ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

শিল্পকলায় পার্বত্যমেলা ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা

প্রকাশিত: ০৪:৩৩, ৮ ডিসেম্বর ২০১৭

শিল্পকলায় পার্বত্যমেলা ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হেমন্তের ঝলমলে রোদেলা দুপুরে যেন একখন্ড- পাহাড়ী জনপদ হয়ে ওঠে শিল্পকলা একাডেমির উন্মুক্ত প্রান্তর। চারপাশে চোখে পড়ে পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর তৈরি নানা পণ্যের সমাহার। সেই সঙ্গে দেখা যায়, জুমচাষের মাধ্যমে জন্মানো নানা ফসল ও ফল। সন্ধ্যায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় ছিল আদিবাসীদের বৈচিত্র্যময় নৃত্য-গীতের উপস্থাপনা। এভাবেই রাজধানীর সমতলভূমি হয়ে ওঠে পার্বত্যভূমি। আর এমন দৃশ্যের উপলক্ষ ছিল আন্তর্জাতিক পর্বত দিবসের আয়োজন। আগামী ১১ ডিসেম্বর এ পর্বত দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার হলো পাঁচ দিনব্যাপী পার্বত্য মেলা ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এ মেলার আয়োজন করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়। প্রধান অতিথি হিসেবে মেলার উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি র.আ.ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, সংসদ সদস্য ফিরোজা বেগম চিনু প্রমুখ। প্রধান অতিথির বক্তব্যে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, পুরো বাংলাদেশটাই যেন এক ফুলের বাগান। সেই বাগানে যেমন আছে নানা বর্ণ ও সৌরভের ফুল তেমনি এই দেশে আছে বাঙালী, পাহাড়ী, হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ নানা জাতিসত্তা। এমন সম্প্রীতিময় সহাবস্থান গোটা পৃথিবীর কাছেই এক বিস্ময়। আর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু রচনা করেছিলেন বহু জাতিসত্তার সম্মিলিত অবস্থানের এই বাগান। মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করা অপশক্তি সেই বাগানকে আজ তছনছ করে দিতে চায়। সম্প্রীতির ঐক্যে রুখে দিতে হবে সেই অপশক্তিকে। সন্ধ্যায় একাডেমির নন্দন মঞ্চে ছিল পার্বত্যবাসীদের পরিবেশিত সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। নৃত্য-গীতে সাজানো এ আয়োজনে অংশ নেয় বান্দরবানের শিল্পীরা। শুরুতেই বাদ্যযন্ত্র পরিবেশন করে মারমা লোকশিল্পীরা। প্রদীপ নৃত্য পরিবেশন মারমা ছিমখেয়াক আক্কা। বোতল নৃত্য পরিবেশন করেন ত্রিপুরা কাথারক। ছিল ম্রো যুগলের নৃত্য পরিবেশনা। পরিবেশিত হয়েছে খুমি গান এবং সম্প্রীতি ও তঞ্চঙ্গ্যা নৃত্য। আজ শুক্রবার মেলার দ্বিতীয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা উপস্থাপন খাগড়াছড়ির শিল্পীরা। পার্বত্য এলাকার মানুষের জীবন-সংস্কৃতি, পোশাক-পরিচ্ছেদ, ইতিহাস-ঐতিহ্যকে সমতলের মানুষের মাঝে পরিচয় করিয়ে দিতে এই পার্বত্য মেলার আয়োজন করা হয়েছে। মেলায় ঠাঁই পেয়েছে আদিবাসীদের তৈরি খামি, শাল, ফুলদানি, গামছা, মণিপুরী শাড়ি, ফতুয়াসহ নানা পণ্যের পসরা। সব মিলিয়ে একাডেমির মাঠে সজ্জিত হয়েছে ৯২টি স্টল। ১১ ডিসেম্বর চলমান মেলা প্রতিদিন ১০টা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকবে। আর নন্দন মঞ্চে প্রতিদিনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হবে সন্ধ্যা ছয়টায়। চলবে রাত দশটা পর্যন্ত। সিগ্রাফ ঢাকা চ্যাপ্টারের যাত্রা শুরু ॥ তথ্য-প্রযুক্তির যুগে এ্যানিমেশন, কম্পিউটার গ্রাফিক্স এবং ইন্টার‌্যাক্টিভ টেকনিক ব্যবহার হচ্ছে নানা মাধ্যমেই। শুধু চলচ্চিত্র নয়, গবেষণা, বিজ্ঞান, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানা মাধ্যমে দেখা যায় এ্যানিমেশনের ব্যবহার। পৃথিবীর নানা দেশে প্রযুক্তির উৎকর্ষ ও বিকাশে নিত্য-নতুন মাধ্যম সৃষ্টি হয়েছে। তৈরি হয়েছে অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তি। বিশ্বের নানা দেশে তথ্য-প্রযুক্তির কাজ করছে এজিএম সিগ্রাফ। এবার বাংলাদেশে শুরু হলো প্রতিষ্ঠানটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা। বৃহস্পতিবার বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে এক আয়োজনের মধ্য দিয়ে এ প্রতিষ্ঠানের উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। ‘সিগ্রাফ ঢাকা চ্যাপ্টার’-এর উদ্বোধনী উপস্থিত ছিলেন