ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ক্ষোভ দিবসে ব্যাপক সংঘর্ষ

প্রকাশিত: ০২:২৮, ৯ ডিসেম্বর ২০১৭

ক্ষোভ দিবসে ব্যাপক সংঘর্ষ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণার পর গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে। এতে বহু ফিলিস্তিনী আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর। শুক্রবার তার ক্ষোভ দিবস পালন করে। ওয়াশিংটন পোস্ট ও বিবিসি। পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনীরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ-ধর্মঘট করে। তাদের ঠেকাতে শত শত অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করে ইসরাইল। বিক্ষোভকারীরা গাড়ির টায়ারে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং পাথর ছুড়ে মারে। জবাবে ইসরাইলী সেনারা টিয়ারগ্যাস ও রাবার বুলেট ছোড়াসহ তাজাগুলিও বর্ষণ করে। গাজা থেকে ইসরাইলকে উদ্দেশ করে দুটো রকেটও ছোড়ার খবর পাওয়া গেছে। গাজায় ফিলিস্তিনীরা ইসরাইলের সীমান্ত বেষ্টনী এলাকায় সেনাদের লক্ষ্য করে পাথর ছুড়েছে। জবাবে তাদের ওপর গুলি ছুড়েছে ইসরাইলী সেনারা। জেরুজালেমসহ বেথলেহেম, রামাল্লাহ ও অন্য শহরগুলোতেও বিক্ষোভ-সংঘর্ষ হয়েছে। এসব সংঘর্ষে ৪৯ জন আহত হওয়ার খবর জানিয়েছে রেড ক্রিসেন্ট। বুধবার ট্রাম্পের ঘোষণার পর নতুন করে আরও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হয়েছিল। ফিলিস্তিনী ইসলামপন্থী গ্রুপ হামাস এরই মধ্যে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ইসরাইলের বিরুদ্ধে নতুন ইন্তিফাদা বা অভ্যুত্থান শুরুর ডাক দিয়েছে। হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে শুক্রবার বিক্ষোভ-সমাবেশ করার জন্য ফিলিস্তিনী, মুসলিম এবং আরবদের আহ্বান জানিয়ে দিনটিকে ‘ক্ষোভ দিবস’ বলে অভিহিত করেন। বৃহস্পতিবার তিনি গাজায় বলেন, ‘দখলদারদের বিরুদ্ধে ৮ ডিসেম্বরই ফিলিস্তিনী ইন্তিফাদার প্রথম দিন হোক।’ ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে ‘শান্তি প্রক্রিয়ার মৃত্যু ঘটেছে’ বলেও তিনি মন্তব্য করেন। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ট্রাম্প একতরফাভাবে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা শান্তির পক্ষে যাবে না। উল্লেখ্য, নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবে জেরুজালেমকে ইসরাইলের অধিকৃত অংশ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অনেক ঘনিষ্ঠ মিত্রও ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তে খুশি হতে পারেনি। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ এবং আরবলীগ এ নিয়ে শীঘ্রই বৈঠকে বসবে। ট্রাম্পের ঘোষণা তার দেশের কয়েক দশকের পুরনো নীতি বদলে দিয়েছে। বুধবার ট্রাম্প বলেন, জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়ার এখনই সময় বলে তিনি মনস্থির করেছিলেন। মার্কিন স্বার্থ ও ইসরাইল-ফিলিস্তিন শান্তি প্রক্রিয়ার বিষয়টি মাথায় রেখে পদক্ষেপটি নেয়া হয়েছে বলে জানান ট্রাম্প। তিনি বলেন, এর মধ্য দিয়ে বাস্তবতাকেই মেনে নেয়া হয়েছে। বিবিসি জানায়, নির্বাচনের আগে ট্রাম্প ইহুদীদের সমর্থন পেতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন জিতলে তিনি জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণা করাসহ তেল আবিব থেকে দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তর করবেন। আন্তর্জাতিক হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করে তিনি এখন নিজের সে কথাই রাখলেন। তিনি একইসঙ্গে তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে দূতাবাস স্থানান্তরের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পররাষ্ট্র দফতরকে নির্দেশ দিয়েছেন। তবে তিনি এ কথাও বলেছেন, ইসরাইল ও ফিলিস্তিন উভয়ই ‘দুই রাষ্ট্র সমাধান’ চাইলে তাতে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন থাকবে। ইসরাইল ও গাজার সীমান্তবর্তী পূর্ব জেরুজালেম থেকেও বৃহস্পতিবার সংঘর্ষ হয়েছে। এই সংঘর্ষ কতদিন চলবে তা নিশ্চিত নয়। কারণ এ বছর আরও আগের দিকে জেরুজালেমের ওল্ড সিটির আল আকসা মসজিদে মেটাল ডিটেক্টর স্থাপনকে কেন্দ্র করে ফিলিস্তিনীরা দুই সপ্তাহ বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছিল। ওই বিক্ষোভের মুখে ফিলিস্তিনীদের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিল ইসরাইল। দেশটির সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা ধারণা করছে আগামী কিছুদিন ফিলিস্তিনীদের বিক্ষোভ অব্যাহত থাকবে এবং তারা সেভাবে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর মার্কিন নাগরিকদের পশ্চিম তীর ও জেরুজালেম সফরের ওপর সতর্কতা জারি করেছে। ওআইসি বলেছে, ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী। ১৯৬৭ সালের সীমানা অনুযায়ী জেরুজালেম ফিলিস্তিনী ভূখ-ের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে সংস্থাটি এক বিবৃতিতে জানায়।
×