ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শেরপুরে বটগাছে ঊনসত্তর মৌচাক

প্রকাশিত: ০২:৩২, ৯ ডিসেম্বর ২০১৭

শেরপুরে বটগাছে ঊনসত্তর মৌচাক

মৌমাছি, মৌমাছি- কোথা যাও নাচি নাচি, দাঁড়াও না একবার ভাই। ওই ফুল ফোটে বনে, যাই মধু আহরণে, দাঁড়াবার সময় তো নাই।Ñ কবি নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্যের ‘কাজের লোক’ কবিতার ওই অমর পঙ্ক্তি যেমন এখন খুব একটা উচ্চারিত হয় না, ঠিক তেমনি ছোট্ট প্রাণী মৌমাছিকেও খুব একটা দেখা যায় না আমাদের চারপাশে। অথচ সেই মৌমাছিকে নিয়ে বাংলা সাহিত্যে যেমন রয়েছে কবিতা, গান, তেমনি হুলফোটানো এ প্রাণীটির হিংস্রতার গল্পও রয়েছে অনেক। কালের পরিক্রমায় ওই প্রাণীটি এখন জেলার গজনী পাহাড়ে ভ্রমণপিপাসুদের আকর্ষণীয় দর্শনের অনুষঙ্গ হয়ে দেখা দিয়েছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার জেলার সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ে এবার ভ্রমণপিপাসুদের দৃষ্টি কাড়ছে পুরনো একটি বটগাছে গড়ে উঠা মৌমাছির ৬৯ চাক। সীমান্তের অন্যতম প্রধান পর্যটন এলাকা গজনী অবকাশ কেন্দ্রের ওই বিপুলসংখ্যক মৌমাছির চাক এখন কেবল এলাকাবাসীরাই নয়, প্রতিদিন ভ্রমণে আসা হাজার হাজার মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। দেখার মতো অন্য আকর্ষণীয় স্থাপত্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি এখন ভ্রমণপিপাসুদের উৎসুক পছন্দে যোগ হয়েছে বটগাছের ওই মৌচাকগুলো। যুগ যুগ ধরেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার হিসেবে বিরাজ করায় প্রতি বছরই বিশেষ করে শীত মৌসুমে শেরপুরসহ বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ ভ্রমণপিপাসু মানুষের পছন্দের তালিকায় ছিল সীমান্তের গারো পাহাড়। ১৯৯৩ সালে গারো পাহাড়ের ঝিনাইগাতী সীমান্তের গজনী অংশে তৎকালীন জেলা প্রশাসক আতাউর রহমান মজুমদারের উদ্যোগে গড়ে তোলা হয় গজনী অবকাশ কেন্দ্র। এরপরও পিকনিক মৌসুমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকেই দেখা যেত ওই অবকাশ কেন্দ্রের ভেতরে থাকা পুরনো একটি বটগাছের নিচে বসে খাবার খাওয়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করতে। কালের পরিক্রমায় সেই বটগাছটি এখন ডালপালা ভেঙে অনেকটা জীর্ণশীর্ণ হয়ে গেলেও সৌন্দর্যের আঙ্গিক বেড়েছে গজনী অবকাশের। সম্প্রতি বর্তমান জেলা প্রশাসক ড. মল্লিক আনোয়ার হোসেনের উদ্যোগে সেই সৌন্দর্যবর্ধন কর্মকা-ে যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা। ফলে চলতি শীত মৌসুমের শুরুতেই কেবল বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলই নয়, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন আসা-যাওয়া শুরু করেছে হাজারও ভ্রমণপিপাসু মানুষ। শাল-গজারি শোভিত নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্যে সেইসব ভ্রমণপিপাসু মানুষের বাড়তি আনন্দের খোরাক জোগাচ্ছে এবার সেই পুরনো বটগাছে বাসা বাঁধা ঝাঁকে ঝাঁকে মৌমাছি। জেলা বিসিক শিল্পনগরীর কর্মকর্তা তামান্না মহলের মতে, ওই বটগাছে চাক করা মৌমাছিগুলো ডাচ জাতের বন মৌমাছি। এরা সংঘবদ্ধভাবে এক স্থানে বসবাস করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। এছাড়া গারোপাহাড় সংলগ্ন বনে এখন প্রচুর ফুল ও এদের খাবার রয়েছে। আগামী ৬ মাস পর্যন্ত সেখানে থেকে পরে তারা অন্যত্র চলে যাবে। সরেজমিন গেলে দেখা যায়, ঝড়-ঝঞ্ঝাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রকা- ডাল-পালা ভেঙে গেলেও ফের গজিয়ে উঠেছে ওই বটগাছের কিছু ডাল-পালা। গোড়া থেকে শুরু করে চুড়ো পর্যন্ত সেইসব শাখা-প্রশাখায় বাসা বেঁধেছে মৌমাছির দল। বেড়াতে যাওয়া আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা সেই মৌমাছির চাকগুলো দেখার পাশাপাশি কারও কারও সঙ্গে যাওয়া শিশু-কিশোরদেরও দেখানো হচ্ছে। উপজেলা ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি খবেশ নকশীর মতে, শতাব্দী প্রাচীন ওই বটগাছে ইতিপূর্বে মৌমাছি বাসা বাঁধলেও তার পরিমাণ এবারের মতো এত বেশি ছিল না। কখন ওই গাছে মৌমাছি দল চাক বাঁধতে শুরু করে- সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলতে না পারলেও তিনি জানান, ৩-৪ মাস আগে থেকে শুরু হয়ে হয়ে আস্তে আস্তে ওই চাকের সংখ্যা ৬৯ টিতে দাঁড়িয়েছে। ভ্রমণে যাওয়া শিক্ষানবিশ আইনজীবী তাজুমুল ইসলাম ও আশরাফুজ্জামান বলেন, একটি গাছে এতসংখ্যক মৌমাছির চাক হতে পারে- তা এর আগে আমরা কখনও শুনিনি। শিক্ষক মাহবুব হাসানের মতে, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপূর্ব সম্ভার গজনী অবকাশ কেন্দ্রের পরিবেশ-পরিস্থিতি এখন খুবই ভাল। তা দেখে মন আর ঘরে ফিরে যেতে চায় না। এবার সেই সৌন্দর্যে সংযোগ হয়েছে এক গাছে ৬৯টি মৌচাক। এক গাছে ৬৯ মৌমাছির চাক সম্পর্কে গজনী অবকাশ পর্যটন কেন্দ্রের সভাপতি ও জেলা প্রশাসক ড. মল্লিক আনোয়ার হোসেন বলেন, গাছটিতে দিন দিন মৌচাকের সংখ্যা বাড়ছে। এজন্য মৌমাছির দলের প্রতি দর্শনার্থীদের উৎপাতের পাশাপাশি দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়ে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। -রফিকুল ইসলাম আধার, শেরপুর থেকে
×