ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জানুয়ারিতে ১২ দল নিয়ে স্বাধীনতা কাপ ফুটবল

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ৮ ডিসেম্বর ২০১৭

জানুয়ারিতে ১২ দল নিয়ে স্বাধীনতা কাপ ফুটবল

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বাংলায় দুটি প্রবাদ আছে। ‘মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশি’ এবং ‘যার বিয়ে তার খবর নাই, পাড়া-পড়শির ঘুম নাই!’ দেশের ফুটবলে এই মুহূর্তে এই প্রবাদ দুটি যেন শতভাগ প্রযোজ্য মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেড এবং বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) ক্ষেত্রে। ২০১২-১৩ মৌসুমে মোহামেডানের কোচ ছিলেন এমেকা ইউজিগো। মাঝপথে এই নাইজিরিয়ান কোচ দল ছাড়লেও বকেয়া পারিশ্রমিক পাননি। এ নিয়ে ফিফায় নালিশ করেন তিনি। তৎপর হয় ফিফা। ২০১৫ সালে তারা বাফুফের মাধ্যমে মোহামেডানকে জানায়, এমেকার পাওনা ২০ হাজার ডলার পরিশোধ করতে হবে। তবে আজ পর্যন্ত সেটা দেয়নি সাদা-কালোরা। সর্বশেষ গত ৩০ অক্টোবর ফিফা বাফুফেকে নির্দেশ দেয় চলতি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে ক্লাবের অর্জিত পয়েন্ট থেকে মোহামেডানের তিন পয়েন্ট কেটে নিতে হবে। একই সঙ্গে এমেকার বকেয়া বেতন সুদসহ ২২ হাজার ডলার পরিশোধ করতে হবে। এরপর একমাস সময় কেটে গেছে। মোহামেডান জরিমানার টাকা দেয়নি। বাফুফেও পয়েন্ট কেটে নেয়নি। বরং গত ১৮ নবেম্বর ফিফাকে চিঠি পাঠায় বাফুফে। সেখানে পাওনা পরিশোধের জন্য বাড়তি একমাস সময় চেয়েছিল তারা। পয়েন্ট কাটার বিষয়টিও জানতে চাওয়া হয়েছিল। জবাবে গত ৩০ নবেম্বর ফিফা আবারও পরিষ্কার করে আগের রায় বহাল রাখার চিঠি দিয়েছে। এতকিছুর পরও বাফুফে-মোহামেডান নিজ নিজ অবস্থানে অনড়-নিশ্চুপ আছে! ফলে বাধ্য হয়ে ফিফা হুমকি দিয়েছেÑ মোহামেডানের পয়েন্ট না কাটলে এবং এমেকার বেতন পরিশোধের ব্যবস্থা না করলে উল্টো বাফুফেকেই বহিষ্কার করা হবে! শেষ পর্যন্ত ফিফার চোখ রাঙানিতে নড়েচড়ে বসেছে দেশীয় ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক এই সংস্থাটি। বৃহস্পতিবার বাফুফে ভবনে অনুষ্ঠিত হয় পেশাদার লীগ কমিটির সভা। সেখানে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে আলোচিত হয় ‘এমেকা’ ইস্যুটিও। আশা করা হয়েছিল বাফুফে ফিফার নির্দেশনা মেনে কঠোর পদক্ষেপ নেবে মোহামেডানের বিরুদ্ধে। কিন্তু ‘যেই লাউ, সেই কদু!’ বাফুফে কোন পদক্ষেপই নেয়নি। লীগ কমিটির সভা শেষে বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী বলেন, ‘আমরা শেষবারের মতো ফিফাকে অনুরোধ করব। মোহামেডানের পয়েন্ট যেন না কাটে। এরপরও যদি তাদের সিদ্ধান্তে বহাল থাকে তখন অবশ্যই ফিফার নির্দেশনা অনুসরণ করবে।’ বাফুফে কি মোহামেডানের জন্য বেশি ঝুঁকি নিচ্ছে না? ‘আমরা সুষ্ঠু সমাধানের চেষ্টা করছি। ফিফার সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের টানাপোড়েনও যেন না হয় সেটাও ভাবতে হচ্ছে।’ সালামের জবাব। শুধু তাই নয়, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাফুফের এক শীর্ষ পর্যায়ের কর্তা দম্ভভরে জানিয়েছেন, ‘বাফুফের কোন শাস্তিই হবে না। কারণ ফিফায় আমাদের লোক আছে!’ ‘লোক’ বলতে মাহফুজা আক্তার কিরণ। তিনি ফিফায় আছেন সদস্য হিসেবে। কিন্তু আদৌ কি কিরণে পরিত্রাণ পাবে বাফুফে? উল্লেখ্য, এর আগে বাংলাদেশ ২০০১ সালে ফিফার নিষেধাজ্ঞায় পড়েছিল ফেডারেশনে সরকারী হস্তক্ষেপের জন্য। এদিকে মোহামেডান এই প্রসঙ্গে কোন আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেয়নি। তবে বিভিন্ন সূত্রে দুটি বিষয় জানা গেছে। একপক্ষের মতে মোহামেডান বাফুফের কাছে অর্থ পায়। সেই অর্থ ফিফাকে দিতে বলেছে। আবার আরেক পক্ষের মতে এমেকার অভিযোগ ভিত্তিহীন। এমেকা পূর্ণ পারিশ্রমিক বুঝে পেয়েছেন। লীগ কমিটির সভায় স্বাধীনতা কাপ নিয়েও কোন সিদ্ধান্তে আসেনি। ১৩ জানুয়ারি লীগ সমাপ্ত হবে। লীগ শেষ হওয়ার পর স্বাধীনতা কাপ নিয়ে আলোচনা হবে, ‘লীগ শেষে ক্লাবগুলো নিয়ে সভায় বসব। আমাদের ইচ্ছে আছে এক সপ্তাহের মধ্যে টুর্নামেন্ট করার’ বলেন সালাম মুর্শেদী। অতীত অভিজ্ঞতায় এমন মন্তব্যে আশান্বিত হওয়ার কিছু নেই। প্রিমিয়ার লীগের ক্লাবগুলোর দল নিয়ে অনুর্ধ পর্যায়ে প্রতিযোগিতা হওয়ার কথা। বাফুফের ক্যালেন্ডারে থাকলেও সেই প্রতিযোগিতা না হওয়ারই সম্ভাবনা বেশির ইঙ্গিত, ‘লীগ অনেক লম্বা হয়েছে। ক্লাবগুলোর খরচও বেড়েছে। লীগের পরে দেখা যাক।’ স্বাধীনতা কাপ প্রসঙ্গে বাফুফের ভাষ্য সার্বিক প্রস্তাব নিয়ে ক্লাবগুলোকে চিঠি দেয়া হবে। তারা যদি সাড়া দেয় তাহলে এই আসরে কোন বিদেশী খেলোয়াড় খেলবে না। লোকাল প্লেয়ার দিয়ে ১২টি দল অংশ নেবে। অন্যায় যে করে, আর অন্যায় যে সহে, তারা দু’জনেই সমান অপরাধী। এখন দেখার বিষয় এমেকার টাকা না দিয়ে মোহামেডান এবং মোহামেডানকে শাস্তি না দিয়ে বাফুফে কিভাবে বাঁচতে পারে ফিফার শাস্তি থেকে। বাফুফে কি পারবে ফিফাকে ম্যানেজ করতে (যেহেতু ফিফায় তাদের ‘লোক’ আছে)?
×