ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিপিএল ফুটবল ॥ সাইফ ২-০ মুক্তিযোদ্ধা

ম্যারাডোনাকে মনে করিয়ে দিলেন মতিন মিয়া!

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ৮ ডিসেম্বর ২০১৭

ম্যারাডোনাকে মনে করিয়ে দিলেন মতিন মিয়া!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ৫ আগস্ট, ২০১৭। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে আরামবাগকে ১-০ গোলে হারিয়ে নবাগত সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচেই কুড়িয়ে নেয় তাদের ‘প্রথম এবং ঐতিহাসিক’ জয়টি। গোলদাতার নাম মতিন মিয়া। ৭ ডিসেম্বর, ২০১৭। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত লীগে সাইফের পঞ্চদশ ম্যাচের প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়াচক্র। খেলায় সাইফ জিতল ২-০ গোলে। দ্বিতীয় গোলটি এলো মতিন মিয়ার পা থেকে। প্রথম লেগেও একই ব্যবধানে মুক্তিকে হারিয়েছিল সাইফ। মজার ব্যাপার ১৮ আগস্টের সেই খেলাতেও ম্যাচের এবং দলের দ্বিতীয় গোলটি করেছিলেন মতিন! তবে এই মজার সাদৃশ্যকে বৃহস্পতিবার ছাপিয়ে গেছে আরেকটি ঘটনা। সেটা হচ্ছে ২১ বছর বয়সী সিলেটের এই তরুণ ফুটবলারের গোল করার ধরন। ঢাকার ফুটবলে এমন গোল অনেকদিন দেখা যায়নি, যেটা করে দেখালেন প্রথম জীবনে রংমিস্ত্রির কাজ করা মতিন। সেটা কেমন? প্রায় মাঝমাঠ থেকে সম্পূর্ণ একক প্রচেষ্টায় প্রতিপক্ষের পাঁচ ফুটবলারকে কাটিয়ে অনবদ্য এক গোল করেন তিনি। আর্জেন্টাইন ফুটবল-ঈশ্বর দিয়াগো ম্যারাডোনার সঙ্গে কোনভাবেই তুলনা চলে না মতিন মিয়ার। তারপরও তার এই অসাধারণ গোলটি যেন মনে করিয়ে দেয় ১৯৮৬ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলায় প্রতিপক্ষের ছয় ফুটবলারকে কাটিয়ে গোল করার সেই মুহূর্তকে! ম্যাচের তখন ইনজুরি টাইম (৯০+৩ মিনিট)। এর মাত্র মিনিট চারেক আগেই সতীর্থ কলম্বিয়ান ফরোয়ার্ড হেম্বার ভ্যালেন্সিয়ার পরিবর্তে মাঠে নামেন বদলি হিসেবে। কোচ রায়ান নর্থমোর মতিনকে আরও আগে কেন নামালেন না, এ নিয়ে তখন জোর আলোচনা চলছে প্রেসবক্সে। এর মধ্যেই মতিন-ম্যাজিক। প্রতিপক্ষের এক খেলোয়াড় ঠিকমতো বল ক্লিয়ার করতে না পারায় বলের নিয়ন্ত্রণ বুঝে নেন মতিন। এরপর দুরন্তগতিতে ড্রিবল করে পর্যায়ক্রমে চারজনকে দারুণ দক্ষতায় কাটিয়ে মুক্তির বক্সে ঢুকে পড়েন। বিপদ বুঝে সামনে এগিয়ে আসেন মুক্তি গোলরক্ষক আজাদ হোসেন। তাকেও অনায়াসে কাটালেন মতিন। পেয়ে গেলেন ফাঁকা-অরক্ষিত পোস্ট। ব্যস, আর দেরি না করে বাঁ পায়ে বল ঠেলে দিলেন জালে, গো-ও-ল! সতীর্থদের আলিঙ্গনে আবদ্ধ হয়ে মতিনের তখন হাঁসফাঁস অবস্থা! নিজেদের পঞ্চদশ ম্যাচে এটা সাইফের অষ্টম জয়। ৩০ পয়েন্ট নিয়ে তারা আছে পয়েন্ট টেবিলের চতুর্থ স্থানে। পক্ষান্তরে সমান ম্যাচে দুইবারের লীগ চ্যাম্পিয়ন মুক্তিযোদ্ধার একাদশ হার। ৮ পয়েন্ট নিয়ে তারা আছে রেলিগেশনের হুমকিতে (১২ দলের মধ্যে একাদশ)। বৃহস্পতিবার দিনটা ‘বৃহস্পতি তুঙ্গে’ ছিল না মুক্তিযোদ্ধার। তাদের একটি ‘ন্যায্য’ গোল বাতিল করে দেন রেফারি জালালউদ্দিন। ৩২ মিনিটে মুক্তির ফরোয়ার্ড তৌহিদুল আলম ডানপ্রান্ত দিয়ে সাইফের বক্সে বল নিয়ে ঢুকে গড়ানো ক্রস করেন। সেই বলে শট নেন নাইজিরিয়ান ফরোয়ার্ড মাগালান আওয়ালা। তার শট সাইফ গোলরক্ষক পাপ্পু হোসেন ধরতে গিয়ে ফস্কে যায়। সেই বল শুয়েই আবারও শট করেন মাগালান। পাপ্পু শুয়ে পড়ে ধরতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। ধীর গতিতে বল ঢোকে জালে। কিন্তু রেফারি বাঁশি বাজিয়ে জানান, এটা ফাউল। মাগালানের বুটের আঘাত লেগেছে পাপ্পুর চোখে-মুখে। কেননা পাপ্পু তখন মাটিতে গড়াগড়ি করছেন ব্যথা পেয়ে। অথচ রিপ্লেতে দেখা যায়, মাগালানের সঙ্গে পাপ্পুর কোন সংঘর্ষই হয়নি! ফলে গোলবঞ্চিত হয় মুক্তিযোদ্ধা। এর আগে অবশ্য ২৮ মিনিটে নিশ্চিত গোলের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয় সাইফও। ডানপ্রান্ত থেকে দারুণ একটি পাস বাড়ান শেরিংহ্যাম। প্রায় ফাঁকা পোস্টে বলটা ঠেলে দিতে পারলেই গোল। কিন্তু পা বাড়িয়েও বলের নাগালই পেলেন না জুয়েল রানা। ৪৭ মিনিটে বল নিয়ে বক্সে ঢুকে শেরিংহ্যাম ডান পায়ের টোকায় জাল কাঁপান মুক্তিযোদ্ধার (১-০)। তারপর দু’দলই আক্রমণ করে খেলেও গোল পায়নি। খেলা যখন শেষ পর্যায়ে তখনই মতিন মিয়ার ম্যারাডোনার মতো গোল!
×