ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আজ মুক্ত দিবস যেখানে-

প্রকাশিত: ০৪:৪২, ৮ ডিসেম্বর ২০১৭

আজ মুক্ত দিবস যেখানে-

চাঁদপুর নিজস্ব সংবাদদাতা, চাঁদপুর, ৭ ডিসেম্বর ॥ আজ ৮ ডিসেম্বর চাঁদপুর মুক্ত দিবস। পাক হানাদার বাহিনীর কবল থেকে ১৯৭১ সালের এ দিনে চাঁদপুর জেলা মুক্ত হয়েছিল। এদিন সকালে চাঁদপুর সদর থানার সামনে বিএলএফ বাহিনীর প্রধান মরহুম রবিউল আউয়াল কিরণ প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। ১৯৭১ সালের ৭ এপ্রিল চাঁদপুরে দখলদার বাহিনী দু’টি বিমান থেকে বোমা নিক্ষেপের মাধ্যমে প্রথম আক্রমণের সূচনা করে। এরপর থেকে হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের চলে দফায় দফায় গুলি বিনিময়। পরে গঠন করা হয় শান্তিবাহিনী। শান্তিবাহিনী ও পাক হানাদার বাহিনী বিভিন্ন স্থানে চালাতে থাকে বর্বরোচিত অত্যাচার ও হত্যাযজ্ঞ। ৬ ডিসেম্বর যৌথ বাহিনী হাজীগঞ্জ দিয়ে চাঁদপুরে আসতে থাকলে মুক্তিসেনা কর্তৃক হানাদার বাহিনী প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। ভারতের মাউন্টেন ব্রিগেড ও ইস্টার্ন সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা যৌথ আক্রমণ চালায়। নেত্রকোনা নিজস্ব সংবাদদাতা নেত্রকোনা থেকে জানান, আজ ৮ ডিসেম্বর নেত্রকোনা ট্র্যাজেডি দিবস। ২০০৫ সালের এই দিন সকালে জেএমবির আত্মঘাতী জঙ্গীরা বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর জেলা সংসদ কার্যালয়ে নারকীয় বোমা হামলা চালায়। এতে উদীচীর শিল্পী ও সংগঠক খাজা হায়দার হোসেন এবং সুদীপ্তা পাল শেলীসহ আটজন প্রাণ হারান। নিহত অন্যরা হলেন- মোটর গ্যারেজ কর্মচারী যাদব দাস, গৃহিণী রানী আক্তার, মাছ বিক্রেতা আফতাব উদ্দিন, রিক্সা চালক রইছ উদ্দিন, ভিক্ষুক জয়নাল আবেদীন ও আত্মঘাতী কিশোর কাফি। প্রতিবছরের মতো এবারও দিনটি বিস্তারিত কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে পালন করা হচ্ছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টাফ রিপোর্টার ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে জানান, ৮ ডিসেম্বর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া মুক্ত দিবস। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ব্রাহ্মণবাড়িয়া একটি স্মরণীয় নাম। মূলত যুদ্ধের ৯টি মাস সীমান্ত অঞ্চল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন স্থানে পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ হয়। এদিন পাকহানাদার মুক্ত হয় সীমান্তবর্তী এ জেলা। ২৫ মার্চের কালোরাতে পাকিস্তানী বাহিনীর নৃশংস হামলার পর ৮ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত হবার পূর্ব পর্যন্ত পুরো জেলা ছিল রণাঙ্গন এলাকা। ১৯৭১ সালের এদিনে মুক্তি পাগল জনতা স্বজন হারানো ব্যথা ভুলে গিয়ে জয় বাংলা সেøাগানে আকাশবাতাস মুখরিত করে তোলে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার মন্দভাগ থেকে সিলেট জেলার মনতলা সীমান্ত পর্যন্ত পুরো এলাকায় নয় মাসব্যাপী হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধ হয়েছে। চূড়ান্ত যুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে ৭১ সালের ৩০ অক্টোবর সম্মুখ যুদ্ধের মাধ্যমে মুকন্দপুর মুক্ত হয়, এরপর কসবা ও আখাউড়া মুক্ত হয়। মীরসরাই নিজস্ব সংবাদদাতা মীরসরাই চট্টগ্রাম থেকে জানান, ১৯৭১ এর ৮ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের এই অঞ্চল মীরসরাই হানাদার মুক্ত ঘোষিত হয়। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ শোনার পর থেকেই উপজেলার সর্বস্তরের জনতা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠন শুরু করে। মীরসরাইয়ে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয় ২৫ মার্চ রাত থেকেই। চট্টগ্রামের দিকে পাক হানাদারদের আগমন প্রতিরোধ করতে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ওই রাতে উড়িয়ে দেয়া হয় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শুভপুর ব্রিজ। তারপর মীরসরাই উপজেলা সদরের অছি মিয়ার পুল উড়িয়ে দিলে ১৩ দিন আটকে থাকে হানাদার দল। এ সময়ের মধ্যে চট্টগ্রামের মুক্তিবাহিনী রণপ্রস্তুতি নেয়। ৮ ডিসেম্বর ভোর থেকে মুক্তিযোদ্ধারা মীরসরাই উপজেলা সদরের দিকে এগোতে থাকেন। ভালুকা নিজস্ব সংবাদদাতা ভালুকা ময়মনসিংহ থেকে জানান, আজ ৮ ডিসেম্বর ভালুকা মুক্ত দিবস। ১৯৭১ এর এই দিনে আফসার বাহিনীর আক্রমণে পাক ও রাজাকার বাহিনী ভালুকা ঘাঁটি ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়। ফলে এই দিনটিকে ভালুকার মুক্তিকামী জনতা ভালুকা মুক্ত দিবস হিসেবে উদ্যাপন করে আসছে। ৭১-এর ৭ ডিসেম্বর মধ্যরাতে আফসার বাহিনীর অধিনায়ক মেজর আফসার উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে ভালুকা সদরে পাক ও রাজাকার বাহিনীর ঘাঁটির তিন দিক থেকে প্রচ- আক্রমণ শুরু করলে পাক সেনারা এক পর্যায়ে ভালুকা ঘাঁটি ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। এ সময় মুক্তিযোদ্ধারা ভালুকা থানা প্রাঙ্গণে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে। দৌলতপুর নিজস্ব সংবাদদাতা দৌলতপুর কুষ্টিয়া থেকে জানান, দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র সংগ্রামের পর আজ ৮ ডিসেম্বর কুষ্টিয়ার দৌলতপুর হানাদার মুক্ত হয়। ১৯৭১ সালের এই দিনে দৌলতপুরকে শত্রু মুক্ত করে থানা চত্বরে বিজয় পতাকা ওড়ানোর মধ্য দিয়ে মুক্তিকামী বীর সূর্য সন্তানেরা দৌলতপুরকে হানাদার মুক্ত করেন। দৌলতপুরকে হানাদার মুক্ত করতে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাক সেনাদের সম্মুখ যুদ্ধসহ ছোট-বড় ১৬টি যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এ সকল যুদ্ধে ৩৫ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ কয়েক শ’ নারী-পুরুষ শহীদ হন। ৮ ডিসেম্বর সকালে উপজেলার আল্লার দর্গায় পাক সেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে শহীদ হোন বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিক। মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র প্রতিরোধের মুখে টিকতে না পেরে পিছু হটতে বাধ্য হয় পাক সেনারা। কালকিনি নিজস্ব সংবাদদাতা কালকিনি মাদারীপুর থেকে জানান, কালকিনি উপজেলা হানাদার মুক্ত দিবস ৮ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে মুক্তিযোদ্ধারা ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন পাকিস্তানী হানাদারদের ওপর। এতে করে পাকহানাদার বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পরাজয় বরণ করে। সেদিন তারা মুক্তিযোদ্ধাদের তোপের মুখে পড়ে কালকিনি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা পরিষদের সাবেক কমান্ডার মালেকুজ্জামান মালেক বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের পুরো সময়জুড়ে কালকিনি উপজেলা ছিল পাকহানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার, আলবদরদের হত্যা, লুট, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণের ঘটনায় ক্ষত-বিক্ষত। কালকিনি উপজেলা হানাদার মুক্ত করতে মুক্তিযোদ্ধারা ৯ মাস উপজেলার বিভিন্ন স্থানে হানাদার বাহিনীর সঙ্গে কয়েকটি মুখোমুখি যুদ্ধসহ ১৫টি অভিযান চালায়। যেমন উপজেলার প্রধান কেন্দ্রবিন্দু লালপোল পাকহানাদার বাহিনীর শক্ত ঘাঁটিতে মুক্তিযোদ্ধারা হামলা চালায়।
×