ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

অফিস ফাঁকা, কাজকর্ম স্থবির

গ্রেফতার আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বিআরডিবি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ৯ ডিসেম্বর ২০১৭

গ্রেফতার আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বিআরডিবি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের একাধিক মামলা দায়েরের ফলে অস্থিরতা বিরাজ করছে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডে (বিআরডিবি)। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা অফিসসহ দেশের বিভিন্ন শাখা অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। ফলে অফিসগুলো প্রায় শূন্য হয়ে পড়েছে। সরেজমিনে কাওরানবাজারের পল্লী ভবনে গিয়েও এর সত্যতা মিলেছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চেয়ার ফাঁকা। যারা আছেন তাদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। অনেকেই কাজে স্থবিরতার বিষয়টি স্বীকারও করেন। পাশাপাশি ঢাকার বাইরের অফিসগুলোতে একই অবস্থা বিরাজ করছে বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিআরডিবির একাধিক কর্মকর্তা জানান। এদিকে, এ অবস্থার মধ্যেই গত বৃহস্পতিবার ১৯ কর্মকর্তাকে বিভিন্ন স্থানে বদলির আদেশ জারি করা হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিআরডিবি’র এক কর্মকর্তা অভিযোগ করে বলেন, গত দু’বছর থেকে নানা অনিয়মে এমনিতেই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বিআরডিবি। এ নিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। তারপর আবার নতুন করে সিনিয়র কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে যুগ্ম পরিচালক পদে জুনিয়রকে পদোন্নতি প্রদানের সুপারিশ করা হয়। এ নিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। পরে বিআরডিবির সিবিএর নেতৃবৃন্দ গত ১২ নবেম্বর প্রতিষ্ঠানটিতে স্বাভাবিক অবস্থা বজায় রাখতে ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মোঃ আকরাম হোসেনের সঙ্গে বিভিন্ন দাবি নিয়ে সাক্ষাত করেন। কিন্তু সাক্ষাত করতে গেলে মহাপরিচালক কর্মকর্তা-কর্মচারী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কোন কথা বলবেন না বলে জানান। পাশাপাশি এ নিয়ে আন্দোলন করলে চাকরিচ্যুতির হুমকি দেন। এই কর্মকর্তা আরও জানান, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বক্তব্যের এক পর্যায়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মহাপরিচালকের সঙ্গে বাগ্বিত-ায় জড়িয়ে পড়েন। পরে পুলিশের সহায়তায় মহাপরিচালক বিআরডিবি অফিস ত্যাগ করেন। এই কর্মকর্তা জানান, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পরিচালক প্রশাসন বা ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালকের পদত্যাগের দাবি করেন। এ ঘটনার পর ৩ দিন ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক বিআরডিবিতে অফিস না করে মন্ত্রণালয়ে অফিস করেন। পাশাপাশি বাগ্্বিত-ার ঘটনায় ১১ জনকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত, ২০ জনকে কারণ দর্শানোর নোটিস এবং ৭০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরে এই ৭০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। গত ১৪ নবেম্বর রাজধানীর তেজগাঁও থানায় দায়ের করা একাধিক মামলায় গ্রেফতারের ভয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এখন অফিস না করে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। ওই মামলায় মাঠ পর্যায়ে বিআরডিবিতে শূন্যতা এবং অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন ওই কর্মকর্তা। এদিকে বিআরডিবি অফিসার্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও মহাসচিব এবং বিআরডিবি কর্মচারী সংসদ (সিবিএ) সভাপতি ও মহাসচিব বিআরডিবি’র ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালকের কাছে দেয়া স্মারকলিপিতে ১৬টি দাবি বাস্তবায়নের আহ্বান জানান। দাবিগুলো হলো- যুগ্ম পরিচালক (নির্মাণ) পদ বিলুপ্ত করে দীর্ঘদিনের চলে আসা যুগ্ম পরিচালক (পরিকল্পনা) পদটি ফিরিয়ে আনা। পাশাপাশি এই পদে প্রকল্প পরিচালক (ইরেসপো) মোঃ রাশেদুল আলমের পদোন্নতি বাতিল করা। বিআরডিবি’র নিজস্ব তহবিলের অর্থ অন্য কোন প্রতিষ্ঠানকে কোনভাবেই না দেয়া, মোবাইল সিম ট্র্যাকিং বন্ধ করার পাশাপাশি ইতোপূর্বে যাদের বেতন কাটা হয়েছে তাদের বেতন ফিরিয়ে দেয়া। পদোন্নতি পরীক্ষা পদ্ধতি বাতিল এবং পরিচালক পদে পদোন্নতির বিদ্যমান পদ্ধতি বহাল রাখা, পেনশন হোল্ডারদের হয়রানি বন্ধসহ প্রচলিত পেনশন প্রদান করা। এছাড়া স্বেচ্ছাচারী বদলি ও পদোন্নতি নীতিমালা বাতিল করা, স্কেলগ্রেড আপগ্রেডেশনের বিষয়ে প্রস্তাব প্রেরণসহ বাস্তবায়নের উদ্যোগ, বিআরডিবি’র স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সকল কমিটিতে এ্যাসোসিয়েশন ও সিবি’র প্রতিনিধি পূর্বের ন্যয় বহাল রাখা, সকল প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতা নিশ্চিত করা, গত ১২ নবেম্বর প্রতিষ্ঠানের সদর দফতরে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে অংশগ্রহণকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কোন প্রকার হয়রানি ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করা, বিআরডিবি’র সকল পরিচালনা পরিষদের সদস্য হিসিবে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা, সিনিয়রদের বাদ দিয়ে জুনিয়রদের সিনিয়র পদে পদায়ন বন্ধ করা, সকল প্রকল্পের মাঠ কর্মীদের আয় থেকে দায় প্রথা বাতিল করা, প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরি নিয়মিতকরণের ব্যবস্থা করা, প্রতিষ্ঠানের সদর দফতরে পদায়নের ক্ষেত্রে সিনিয়রদের অগ্রাধিকার প্রদান এবং সরাসরি ৯ম গ্রেডে নিয়োগ প্রাপ্তদের একটি অতিরিক্ত ইনক্রিমেন্ট সুবিধা বাস্তবায়ন করার দাবি জানায়।
×