ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

তরুণ লেখকদের সাহিত্য ভাবনা ॥ চর্যাপদ’র ভূমি ॥ এক জীবন ক্ষয় করার ব্যক্তিগত বোধ কবিতা

প্রকাশিত: ০৭:১২, ৮ ডিসেম্বর ২০১৭

তরুণ লেখকদের সাহিত্য ভাবনা ॥ চর্যাপদ’র ভূমি ॥ এক জীবন ক্ষয় করার ব্যক্তিগত বোধ কবিতা

*বঙ্গ রাখাল কবিতা এক অধরার নাম। কবিতা আমার পিতার আবাদীত চাষী জমিন কিংবা দাদুর লাঙ্গলের ফলায় চাষ দেয়া বিঘা বিঘা জমিতে ফুলে ওঠা অবারিত মাঠ ক্ষেত। এই অধরার জন্য কত রাত যাপন করেছি, সাইকেল চালিয়ে তার কোমল শরীর কিংবা মুখশ্রী দেখার অবিশ্বাস্য অভিপ্রায়ে জীবনানুভূতিকে শীতল করে আবেগ স্পন্দনে নিজেকে সাপের মতো কুন্ডুলী পাকিয়ে তোমাকে অনুভব করার চেষ্টা করেছি কবিতা। বহুমাত্রিক পৃথিবীর পথে হাঁটতে হাঁটতে আংশিক কিংবা জীবনের অভিনীত মুহূর্তে তীব্র যন্ত্রণায় পাশের বাড়ির রাত্রির হাত ধরে অমিতাভ তৃষ্ণায় ব্যাকুল বাসনায় টাইপ করি তোমার জীবনের প্রতিটি বর্ণময় ধ্বনিস্মারক। তীব্র সংঘাত, অস্থিরতা কিংবা গতিময় জীবনযাপনের কালেও আমাদের প্রতিনিয়ত রং পাল্টে পরতে হয় গিরগিটির সাজ, বদল ঘটাতে হয় নিজের, ব্যক্তি চরিত্রের বা বৃত্তের চারিপাশের অন্তর বাহিরের পরস্পর বিরোধী সংলাপের। তবুও অভিনয়- বেশ ভাল আছি। এই ভাল থাকাকে পুঁজি করেই আমাদের প্রতিনিয়ত হানা দিতে হয় কবিতার ঘরে। কারণ কবিতা আমার একান্ত আপনার। কত কত শব্দের মাঝ থেকে রাত্রি যাপন বা এক জীবন ক্ষয় করে আমাদের সৃষ্টি করতে হয় এক পুষ্প মঞ্জরি, তবুও কবিতা দেবী তৃপ্ত না হলে পরতে পারি না কবিতা নামের হিরা খচিত মুকুট। সকালে কচু পাতায় জমে থাকা সামান্য শিশির বা বাতায়ন পাশে থায় দাঁড়িয়ে থাকা মেহেদি পুষ্পের ঘ্রাণ কিংবা রাত গভীর হলে বকুলের মালায় হাত বুলিয়ে তোমাকে ভাবি, অন্তরে গভীর বেদনা অনুভূত হয়, মানসিক তীব্র যন্ত্রণা ঠেলে দেয় মস্তিষ্ক খননের রক্তাত্ত স্মৃতিমন্থনের দিকে, পাশাপাশি তুমি এসে হাজির হও, সাদা খাতার পাতায় লিপিবন্ধ করি দু-একটা লাইন কিংবা তোমার জীবনের প্রাণবায়ু, এ বড় যন্ত্রণা, চোরাগোপ্তা জীবনে তোমার সঙ্গে সহবাসে বীর্য স্খলিত হলে জীবনে প্রাণহীন নিঃসঙ্গতার ঘোরটোপ বন্দী করে। তবুও এই খয়িত জীবন বোধ তো তোমাকে ঘিরেই তুমি আছো বলেই এই জীবন কিংবা ব্যক্তিগত সব সহানুভূতিম-িত চিত্র অঙ্কন করা সম্ভব হয়েছে। *হাওয়ায় ডাঙ্গার ট্রেন মৃত্যুকল্পনা অসুখ দিনে বাড়িয়ে দেয় হারানো পথের দিশা, পুড়া দিনে হেঁটে চলে অকল্পিত বেঁচে থাকার সার্কাস জীবন। সার্কাসের অ্যাক্রোভেট ট্রেনের হুইসেলে বুকে