অস্কারজয়ী বাংলাদেশী তরুণ নাফিস বিন জাফর নাফিস। তিনিই ছিলেন এ অনুষ্ঠানের প্রধান বক্তা। গবেষক, শিল্পী, ডেভেলপার, চলচ্চিত্র নির্মাতা, বিজ্ঞানী ও ব্যবসায়ীদের জন্য আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এজিএম সিগ্রাফ চালু করেছে। এর আগে সিগ্রাফের বিভিন্ন আয়োজনে বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন বাংলাদেশী এই তরুণ। অনুষ্ঠানে এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন অগনিরথ স্টুডিওস-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও জুবায়ের কাওলিন। অনুষ্ঠানে আয়োজকেরা জানান, সিগ্রাফ একটি নিউইয়র্ক ভিত্তিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। এটি কম্পিউটার গ্রাফিক্স এবং ইন্টার‌্যাক্টিভ টেকনিক নিয়ে কাজ করে। ১৯৬৯ সালে এ্যান্ডি ভ্যান ড্যাম এটি প্রতিষ্ঠা করেন। এসিএম সিগ্রাফ বার্ষিক সিগ্রাফ সম্মেলনের আয়োজন করে। এতে কম্পিউটার পেশাজীবীরা অংশগ্রহণ করেন। লসএ্যাঞ্জেলেস, লন্ডন, হংকং, ম্যানিলা, বাঙ্ককসহ বিশ্বের বিভিন্ন শহরে থাকা সিগ্রাফ চ্যাপ্টারের সঙ্গে সংযুক্ত হতে যাচ্ছে সিগ্রাফ ঢাকা চ্যাপ্টার। অনুষ্ঠানে নাফিজ বিন জাফর এ্যানিমেশন ও কম্পিউটার গ্রাফিক্স এবং ইন্টার‌্যাক্টিভ টেকনিক ব্যবহার নিয়ে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, তথ্য-প্রযুক্তির উন্নয়ন ও বিকাশে বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে। অনেকেই ভাল কাজ করছেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, বাংলাদেশ একদিন প্রযুক্তি খাতে সারাবিশ্বেই দারুণ সুনাম অর্জন করবে। বাংলাদেশ থিয়েটারের বর্ষপূর্তির উৎসব ॥ সময়ের স্রোতধারায় প্রতিষ্ঠার ৩১ বছর পেরিয়ে ৩২ বছরে পদার্পণ করল নাট্যদল বাংলাদেশ থিয়েটার। ১৯৮৭ সাল থেকেই নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে নিরবচ্ছিন্ন নাট্যচর্চা করে যাচ্ছে দলটি। প্রতিষ্ঠার ৩১ বছর পূর্ণ ও ৩২ বছরে পদার্পণে তিন দিনব্যাপী বর্ষপূর্তি উৎসবের আয়োজন করেছে দলটি। নাচ, গান, আবৃত্তি, নাটকসহ নানা আয়োজনে সাজানো হয়েছে এই উৎসব। বৃহস্পতিবার বিকেলে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনের লবিতে এই উৎসবের উদ্বোধন করেন একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। প্রধান অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আতাউর রহমান। সভাপতিত্ব করেন অভিনয় শিল্পী আব্দুল আজিজ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন নাট্য দল ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মীরা। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে ফকির লালন সাঁই ও হাছন রাজার গানসহ বিভিন্ন ধরনের গান পরিবেশন করে শিল্পীরা। এ সময় নাচ ও আবৃত্তির আলোকচ্ছটায় উদ্বোধনী মঞ্চকে শৈল্পিক করে তোলেন শিল্পীরা। সব শেষে মঞ্চস্থ হয় বাংলাদেশ থিয়েটার প্রযোজিত নাটক ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’। আব্দুল আজিজের নবনাট্যরূপ ও নির্দেশনায় নাটকটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন খন্দকার শাহ আলম, আব্দুল আজিজ, শফি কামাল, মাসুদা খান, নবীয়া ইসলাম রিতা, ফারজানা ফাতেমা চৌধুরী সুমি, ফিরোজ শাহী, আখতার মাহমুদ, খালিদ মাহমুদ শাওন, এস এম নাসির উদ্দিন প্রমুখ। গ্যোয়টে ইনস্টিটিউটে রাস নৃত্য পরিবেশনা ॥ সমকালীন ধারার নৃত্য পরিবেশনায় মুগ্ধ হলো দর্শক। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একঝাঁক পরিবেশন করল ‘রাস’ শিরোনামের নাচ। বৃহস্পতিবার বিকেল ও সন্ধ্যায় দুই পৃথক সময়সূচী জার্মান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে গ্যোয়টে ইনস্টিটিউটে এ পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন গ্যোয়টে ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. কিএর্স্টেন হাকেনব্রোক। রাস শিরোনামের নৃত্যে উঠে আসে বর্তমান সমাজে একজন নৃত্যশিল্পী এবং একজন মানুষ হিসেবে টিকে থাকা নিত্যদিনের সংগ্রামের প্রতিরূপ। প্রযোজনাটিতে উপস্থাপিত হয় সমকালীন সমাজব্যবস্থায় একজন নৃত্যশিল্পী কি কি ধরনের প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয় সেই চিত্র। সেই বাস্তবতাকে ধারণ করে উপস্থাপিত ১০ তরুণ বাংলাদেশী নৃত্যশিল্পীর একক ও দলীয় পরিবেশনা।
×