ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মুহম্মদ শফিকুর রহমান

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এবং দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা

প্রকাশিত: ০২:২১, ৯ ডিসেম্বর ২০১৭

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এবং দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা

কিছু মানুষ কাজ করে আর কিছু মানুষ খই ভাজে। সম্ভবত এ থেকেই ‘কাজ নেই তো খই ভাজ’ প্রবাদটির উৎপত্তি। আবার এক শ্রেণীর মানুষ আছেন যারা বক্তৃতা দিয়ে বেড়ান। বেশিরভাগই পরচর্চা। সকালে ঘর থেকে বেরোন এবং দিনভর এখানে-ওখানে হেঁটে বসে আড্ডা মেরে অপরের দোষ খোঁজার চেষ্টা করেন। দোষ না পেলে নিজেই দু’চারটা বানিয়ে বাজারে ছেড়ে দেন। কখনও কখনও এমন মানুষও দেখা যাবে আপাতদৃষ্টিতে মনে হবে খামাখা এসব করেন। কিন্তু না, এর পেছনেও একটা উদ্দেশ্য আছে, যেমন ভারত বিরোধিতা। বুদ্ধিজীবী নামধারী কিছু শিক্ষকও আছেন যারা উঠতে-বসতে ভারত চর্চা না করলে পেটের ভাত হজম হয় না। বিষয়টি কিন্তু খামাখাও নয়, টার্গেটবিহীনও নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মহোদয় তো আর টার্গেটবিহীন কিছু করতে যাবেন না। কিংবা সাংবাদিক ভাইয়েরা, একটা টার্গেট অবশ্যই থাকে। তারা মূলত ভারতের বিরুদ্ধে বলে আওয়ামী লীগকে ঘায়েল করতে চায়। অর্থাৎ মূল টার্গেট আওয়ামী লীগ। কেননা, আওয়ামী লীগ ভারতকে অকৃত্রিম বন্ধু মনে করে, যে বন্ধুত্ব পরীক্ষিত এবং ঐতিহাসিক। ১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে দুই প্রতিবেশীর শহীদের রক্তধারা একই মোহনায় প্রবাহিত হয়ে এই বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে। বীরের এই রক্তধারা প্রবাহিত হবে অনন্তকাল। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক কেবল বন্ধুত্বের বৃত্তের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। দুই দেশের আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক স্বার্থও জড়িত। একাত্তরের মিলিত রক্তস্রোত যেমন অস্বীকার করা যাবে না, তেমনি আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক পারস্পরিক স্বার্থও সমভাবে গুরুত্বপূর্ণ। একটা কথা আছে সুখের দিনের বন্ধুত্ব বেশি দিন মনে থাকে না দুঃখের দিনের বন্ধুত্ব কেউ ভোলে না। বাংলাদেশ-ভারতের বন্ধুত্বও এমনি এক ঐতিহাসিক দুঃখ-কষ্টের দিনে রচিত। সে এক ভয়ঙ্কর কষ্টের সময় গেছে আমাদের বাঙালীদের জন্য। ১৯৭০-এর নির্বাচনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ তৎকালীন পাকিস্তানের পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। তারপর স্বাভাবিক নিয়মে পার্লামেন্ট অধিবেশন বসবে, সংবিধান রচনা করবে। কেননা, দেশটির ২৩ বছরের মধ্যে মাত্র ১৩ মাস একটি সংবিধান দেখেছে, বাকি পুরো সময়টাই মিলিটারি শাসন। বাঙালীদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন, যাকে আইয়ামে জাহিলিয়াতের সঙ্গে তুলনা করা যায়। কিন্তু বাঙালীর হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানকে ওয়ালাইকুমুসসালাম দিয়ে একাত্তরের অগ্নিঝরা মার্চের ৭ তারিখ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে দশ লাখ মানুষের উত্তাল সমুদ্রে দাঁড়িয়ে এক কালজয়ী ভাষণ দেন, যা স্বাধীনতার প্রাথমিক বা মূল ঘোষণা (ঋঁহফবসবহঃধষ ফবপষধৎধঃরড়হ ড়ভ রহফবঢ়বহফবহপব) দেন এবং আজ যা বিশ্ব ঐতিহ্য। ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে দেন স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা- Perhaps this is my last message to you. From today Bangladesh রং independent. ... এর পরের ইতিহাস হলো ভারতের তৎকালীন মহীয়সী প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী ও তার সরকার এবং সর্বোপরি ভারতের সর্বস্তরের জনগণ আমাদের পাশে দাঁড়ান, সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার গঠন এবং সে সরকারকে সব রকম সহায়তা প্রদান, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ, অস্ত্র-গোলাবারুদ সরবরাহ, খাবার যোগান দেন। বিশেষ করে এক কোটি শরণার্থীকে আশ্রয়, খাবার, শীতের কম্বল, চিকিৎসা অর্থাৎ সব রকম সাহায্য প্রদান করেন। শরণার্থী ইস্যুটি ভারতের জন্য মহাসঙ্কট ডেকে আনে। এর ভয়াবহতা মার্কিন কবি এ্যালেন গিন্সব্যার্গের ‘September on Jessore Road কবিতায় ফুটে ওঠে millions of babies watching the skies bellies swollen, with big round eyes on Jessore Road-Long bamboo buts No place to shit but sand Channel ruts Millions of fathers in rain Millions of mothers in pain Millions of brothers in woe Millions of sisters no where to go... সম্ভবত এই সেপ্টেম্বর মাসেই শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী শরণার্থী শিবির পরিদর্শন শেষে কলকাতায় এক বিশাল জনসভায় কাঁদতে কাঁদতে যে ভাষণটি দিয়েছিলেন তা যুদ্ধ ক্ষেত্রে আকাশবাণী বা স্বাধীন বাংলা বেতার থেকে আমার শোনার সুযোগ হয়েছিল। মনে হয়েছে মমতাময়ী মা যেভাবে বিপদগ্রস্ত সন্তানের জন্য কাঁদেন মিসেস গান্ধীও সেভাবে কেঁদেছিলেন। তারপরই তিনি বেরিয়ে পড়েন বিশ্বভ্রমণে এবং বাংলাদেশে পাকিস্তানী বর্বর মিলিটারি জান্তার গণহত্যা, নারী নির্যাতন, মানুষের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছাই করার চিত্র তুলে ধরেন বিশ্ববিবেকের কাছে। বিশ্বজনমত সৃষ্টি করেন। বঙ্গবন্ধু তখন পাকিস্তানী জান্তার লায়লপুর কারাগারে। মিসেস গান্ধী বঙ্গবন্ধুর মুক্তির জন্য বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোর সরকারপ্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেন, তাদের বোঝান। যে আমেরিকা আমাদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানী মিলিটারিকে সামরিক অস্ত্রশস্ত্রের যোগান দিচ্ছিল সেই আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের সঙ্গেও বৈঠক করেন, বঙ্গবন্ধুর মুক্তির জন্য নিক্সনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। গত ২৯ নবেম্বর ইন্দিরা গান্ধীর জন্মশতবার্ষিকী শুরু হলো; কিন্তু কেউ স্মরণ করল না। কেবল দেখলাম দৈনিক জনকণ্ঠের এক্সকিউটিভ এডিটর স্বদেশ রায় তার কাগজে একটি কলাম লিখে স্মরণ করলেন। আর স্মরণ করলেন সাংবাদিক লেখক মানবাধিকার ব্যক্তিত্ব একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির প্রধান শাহরিয়ার কবির এবং লেখক গবেষক ইতিহাসবিদ ও বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনীর সভাপতি বঙ্গবন্ধু প্রফেসর ড. মুনতাসীর মামুন আন্দোলনের সাথীরা। বস্তুত সিভিল সোসাইটির এই দুই ব্যক্তিত্ব গত ৪০ বছর ধরে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, বুদ্ধিজীবী হত্যার বিচার, গণহত্যার বিচারের দাবির পাশাপাশি সঠিক বন্ধু চেনার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরতœ শেখ হাসিনা ও তার দল এবং সরকারের পাশাপাশি মামুন-শাহরিয়ারদের আরেকটি প্রধান আন্দোলন ইতিহাস বিকৃতি থেকে মুক্তি। আজ যে শিরোনাম দিয়ে এ লেখা লিখছি তা ওদের কাছ থেকে নেয়া। বিজয়ের মাস ৬ ডিসেম্বর জাতীয় জাদুঘরের কবি বেগম সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশ-ভারত নেত্রী এবং দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক নিরাপত্তা’ শীর্ষক এক সেমিনারের আয়োজন করে। তাতেও সভাপতিত্ব করেন ইমেরিটাস প্রফেসর ড. আনিসুজ্জামান পদ্মভূষণ, বক্তৃতা করেন ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনার শ্রী হর্ষবর্ধন শ্রিংলা, নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ মেজর জেনারেল (অব) মুহম্মদ আলী শিকদার এবং মুক্তিযুদ্ধকালীন ভারতের ঞযব ঝঃধঃবংসধহ পত্রিকার তুখোড় রিপোর্টার মানস ঘোষ, যিনি একাত্তরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে তথ্য সংগ্রহ করে পত্রিকায় রিপোর্ট করেন, যা পশ্চিমা পত্রিকাও লিফট করে। সর্বশেষ ঝঃধঃবংসধহ-এর এডিটর হিসেবে অবসর নেন। বঙ্গবন্ধুকন্যার সরকার তাকে একাত্তরের অবদানের জন্য মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা পুরস্কারে ভূষিত করে। গত দুইদিন আমি আর মানস ঘোষ দুটি টিভি চ্যানেল এঞঠ এবং ঈযধহহবষ-ওতে টক শো করি। তাতে এই ভারতীয় সাংবাদিক যতটা শ্রদ্ধার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিচারণ করলেন আমরা বাংলাদেশের সাংবাদিকদের ক’জন শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর নাম নিচ্ছি। এই ৬ ডিসেম্বর ভারত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। মানস ঘোষ বলেছিলেন ঐদিন শ্রীমতী গান্ধী ভারতের লোকসভায় দাঁড়িয়ে বলছিলেনÑ ওঃ রং ধ ঢ়ষবধংঁৎব ভড়ৎ সব ঃড় ধহহড়ঁহপব ঃযধঃ ঃযব উযধশধ নবপড়সব ঃযব পধঢ়রঃধষ ড়ভ রহফবঢ়বহফবহঃ ধহফ ংড়াবৎবরমহ ইধহমষধফবংয. আমরা যারা অভ্যন্তরে যুদ্ধে ছিলাম স্বাধীন বাংলা বেতার বা আকাশবাণী রেডিওর মাধ্যমে জানতে পেরেছিলাম ৬ ডিসেম্বরের আগেই পাকিস্তান পশ্চিম ভারতে আক্রমণ করলে ভারতও পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। তখন মুজিববাহিনী বা বিএলএফ লিডার আবদুল মমিন খান মাখনের নেতৃত্বে আমরা চাঁদপুরের মতলবে অবস্থান করছিলাম এবং আমরাও পাকিস্তানী বর্বর বাহিনী ও রাজাকারদের ওপর আক্রমণ বাড়িয়ে দেই এবং আমরা চেঙ্গাতলী বাজারের শামসু ডাক্তারের বাড়ির ক্যাম্প থেকে চাঁদপুর শহরের দিকে অগ্রসর হতে থাকি। যদ্দুর মনে পড়ে সঙ্গে ছিলেন প্রফেসর আঃ রহিম, বিল্লাল, বাবলু, সবুর, সব নাম মনে নেই। মহামায়া বাজারের পুব পাশে পুলের ওপর দিয়ে যাতায়াতরত পাকি মিলিটারিবাহী ট্রাক দেখে আমাদের একজন গুলি চালালে জবাবে ওরাও পাল্টা গুলি চালায়। মিলিটারিরা আমাদের দিকে এগোলে কেউ রেহাই পেতাম না। পাকি মিলিটারিরা তখন পলায়নপর এবং আতঙ্কিত। এই মহামায়া বাজার থেকে সোজা দক্ষিণে রেললাইনের ওপর লোহার ব্রিজটিও বেঙ্গল রেজিমেন্টের সুবেদার মেজর জহুরুল হক পাঠানের নেতৃত্বে বর্ষা শুরুর এক রাতে উড়িয়ে দেয়ার সময়ও আমার সৌভাগ্য হয়েছিল অংশ নেয়ার। ব্রিজের নিচে যে পাওয়ারফুল মাইন লাগানো হয়েছিল সেটি করেছিল বেঙ্গল রেজিমেন্টের দুজন এক্সপার্ট। আজ আমরা স্বাধীনতার ৪৬ বছর পার করে এগিয়ে চলেছি অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে শক্ত ভিতের ওপর প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র হিসেবে, যা দেখে অনেক উন্নত দেশও আমাদের রোল মডেল মনে করে। বঙ্গবন্ধুকন্যা আমাদের একটা সম্মানের জায়গায় এনেছেন। রোহিঙ্গা ইস্যু আমাদের জন্য একটা বিরাট সঙ্কট হিসেবে উপস্থিত হয়েছে। সমালোচকদের জবাবে বলতে হয় সরকার কি করতে পারত, নাফ নদী বা বঙ্গোপসাগরে নৌকা, ভেলায় ভাসমান রোহিঙ্গাদের উঠতে না দিলে কি হতো, গত ২৫ আগস্ট থেকে যে সাড়ে ৬ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন তারা কি জীবিত থাকত, বিশেষ করে নারী-শিশুরা কেউ বাঁচতেন না। তাছাড়া শেখ হাসিনা মা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বা শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর মতোই মমতাময়ী। তিনি কি পারেন তাদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে? ভাসমান রোহিঙ্গাদের দিকে (কক্সবাজারে) আঙ্গুল তুলে বলেছিলেন-ঞযবু ধৎব ধষংড় যঁসধহ নবরহম. মানবতার সর্বোচ্চ পরাকাষ্ঠা দেখালেন। তাকে বলা হলো ‘গড়ঃযবৎ ড়ভ যঁসধহরঃু’ কিংবা ‘ঝঃধৎ ড়ভ ঃযব বধংঃ.’ সমস্ত পৃথিবী তার পাশে এসে দাঁড়াল, সাহায্যের হাত বাড়াল। শেখ হাসিনা কি করে ভুলবেন ১৯৭১ সালে এক কোটি শরণার্থী ভারতের মাটিতে আশ্রয় নিয়েছিল, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর তারা দুই বোনও ভারতের মাটিতে আশ্রয়হীন, দেশহীনের মতো বেঁচেছেন। ৬ বছর। একাত্তরের মতো ’৭৫-এর পরও শ্রীমতী গান্ধীই তাদের আশ্রয় দিয়েছিলেন। কি করে ভুলবেন শেখ হাসিনা? বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে কক্সবাজারের কতুপালংয়ে গিয়ে অসহায় রোহিঙ্গা শিশু ও নারীদের জড়িয়ে ধরে কেঁদেছেন, যেমন কেঁদেছিলেন ইন্দিরা গান্ধীও। বস্তুত বড় মাপের মানুষরা এভাবেই অপরের দুঃখ-কষ্টে ব্যথিত হন। অথচ কেউ নাকি কক্সবাজারে রাজনৈতিক সফরে গেলে আগেই এক রোহিঙ্গা শিশুকে গোসল করিয়ে ভাল কাপড় পরিয়ে তবেই কোলে তুলে দেয়া হয়েছিল (জনশ্রুতি)। শেখ হাসিনার মধ্যে এরকম মেকি বা লোক দেখানো মমতা রয়েছে তা কেউ বলতে পারবে না। কেননা, তিনি আজ কেবল মাদার অব হিউম্যানিটি নন, বিশ্বের তিনজনের অন্যতম সৎ রাষ্ট্রনেতা। সৎ মানুষই পারে মানুষকে ভালবাসতে। অথচ এই বাংলাদেশেরই আরেক নেত্রী যিনি তিনবার প্রধানমন্ত্রীও ছিলেন, সম্প্রতি কয়েকটি সংবাদ প্রচারিত হয়েছে গণমাধ্যমে সেই নেত্রী খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানের ৫০০ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে সৌদি আরবে। যে পরিবারের টাকার প্রতি এত মমতা সে পরিবারের মানুষের প্রতি মমতা থাকার কথা নয়। তারপরও স্বীকার করতেই হবে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে পশ্চিমা দুনিয়া আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। আমাদের পরীক্ষিত বন্ধু ভারত-রাশিয়া সেভাবে দাঁড়ায়নি। চীনও নয়। তাদের কতগুলো স্ট্র্যাটেজিক ইন্টারেস্ট বা বিজনেস ইন্টারেস্ট রয়েছে। তবে তাদের বরফ গলতে শুরু করেছে। একদিন তারাও আসবে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ক্যারিশমা তাদের রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে এগিয়ে দেবেই। তাছাড়া বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রীর বড় দিক হলো দুই প্রতিবেশীর পারস্পরিক স্বার্থ। বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক অর্থাৎ জিও পলিটিক্যালি যত শক্তিশালী হবে ভারতের তাতে কম লাভ নয়। বাংলাদেশ দুর্বল হলে এখানে জামায়াত-শিবির, আইএস, আল কায়েদা ঘাঁটি গাড়তে পারবে এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোর জন্য তা মোটেই সুখকর হবে না। একইভাবে বাংলাদেশেরও একটা কথা ভুলে গেলে চলবে না যে, দশ ট্রাক অস্ত্র ধরা পড়েছিল কক্সবাজার এলাকায়ই। দেশীয় আন্তর্জাতিক টেররিস্টরা সব সময় চাইবে বঙ্গোপসাগর তথা বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকা ব্যবহার করে ভারতের বিভিন্ন বর্ডার দিয়ে প্রবেশ করতে। তদুপরি রয়েছে ড্রাগ ও অস্ত্রের ব্যবসা, এটি ভারত-বাংলাদেশ উভয়কেই বুঝতে হবে। একা শেখ হাসিনা কিংবা নরেন্দ্র মোদিকে বুঝলে চলবে না, সবাইকে বুঝতে হবে। ঢাকা ৭ ডিসেম্বর ২০১৭ লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও সভাপতি, জাতীয় প্রেসক্লাব [email protected]
×