ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মীরসরাইয়ে মৌচাষে খাবিরের ভাগ্য বদল

প্রকাশিত: ০২:৩৩, ৯ ডিসেম্বর ২০১৭

মীরসরাইয়ে মৌচাষে খাবিরের ভাগ্য বদল

আপন কর্মপ্রচেষ্টা এবং কর্মদ্যোমের মাধ্যমে মৌচাষে স্বাবলম্বী হওয়ার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন মীরসরাইয়ের যুবক খাবির ইবনে আমিন চৌধুরী। মীরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ থানার দেওয়ানপুর গ্রামের চৌধুরী পরিবারে মৃত আমিনুর রহমান প্রকাশ লালু মিয়া চৌধুরীর ঘরে জন্ম নেয়া এই যুবক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স করার পর কিছুদিন চাকরি করেন চট্টগ্রাম ইপিজেডে প্যারাগন সু লেদার কোম্পানিতে। কিন্তু পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ না হয়ে চাকরি ছেড়ে নিজ উদ্যোগে বাড়ির আঙ্গিনায় প্রতিষ্ঠা করেন আসা মৌচাষ প্রকল্প (প্রাঃ)। বর্তমানে এই প্রকল্পে মোট মৌ-কলোনির সংখ্যা ৭৭টি। জয়পুর থেকে ওয়াহেদপুর পর্যন্ত একটি কলোনি থেকে সপ্তাহে বসন্ত (এপ্রিল-১৭ জুন) ঋতুতে মধু আহরিত হয় প্রায় দুই কেজি। আর অন্যান্য ঋতুতে ১ কেজি শুধুমাত্র যে মৌবাক্সে ১ লাখ ২০ হাজার মৌমাছি থাকে। ভরা মৌসুমে এই প্রকল্প থেকে মাসে মধু আহরিত হয় তিন মণ। অন্যান্য মাসে আড়াই মণ মধু উৎপাদন হয়। এই আহরিত মধু দেশের বিভিন্ন অঞ্চলসহ বিদেশেও বিক্রি করা হয়। ১ কেজি মধু ১২শ’ টাকায় বিক্রি করা হয়। খাবির প্রতি মাসে মধু বিক্রি করে আয় করেন প্রায় ৩০-৩৫ হাজার টাকা। মৌমাছি প্রতিপালনে কিভাবে উদ্বুদ্ধ হলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি মাস্টার্স শেষ করার পর কিছুদিন চাকরি করেছিলাম। পরে চাকরি ছেড়ে দিয়ে বাড়িতে এসে অত্যন্ত শখের বশে কবুতর পালন করি। ওই সময় ১৩৭ জোড়া কবুতর ছিল। আর এই কবুতর থাকার জন্য একটি বড় বাক্স ছিল। একদিন হঠাৎ দেখলাম ওই কবুতরের বাক্সে কয়েক হাজার মৌমাছি। সিদ্ধান্ত নিলাম মৌমাছি প্রতিপালন করার মাধ্যমে মধু উৎপাদন করব। আমার এই সিদ্ধান্তের কথা শুনে আমার মা অসুস্থ হয়ে পড়েন। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলে নাকি করবে মৌচাষ! পরে অবশ্য মা সব মেনে নেন। আমার মৌচাষে অভিজ্ঞতা না থাকায় বিসিক থেকে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। পরে ভারতের ব্যাঙ্গালুরুর দ্বিতীয় প্রশিক্ষণ নিয়ে ১৯৯৫ সালের নবেম্বর মাসে নিজের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করি আসা মৌচাষ প্রকল্প (প্রাঃ)। ’ খাবির চৌধুরী বেকার যুবকসহ মৌচাষে আগ্রহী ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মসংস্থানের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করছেন। এ পর্যন্ত রাজশাহী, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ৩৬৭ জন প্রশিক্ষাণার্থী প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন বলে তিনি জানান । একজন প্রশিক্ষাণার্র্থী ৭ হাজার টাকা দিয়ে এক সপ্তাহ বা ১ মাস বা ৩ মাস মেয়াদী প্রশিক্ষণ নিতে পারবে। মীরসরাইয়ে উল্লেখযোগ্য ১৪ মৌচাষীর মধ্যে খাবির চৌধুরীর মৌ কলোনির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ মৌচাষ সমিতির দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি আরও বলেন, যে কেউ বাউন্ডারিযুক্ত বাড়ির আঙ্গিনায় স্বল্প খরচে মৌচাষ করতে পারবেন। সৃজনী কাঁঠাল কাঠ ব্যবহার করে পরিপূর্ণ একটি মৌ কলোনি তৈরিতে খরচ পড়বে ৭ হাজার ৮শ’ টাকা। একজন প্রশিক্ষিত ব্যক্তি ১৫ হাজার টাকা খরচ করে একটি কলোনিতে সপ্তাহে মাত্র ৩০ মিনিট সময় দিয়ে মাসে ৫-৬ হাজার টাকা আয় করতে পারবে। যারা শিক্ষিত হয়েও কর্মসংস্থানের অভাবে বেকার জীবন পার করছেন তারা কম খরচে মৌচাষ করে মধু ও মোম উৎপাদনের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হয়ে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে পারেন। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ তো খাবির ইবনে আমিন চৌধুরী। -রাজিব মজুমদার, মীরসরাই, চট্টগ্রাম থেকে
×