ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জিয়া পরিবারের দুর্নীতির খবর প্রকাশে অনীহা কেন প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ৮ ডিসেম্বর ২০১৭

জিয়া পরিবারের দুর্নীতির খবর প্রকাশে অনীহা কেন প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ জিয়া পরিবারের অন্যায়-দুর্নীতি ও অর্থপাচারের সংবাদ প্রকাশ করতে গণমাধ্যম মালিক-সম্পাদকদের অনীহা কেন? বৃহস্পতিবার গণভবনে জনাকীর্ণ সাংবাদিক সম্মেলনে সে প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মধ্যপ্রাচ্যে খালেদা জিয়ার পাচারকৃত সম্পত্তির খবর বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলোতে তেমন জায়গা না পাওয়ায় দেশের গণমাধ্যমকর্মীদের কড়া ভাষায় সমালোচনা করে তিনি বলেন, জনকণ্ঠসহ মাত্র দু’টি পত্রিকা ছাড়া আর কোথাও সংবাদটি প্রকাশ হতে দেখলাম না। সৌদিতে বিএনপি নেত্রীর বিশাল শপিংমল, সম্পদ পাওয়া গেছে এটা তো আমরা কিছু করিনি। এটা বিদেশ থেকেই সংবাদটাই এসেছে। বরং বাংলাদেশে সাংবাদিকদের নিউজটা করার ব্যাপারে আগ্রহ দেখলাম না, এর রহস্যটা কী? তিনি আরও প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘আপনারা (মালিক-সম্পাদক) কী বিনা পয়সায় ওই শপিংমলে শপিং করার কোন কার্ড পেয়েছেন? এই ধরনের নিউজ আমার ব্যাপারে বা আমার পরিবারের বিরুদ্ধে হলে আপনারা তো হুমড়ি খেয়ে পড়তেন। আমাদের অপরাধ কী? আমরা মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি। এটাই কী আমাদের অপরাধ? তিনি বলেন, খালেদা জিয়া সবকিছুতে মাফ পায় কেন? উনি যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানিয়েছে, জাতির জনকের খুনীদের মদদ দিয়েছে, সেজন্যই কী তাদের সব অপরাধ সাত খুন মাফ? আমি কোন পত্রিকাতে এটা নিয়ে কোন উচ্চবাচ্য করতে দেখলাম না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগে দেশে একটিও বেসরকারী টিভি চ্যানেল ছিল না। কেউ দেয়ার সাহস দেখায়নি। আমাদের সরকারই সৎ সাহস নিয়ে এত টিভি চ্যানেলের লাইসেন্স দিয়েছে। অনেক পত্রিকার অনুমতিও আমাদের সরকার দিয়েছে। অথচ এসব টিভি চ্যানেল ও পত্রিকায় সাহস নিয়ে খালেদা জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে কিছু লেখার সাহস দেখাতে পারে না কেন? লন্ডনে বসে তারেক রহমান হুমকি দিয়ে বলেছেন- সে নাকি সবকিছু দেখছেন, চিনে রাখছেন। এই হুমকিতেই কী আপনারা লেজ গুটিয়ে বসে আছেন? তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার দুই ছেলের অর্থ পাচারের ঘটনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সিঙ্গাপুরের আদালতে প্রমাণ হয়েছে। আমরা পাচারকৃত কিছু অর্থ দেশে ফেরতও এনেছি। কিন্তু সেসব সত্য রিপোর্ট লেখার যদি আপনাদের এতটুকু সৎ সাহস না থাকে- তবে আপনাদের প্রশ্নের কী জবাব দেব? এ সময় একাত্তর টেলিভিশনের সিইও মোজাম্মেল বাবু তার চ্যানেলসহ জনকণ্ঠের সাহসী ভূমিকার কথা তুলে ধরে বলেন, এর আগে প্রধান বিচারপতির দুর্নীতি ও অনিয়ম নিয়ে সংবাদ প্রকাশের কারণে আমাদের অনেক হুমকি সহ্য করতে হয়েছে। সত্য তথ্য প্রকাশ করায় জনকণ্ঠের সম্পাদক মোহাম্মদ আতিকউল্লাহ খান মাসুদ ও নির্বাহী সম্পাদক স্বদেশ রায়কে আদালত সাজাও দিয়েছে। তাঁরা তো সাজাপ্রাপ্ত আসামি। আমাদেরকেও বর্তমান এ্যাটর্নি জেনারেল নানা হুমকি দিয়ে বলেছেন- আপনারা আগুন নিয়ে খেলছেন, ফল ভাল হবে না। তিনি এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রটেকশন চাইলে শেখ হাসিনা বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন- ‘এ্যাটর্নি জেনারেল এভাবে বলেছে?’ সৌদি আরবে বিএনপি নেতা খালেদা জিয়ার সম্পত্তি পাচারের দায়ে দেশের প্রচলিত আইনে বিচার হবে বলে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের টাকা যারা এভাবে বাইরে নিয়ে গিয়ে বিলাসব্যাসনে ব্যয় করছে, আমার দেশের মানুষকে বঞ্চিত করছে, দেশের মানুষ তাদের বিচার করবে। তিনি বলেন, দেশের আইন অনুযায়ী নিশ্চয় তাঁর বিচার হবে। কারণ এটা হওয়া উচিতও। দেশের মানুষকে কষ্ট দিয়ে বাইরে সম্পত্তি বানানোর কী অধিকার তাঁর আছে, সেটা আমারও প্রশ্ন। এই ব্যাপারে আমি মনে করি, আপনাদের আরও সোচ্চার হওয়া উচিত, জনমত সৃষ্টি করা উচিত। অবশ্যই এর বিচার হবে, এতে কোন সন্দেহ নাই। বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে লন্ডন থেকে দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ চলমান রয়েছে জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনার জন্য ইতোমধ্যে চেষ্টা চালানো হচ্ছে। আজ হোক কাল হোক একদিন না একদিন তাকে আসতেই হবে এবং বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় হতে হবে। এতে কোন সন্দেহ নেই।
×