ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দূতাবাসের ব্রিফিং

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে চীন

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ৮ ডিসেম্বর ২০১৭

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে চীন

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ রোহিঙ্গা নাগরিকদের প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে চীন। এছাড়া রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক খাতে যে প্রভাব পড়ছে তা নিয়েও সচেতন দেশটি। বৃহস্পতিবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে এক অনুষ্ঠানে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী মন্ত্রী ওয়াং ইয়াজুন এসব কথা বলেন। এদিকে রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে মিয়ানমারকে প্রভাবিত করার জন্য চীনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আওয়ামী লীগ। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ১৯তম জাতীয় কংগ্রেসের মূল বিষয়বস্তু বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর সামনে তুলে ধরার জন্য ঢাকার চীনা দূতাবাস বৃহস্পতিবার এক ব্রিফিংয়ের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন চীনের কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী মন্ত্রী ওয়াং ইয়াজুন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কর্নেল (অব) ফারুক খান। এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত মা মিং কিয়াং। অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন বামপন্থী রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের প্রশ্নোত্তর পর্বের মুখোমুখি হয়ে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী মন্ত্রী ওয়াং ইয়াজুন বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে সম্প্রতি বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছে, এতে আমরা সুখী ও সন্তুষ্ট। রোহিঙ্গা সঙ্কটের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক খাতে যে প্রভাব পড়ছে, সে বিষয়ে আমরা সচেতন। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সংলাপ চালিয়ে যেতে হবে। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখাও জরুরী বলে আমরা বিশ্বাস করি। তবে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে আমরা অবগত রয়েছি। সে কারণে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সফর করেছে। মিয়ানমার সফরকালে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে তিন দফা প্রস্তাবও দিয়েছে। অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যে চীনের সহকারী মন্ত্রী বলেন, দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে বাংলাদেশ চীনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। সে কারণে আমরা বাংলাদেশকে শক্তিশালী দেশ হিসেবে দেখতে চাই। আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ ও চীনের জনগণের স্বপ্ন এক ও অভিন্ন। আমরা একে অপরকে সহযোগিতা করে সামনে এগিয়ে যেতে চাই। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির প্রভাবশালী এই নেতা বলেন, আমরা শুধু বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যেই শান্তি ও সহযোগিতার সম্পর্ক দেখতে চাই না, পুরো দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলেই শান্তি ও সহযোগিতা দেখতে চাই। ওয়াং ইয়াজুন চীন সরকারের ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড উদ্যোগ তুলে ধরে বলেন, চীনের ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড উদ্যোগ সফল হলে বাংলাদেশও লাভবান হবে। এই উদ্যোগের ফলে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ঘটবে বলেও তিনি জানান। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী কর্নেল (অব) ফারুক খান বলেন, বাংলাদেশ ও চীনের শীর্ষ নেতৃত্বের চিন্তা ও পরিকল্পনা অভিন্ন। আমরা দুই দেশের নেতৃত্বই জনগণের স্বপ্নপূরণ ও দেশের উন্নয়নে কাজ করে চলেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং এই অঙ্গীকার বিভিন্ন সময়ে ব্যক্তও করেছেন বলে তিনি মন্তব্য করেন। ফারুক খান রোহিঙ্গা সঙ্কট তুলে ধরে বলেন, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকায় এসেছিলেন। তিনি রোহিঙ্গা সঙ্কট পর্যবেক্ষণ করেছেন। চীন বিষয়টি অবগত। সে কারণে রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে মিয়ানমারকে প্রভাবিত করার জন্য চীনের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত মা মিং কিয়াং বলেন, বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে সহযোগিতার সম্পর্ক বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা এই সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। চীনের কমিউনিস্ট পার্টি আগামীতে দেশটির জনগণের জন্য কি ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, সেটা অবহিত করতেই এই ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়েছে বলে তিনি জানান। উল্লেখ্য, চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী মন্ত্রী ওয়াং ইয়াজুন বুধবার তিন দিনের সফরে ঢাকায় এসেছেন। ঢাকায় তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন। আজ শুক্রবার তিনি ঢাকা ত্যাগ করবেন।
×