ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

নিজেদের মধ্যে গ্রুপ করল সৌদি আরব ও আমিরাত

অনিশ্চয়তার পথে জিসিসি

প্রকাশিত: ০৬:১০, ৮ ডিসেম্বর ২০১৭

অনিশ্চয়তার পথে জিসিসি

সৌদি আরবকে সঙ্গে নিয়ে বুধবার মধ্যপ্রাচ্যে নতুন অর্থনৈতিক ও অংশীদারিত্ব গ্রুপ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। যেটা উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদ বা জিসিসি থেকে সম্পূর্ণ আলাদা হবে। প্রতিবেশী দেশ কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সঙ্কটের প্রেক্ষাপটে নতুন এ উদ্যোগে জিসিসির গুরুত্ব তাৎপর্যপূর্ণভাবে কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। টাইমস অফ ইন্ডিয়া ও আলজাজিরা। কুয়েতে জিসিসির বৈঠকের কয়েক ঘণ্টা আগে আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই ঘোষণা আসে। তিনি বলেন, আরব আমিরাতের শাসক ও প্রেসিডেন্ট শেখ খালিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ান নতুন যৌথ সহযোগিতা পরিষদের অনুমোদন দিয়েছে। তবে নতুন এই অংশীদারিত্ব নিয়ে সৌদি আরব তাৎক্ষণিকভাবে কোন কথা বলেনি। ছয় সদস্যের জিসিসিতে নতুন ঘোষণার প্রভাব কতটা পড়বে সে ব্যাপারে এখনও কিছু জানা যায়নি। তবে বৈঠকে কাতার সঙ্কটই আলোচনায় প্রাধান্য পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আরব উপদ্বীপকে বিভক্ত করে দেয়া এই বিতর্ককে কেন্দ্র করে অর্ধেক জিসিসি সদস্য এই বৈঠক বর্জন করেছে। আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সামরিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিকসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা ও সমন্বয় করতে একটি পরিষদ গঠন করা হয়েছে। তারা সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের স্বার্থ দেখভাল করবেন। কাতারের আমির জিসিসি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। কাতারকে প্রত্যাখ্যান করতে সৌদি বাদশাহ সালমান এতে অনুপস্থিত ছিলেন বলে ধরে নেয়া হয়েছে। কাতারি আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানি বৈঠকে উপস্থিত হওয়ার আমন্ত্রণ গ্রহণ করলে বৈঠক শুরু হওয়ার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে বাদশাহ সালমান নিজে না থেকে তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল-জুবায়েরকে পাঠিয়েছেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আরব আমিরাতের সঙ্গে সৌদি আরবের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে। ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সৌদি জোটের যুদ্ধে আমিরাতের সেনাবাহিনী ব্যাপকভাবে অংশ নিয়েছে। আবুধাবির সিংহাসনের উত্তরসূরি মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল-নাহিয়ানের সঙ্গে সৌদি আরবে তার সমমর্যাদার মোহাম্মদ বিন সালমানের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। নতুন গ্রুপে উপসাগরীয় অন্য কোন দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হবে কিনা; আমিরাতের ঘোষণায় তা বলা হয়নি। তবে যা-ই ঘটুক না কেন, জিসিসির ওপর বড় ধরনের একটা চাপ থাকছেই। কাতারের ওপর অবরোধ আরোপের পর থেকে গত ছয় মাস ধরে জিসিসি নজিরবিহীন সঙ্কট মোকাবেলা করছে। শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ ইরানের বিরুদ্ধে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠায় ১৯৮১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র আরব দেশগুলোকে নিয়ে জিসিসি গঠিত হয়। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জোট জিসিসি’র ছয় সদস্য হলো- বাহরাইন, কুয়েত, ওমান, কাতার, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। জিসিসির দ্বিধাবিভক্ত সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জোরালোভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। কুয়েতে এ সময়ে জিসিসির বৈঠকে বসাটা এর নিয়মিত সদস্যদের কিছুটা অবাক করেছে। রাইস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ক্রিস্টিয়ান কোয়াটস উলরিসেন বলেন, গত দুই দশকের মধ্যে এটা জিসিসির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক। কাতার সঙ্কটের প্রতিটি স্তর পাশ কাটিয়ে যাওয়ার পর জিসিসিকে নিজের প্রাসঙ্গিকতা পরিষ্কার করতে হয়েছে। বিতর্কের শুরু হয় চলতি বছরের জুনে। তখন সৌদি সরকারের বিরুদ্ধে কাতার সরকার পরিচালিত সংবাদ সংস্থায় দেশটির আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির প্ররোচনামূলক বক্তব্য প্রচার করা হয়েছে। যদিও কাতার দাবি করেছে যে তাদের সংবাদ সংস্থা হ্যাক করা হয়েছিল। এরপরই কাতারের সঙ্গে নিজেদের বিমান ও সমুদ্রপথ বন্ধ করে দেয় জিসিসির সদস্য রাষ্ট্র বাহরাইন, সৌদি আরব ও আরব আমিরাত। উপসাগরীয় ছোট্ট দেশটির সঙ্গে নিজের সীমান্তও বন্ধ রাখে সৌদি আরব। সঙ্কট মোকাবেলায় তুরস্ক ও ইরান থেকে খাদ্য সরবরাহ করতে হয় কাতারকে। সঙ্কট শুরু হওয়ার পর দেশটির ফরেন রিজার্ভ এক হাজার কোটি ডলার কমে যায়।
×