ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নেত্রকোনা মুক্ত দিবস আজ

প্রকাশিত: ০৪:৩২, ৯ ডিসেম্বর ২০১৭

নেত্রকোনা মুক্ত দিবস আজ

নিজস্ব সংবাদদাতা, নেত্রকোনা, ৮ ডিসেম্বর ॥ আজ ৯ ডিসেম্বর নেত্রকোনা হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিন সকালে শত্রুমুক্ত হয় নেত্রকোনা। হাজারও মুক্তিযোদ্ধা এবং স্বাধীনতাকামী মানুষের ‘জয়বাংলা’ স্লোাগানে প্রকম্পিত হয় নেত্রকোনা মহকুমা শহর, ওড়ানো হয় স্বাধীন বাংলার পতাকা। মুক্তিযুদ্ধকালে ন’মাসই নেত্রকোনা শহর ছিল পাকবাহিনীর ঘাঁটি। দালাল-রাজাকারদের সহযোগিতায় শক্ত অবস্থান গড়ে তুলেছিল পাক হানাদাররা। ৮ ডিসেম্বর রাত থেকে মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীকে টার্গেট করে শহরের কৃষি ফার্ম এলাকায় এ্যাম্বুস পাতেন। তাদের অবস্থান টের পেয়ে ৯ ডিসেম্বর সকালে ময়মনসিংহের পথ ধরে পালাতে শুরু করে পাকবাহিনী। ঠিক এমন সময় গর্জে ওঠে মুক্তিসেনাদের রাইফেল। পাকসেনারাও পাল্টা গুলি চালায়। শুরু হয় সম্মুখ যুদ্ধ। আবু খাঁ, আব্দুস সাত্তার ও আব্দুর রশিদ নামে তিন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন সে যুদ্ধে। মুক্তিযোদ্ধাদের শেষ প্রতিরোধের মুখে পাক সেনারা এক পর্যায়ে ছত্রভঙ্গ হয়ে ময়মনসিংহের দিকে পালিয়ে যায়। আর এভাবেই শত্রুমুক্ত হয় নেত্রকোনা। প্রতি বছরের মতো এবারও গভীর শ্রদ্ধায় পালিত হচ্ছে দিনটি। জেলা প্রশাসন ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ আয়োজিত দিনব্যাপী কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে : সকালে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ, পতাকা উত্তোলন, বিজয় র‌্যালি এবং দুপুরে পাবলিক হলে আলোচনা সভা। দাউদকান্দি নিজস্ব সংবাদদাতা দাউদকান্দি থেকে জানান, ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধকালে আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচ- আক্রমণের মুখে পাক হানাদার বাহিনী হটতে শুরু করলে দাউদকান্দির মুক্তিযোদ্ধারা মানসিকভাবে দ্বিগুণ শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের ইলিয়টগঞ্জ, শহিদনগর ওয়্যারলেস কেন্দ্রে এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের দাউদকান্দিস্থ ডাক বাংলোতে অবস্থানরত পাক সেনাদের টার্গেট করে উত্তর ও দক্ষিণ পার্শ্ব হতে এক যোগে আক্রমণ শুরু করে। মোহাম্মদপুর, ডাকখোলা, গোয়ালমারী, বাতাকান্দি প্রভৃতি এলাকার ক্যাম্প থেকে মুক্তিযোদ্ধারা অগ্রসর হতে থাকে, পূর্ব দিক হতে মিত্রবাহিনীর আর্টিলারির কাভারিং ফায়ার ফ্রন্টে থেকে মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ করলে পাক সেনারা পশ্চিম দিকে হটতে থাকে। মিত্রবাহিনীর সেলিং এর কারণে শহিদনগর ওয়্যারলেস এলাকা ছেড়ে পাক সেনারা দাউদকান্দি সদরের দিকে দৌড়াতে থাকে। এ সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোর জনসাধারণ উত্তর দিকে গোমতী নদীতে আতঙ্কিত অবস্থায় ঝাঁপিয়ে পড়ে। ৮ ডিসেম্বর রাত এবং ৯ ডিসেম্বর সকাল ১১টা পর্যন্ত যুদ্ধের পর পাক সেনারা দাউদকান্দিতে তাদের শেষ আশ্রয়স্থল সড়ক ও জনপথের বাংলোতে ওঠে এবং সেখান থেকে লঞ্চ যোগে মেঘনা নদী দিয়ে গজারিয়া হয়ে ঢাকায় পালিয়ে যায়। দুপুরে মুক্তিযোদ্ধারা দাউদকান্দি পৌঁছে হানাদারমুক্ত দাউদকান্দিতে স্বাধীন বাংলা লাল সবুজ পতাকা উড়ায়। নাজিরহাট নিজস্ব সংবাদদাতা ফটিকছড়ি থেকে জানান, চট্টগ্রামের নাজিরহাট হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের ৯ ডিসেম্বর উত্তর চট্টগ্রামের অন্যতম রনাঙ্গণ নাজিরহাটে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখে যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে টিকতে না পেরে ভোরে পাকবাহিনী পিছু হটে। পিছু হটার পর ফটিকছড়ি ও হাটহাজারীর বিভিন্ন এলাকা থেকে মুক্তিযোদ্ধা এবং ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের জোয়ানেরা চাঁদের গাড়িতে করে কামান এবং অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে দেশের মানচিত্র অঙ্কিত পতাকা নিয়ে আনন্দ উল্লাস করে নাজিরহাটে সমবেত হয়। তবে পলাতক পাকবাহিনী ওই দিন সন্ধ্যায় হাটহাজারীর আদুদিয়া মাদ্রাসার সামনে থেকে ৩-৪টি বাসে করে নাজিরহাটে আসে। তারা উল্লাসরত মুক্তিযোদ্ধা ও নিরীহ জনতার ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। শুরু হয় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধ। যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধার নায়েক তফাজ্জল হোসেন (বরিশাল), সিপাহী নুরুল হুদা (কুমিল্লা), সিপাহী অলি আহমদ (খুলনা), সিপাহী নুরুল ইসলাম (সন্দ্বীপ), সিপাহী মানিক মিয়া (চট্টগ্রাম), ফোরক আহমদ (নাজিরহাট), হাসিনা খাতুন (নাজিরহাট), আবদুল মিয়া (নাজিরহাট), নুরুল আবছার (কুমিল্লা), মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুল হক (ফরহাদাবাদ) ও অজ্ঞাতনামা একজনসহ ১১ জন শহীদ হন।
×