জমায় কান্না, সেই বাল্যকালে বাবার মৃত মুখ, আহজারি মার স্বামীহারা কষ্ট আর এক ট্রেন ছেড়ে অন্য ট্রেনের বগি বেয়ে বাদামের ঝুলি বদলের ইতিহাস, রাষ্ট্রনায়ক- আমার বাবা কিংবা মা হলে আমি সন্তান হয়ে খেয়ে যাব পাখি পোড়া জীবনের ছাই মাখা ভাত। *নষ্ট নদীর জলে মদনগঞ্জের ইতিহাস অনেক পুরনো ঠিক আমার জীবন সঙ্গীর বেড়ে ওঠা বুকের বয়সী। নাপিতের দোকানের পাশে অন্নপূর্ণার পিঠার দোকান। সেখানেই পরিচয় নদীদের সাথে। নদী জলের অনেকটা অতিথি পাখির তৃষ্ণার্ত বিড়াল আমি। তীব্র পিঠার ক্ষুধা বুকে ... চিতই, পুলি, খাচ কাটা পিঠা। অন্ধ রাতের আঁধারে টিপ টিপ পায়ে আবির্ভাব হয় ঐ পিঠার দোকানে সফেদ পোশাকের নষ্ট নদীর জল। আর এদিকে বাজারমুখী জনগণ বলাবলি করে- কীটনাশকে জীবন দিল জলের মাছ কিংবা পোকা। *শুধু হেঁটে চলি পথ আচ্ছা, অনেকটা দিন পার হয়ে গেলে তুমি ভুলেও কি আমায় রাখবে মনে একটি খরগোশ কিংবা কপোত হয়ে- বাড়িয়ে যাবো মস্তিষ্কের মগ্নতা সবুজাভ পাতাগুলো ঝরে গেলে এই কংক্রিটের শহরে পুতুল নাচের গোপন প্রেম ও কী ফিরে যায় ঘরে এত দিনে বুঝেছি যান্ত্রিক নগরে প্রত্যেকে একা কিংবা একা নয় শুধু অভিনয়, ঠোঁট বাকিয়ে হাসার চেষ্টা... মাথিনাখ্যান *মাথিনাখ্যান অন্ধকার রাতে পালিয়ে গেলে বেঁচে যায় জাত। না গেলে- মাথিনকে পেয়ে যাব। সোজা কথা নয়। জাত আর প্রেমের সাজঘরে আমার অস্থির মন। ভীতু আর কাপুরুষের মতো জাতকে বাঁচাতে পালিয়ে গেলে- ধীরাজ। বাবা লিখলেনÑ আজ খনিক উত্তেজনার বসে তুমি যদি ব্রাহ্মণের অস্পৃশ্য এক মগের মেয়েকে বিবাহ কর, তাহলে সমাজে ও অগণিত শিষ্যের নিকট মুখ দেখানোই দুস্কর হবে। প্রেমকে বিসর্জন দিয়ে রাখলে বাবার মুখ। মাথিন তুমি ভুল করেছিলে, ভীতু আর বীভৎস এক জানোয়ারের ছবি এঁকে ঘর বাঁধার দূরন্ত ইচ্ছায়, বুঝেছিলে ভাষাহীন চোখের ভাষা, কাটিয়েছিলে অন্ধ রজনী দ্রাবিড় সত্য দুরারোগ্য সে প্রেম। প্রতিদানে কি পেলে, দু’ফোটা চোখের জল না তোমাকে আঁকড়ে বেঁচে থাকার বাস্তব অভিনয়। *ওঝা মোড়ক আড়ালে বৃক্ষ চিৎকার দিলে হাকিম চত্বরে শত শত গোলাপী নারীরা অধিতবিদ্যায় এক ঝাঁক তরুণের দৃষ্টি গতরে সঞ্চয় করে। তাদেরও তো শতাব্দীর পর শতাব্দী আক্ষেপ থাকে অন্ধকার রাতে রোগশয্যায় বাবাদের ছুঁয়ে দিতে হাত। পথের আলো নিভে গেলেই বাবারা হয়ে যায় বিষধর সাপ, মুচড়ে দেয় মায়েদের শরীর। পাখিবিদ্যায় বাবা অনেকটা মায়েদের চেয়ে এগিয়ে। বাবা নারীদের সঙ্গে পাখি পাখি খেলে, পুরুষেরা হেরেমে মদ আর জীবন্ত সাকির অদম্য নেশায় নারী বুকে তুলে দেয় ঝড় আর পিতা ওঝা হয়ে-ঝেড়ে দেয় বিষ।
×