিয়াকে বারবার অনুরোধ করার পরেও তা থেমে নেই। প্রয়োজনে ভিসা যাচাই বাছাই প্রক্রিয়ায় আরও কঠোর হওয়ার জন্য মালয়েশিয়াকে পরামর্শ দেয়া হলেও দেশটি আমলে নিচ্ছে না। মালয়েশিয়ায় কুয়ালালামপুর বিমানবন্দর ইমিগ্রেশনে বাংলাদেশীরা প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছেন। বৈধ পাসপোর্ট ও ভিসা থাকার পরেও অনেককে মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করতে না দিয়ে ইমিগ্রেশন ডিটেনশন সেন্টারে আটকে রাখা হচ্ছে। গত ১৭ নবেম্বর বাংলাদেশ থেকে কুয়ালালামপুর গিয়ে ফিরে এসেছেন শ্রমিক নেতা তপন সাহা। তিনি জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, সেখানে তিনি একটি সেমিনারে অংশ নিতে গিয়েছিলেন। তার কাছে বৈধ রির্টান টিকিট ছিল। মালয়েশিয়ায় হোটেল বুকিং ছিল। আয়োজকদের আমন্ত্রণপত্রও ছিল। তবে মালয়েশিয়ায় তাকে ঢুকতে না দিয়ে ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হয়। তিনি মালয়েশিয়ার আয়োজকদের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করতে চাইলে, তাকে মোবাইলও করতে দেয়া হয়নি। পরদিন ১৮ নবেম্বর তাকে ঢাকায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। সেখানের ডিটেনশন সেন্টারে অনেক বাংলাদেশী ছিলেন। প্রতিদিনই এমন অসংখ্য বাংলাদেশী হয়রানির শিকার হচ্ছেন। আবার যারা ডিটেনশন সেন্টারে থাকেন, তাদের কাছ থেকে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ খাবার টাকা নেন। যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা নিয়েই তাদের খাবার সরবরাহ করে থাকে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই বিষয়টি মালয়েশিয়া সরকারের নিকট আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে। ঢাকার মালয়েশিয়ার হাইকমিশনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের একাধিকবার বৈঠকও হয়েছে। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। বৈধ পাসপোর্ট ও ভিসা থাকার পরেও বাংলাদেশী নাগরিকদের মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করতে না দেয়া ও নানারকম হয়রানিমূলক আচরণ করার বিষয়টি দেশটিকে জানানো হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ার বিষয়ে মালয়েশিয়া আরও কঠোর হতে পারে। তবে ভিসা প্রদানের পর বিমানবন্দরে গিয়ে হয়রানির শিকার হওয়াটা দুঃখজনক। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কোনো বাংলাদেশী যাত্রীকে বিমানবন্দরে হয়রানি না করার জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে। সূত্র জানায়, অন্যান্য দেশের তুলনায় মালয়েশিয়ার ট্যুরিস্ট ভিসা অনেকটাই সহজ। কেননা দেশটির ট্যুরিস্ট ভিসা নেয়ার ক্ষেত্রে ভিসা প্রার্থীকে সরাসরি কোনো ধরনের ইন্টারভিউয়ের মুখোমুখি হতে হয় না। শুধু কাগজপত্র দেখেই ট্যুরিস্ট ভিসা দিয়ে থাকে ঢাকার মালয়েশিয়ার হাইকমিশন। সে কারণে বেশকিছু দালাল ও প্রতারক চক্র এই সুযোগে মালয়েশিয়ার ট্যুরিস্ট ভিসায় সেদেশে লোক পাঠিয়ে থাকে। আর এ কারণে মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশনে সত্যিকার বাংলাদেশী ট্যুরিস্টদেরও হয়রানির শিকার হতে হয়। তবে ট্যুরিস্ট ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে আরও ভালোভাবে যাচাই বাছাই করার জন্য মালয়েশিয়াকে অনুরোধ করা হয়েছে। মালয়েশিয়ায় প্রতিদিন বাংলাদেশ থেকে শত শত যাত্রী যাওয়া-আসা করেন। বিশেষ করে মালয়েশিয়ার সমৃদ্ধ পর্যটন ও সেখানে বেড়াতে তুলনামূলকভাবে খরচ কম হওয়ার কারণে গত কয়েক বছর ধরেই দেশটিতে বাংলাদেশী পর্যটক বেড়েছে। সেই ধারা এখনো অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়াগামী বিভিন্ন বেসরকারী এয়ারলাইন্সের সংখ্যাও বেড়েছে। তবে এর আগেও বিভিন্ন সময়ে মালয়েশিয়ার বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশী যাত্রীদের ফিরিয়ে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। সেখানের ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদে সন্তোষজনক কোনো জবাব দিতে না পারলে যাত্রীদের ফিরিয়ে দেয়া হতো। বিশেষ করে দালাল চক্রের মাধ্যমে ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে যারা মালয়েশিয়ায় থেকে যেতে আগ্রহী তারা ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের মুখোমুখি হয়ে সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেন না। তাদেরকে মালয়েশিয়া ফিরিয়ে দিয়ে থাকে। তবে এখন যেভাবে বিভিন্ন যাত্রীকে বিমানবন্দরের ডিটেনশন সেন্টারে আটকে রেখে নির্যাতন ও হয়রানি করা হচ্ছে, সেটা কখনোই করা হতো না। ইমিগ্রেশন কর্মকতারা কোনো যাত্রীকে সন্দেহ করলে তাকে ফেরত পাঠিয়ে দিতেন। তবে এখন সেটা না করে বিভিন্ন জনকে ডিটেনশন সেন্টারে আটকে রেখে হয়রানি করা হচ্ছে। এদিকে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকেও বাংলাদেশী যাত্রীদের হয়রানির বিষয়ে দেশটির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বেশ কয়েকবার আলোচনা হয়েছে। সেখানে দেশটির বিভিন্ন পর্যায়ের বৈঠকে বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ আশ্বাসও দিয়েছিল বাংলাদেশী যাত্রীরা যেন হয়রানির শিকার না হয়, তারা সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন। তবে এতকিছুর পরেও বাংলাদেশী যাত্রীদের হয়রানি থেমে নেই।
×