ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামে গ্যাস সঙ্কট

প্রকাশিত: ০৪:৩১, ৯ ডিসেম্বর ২০১৭

চট্টগ্রামে গ্যাস সঙ্কট

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ ‘চট্টগ্রামে গ্যাসের সঙ্কট কেটে যাবে’- এমন আশ্বাসে কেটে গেছে দীর্ঘ সময়। কিন্তু সেই সঙ্কট দূর হওয়ার কোন লক্ষণই নেই। বরং আবাসিক, বাণিজ্যিক এবং শিল্প সকল ক্ষেত্রেই গ্যাসের তীব্র সঙ্কট। সার উৎপাদনের জন্য বিদ্যুত কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করতে হয়, আবার বিদ্যুত উৎপাদন করতে শাটডাউন দিতে হয় সার কারখানা। কর্ণফুলি গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড কেজিডিসিএল) যেন নিরুপায়। চট্টগ্রামে গ্যাসের সরবরাহ কমে গেছে বলে স্বীকার করছে সংস্থাটি। কিন্তু কবে নাগাদ নাগরিকরা এ সঙ্কট থেকে মুক্তি পাবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছে না এই প্রতিষ্ঠান। পাইপ লাইনে গ্যাসের চাপ নেই, অথচ প্রতি মাসে সরকার নির্ধারিত হারে বিল ঠিকই পরিশোধ করে যাচ্ছেন গ্রাহকরা। এতে করে গ্রাহক সাধারণের মাঝে সৃষ্টি হচ্ছে এক ধরনের ক্ষোভ। চট্টগ্রাম নগরীতে বসবাসকারী প্রায় সকল পরিবারেরই এখন দুর্ভোগ। রান্নার সময়ে গ্যাস থাকে না। আবার মাঝে মাঝে গ্যাসের প্রেসার যখন কিছুটা পাওয়া যায় তখন তা তেমন কাজে আসে না। সকাল ৭টার পর গ্যাস অনেকটাই বন্ধ হয়ে যায়। এরপর গ্যাস পাওয়া যায় দুপুরের পর। আবার সন্ধ্যার পর চাপ কমে গিয়ে সেই অবস্থা থাকে অন্তত রাত দশটা পর্যন্ত। এরপর আবাসিকে পাইপে কিছু গ্যাস পাওয়া যায়। গ্রাহকদের প্রশ্ন, রাত দশটার পর গ্যাস দিয়ে আমরা কী করব? সারাদিন মিলে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টার বেশি গ্যাস মিলে না। কেজিডিসিএল সূত্রে জানা যায়, বন্দরনগরীতে এখন আবাসিক গ্যাস সংযোগ রয়েছে প্রায় ১ লাখ ৯৭ হাজার। বাণিজ্যিক সংযোগ আছে প্রায় ২ হাজার ৭শ। আর শিল্প সংযোগ রয়েছে ১ হাজারের কিছু বেশি। প্রায় সর্বক্ষেত্রেই এখন গ্যাসের সঙ্কট। আবাসিকে ভোগান্তির পাশাপাশি শিল্প উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে গ্যাসের অভাবে। বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে জেনারেটর চালানোর জন্য পোড়াতে হচ্ছে লাখ লাখ টাকার ডিজেল। বছরের পর বছর এ সঙ্কট মোকাবিলা করা চট্টগ্রামবাসী শুধু পেয়ে আসছে আশ্বাসের পর আশ্বাস। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে এই প্রতিফলন নেই। চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম এ প্রসঙ্গে জনকণ্ঠকে বলেন, এ নিয়ে আমরা ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে দফায় দফায় সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছি। সরকারের কাছ থেকে চট্টগ্রামে গ্যাস সঙ্কট নিরসনের আশ্বাস পাওয়া গেছে। কিন্তু এর জন্য অনির্দিষ্টকাল অপেক্ষা করতে হবে কিনা সে প্রশ্নও করছেন অনেকে। তিনি বলেন, বন্দর নগরী চট্টগ্রাম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বন্দরের অবস্থান চট্টগ্রামে হওয়ায় এখানে রয়েছে অনেক ভারী শিল্প এবং বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার স্থাপনা। গ্যাস না থাকায় উৎপাদন ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি হচ্ছে। তবে নতুন করে স্থাপিত শিল্প কারখানাগুলোতে আগামী বছরের মার্চের মধ্যে সংযোগ প্রদান করা হবে বলে জানিয়েছে কেজিডিসিএল। আমরা চাই শুধু সংযোগ নয়, গ্যাস সরবরাহ ব্যবস্থারও যেন উন্নতি হয়। পাশাপাশি তিনি এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনে সরকারের উদ্যোগের প্রশংসাও করেন। তিনি বলেন, আমরা আশা করছি, গ্যাস সঙ্কটের চূড়ান্ত সমাধান হবে এলএনজি টার্মিনাল বাস্তবায়নের পর। এদিকে, গ্যাস না থাকায় ব্যাহত হচ্ছে সার উৎপাদন। শুকনো মৌসুমে শাকসবজিসহ বিভিন্ন ধরনের ফসলের জন্য সার প্রয়োজন। অথচ গ্যাস ঘাটতির জন্য সার উৎপাদনে বিঘœ ঘটছে। বন্ধ রাখা হয়েছে কর্ণফুলি ফার্টিলাইজার লিমিটেডে (কাফকো) গ্যাস সরবরাহ। দৈনিক ৪৫ মিলিয়ন ঘন ফুট গ্যাস সরবরাহ করে শুধুমাত্র চালু রাখা হয়েছে চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল)। কেজিডিসিএল এর বিতরণ বিভাগের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা স্বীকার করেন যে, তারা আসলে নিরুপায়। কেননা, চট্টগ্রামের জন্য যে পরিমাণ গ্যাসের প্রয়োজন ততটুকু সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না। চট্টগ্রামের চাহিদা দৈনিক অন্তত ৩৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। মাঝে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছিল ২৯০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যায়। তখন দৈনিক ২৪০ থেকে ২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা গেছে। কিন্তু এখন দৈনিক ২শ’ মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় লাইনে গ্যাসের চাপ কম থাকছে। এতে করে আবাসিকে গ্রাহকদের কিছুটা কষ্টের মধ্যে পড়তে হচ্ছে। তবে গ্যাস সঙ্কট নিরসনে সরকারের নানামুখী উদ্যোগ রয়েছে বলেও জানানো হয় কর্ণফুলি গ্যাসের পক্ষ থেকে।
×