ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

পরীক্ষামূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে ঢাবির সামনের পরীক্ষাতেই

প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে পরীক্ষা কেন্দ্রে আর্চওয়ে মেটাল ডিটেক্টর বসবে

প্রকাশিত: ০৪:৩২, ৮ ডিসেম্বর ২০১৭

প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে পরীক্ষা কেন্দ্রে আর্চওয়ে মেটাল ডিটেক্টর বসবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে দেশে প্রথমবারের মতো পরীক্ষাকেন্দ্রগুলোতে আর্চওয়ে মেটাল ডিটেক্টর বসানোর প্রস্তুতি চলছে। পরীক্ষামূলকভাবে সর্বপ্রথম আর্চওয়ে মেটাল ডিটেক্টর বসানো হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। আগামী ভর্তি পরীক্ষায়ই পদক্ষেপ কার্যকর করা হচ্ছে। শুধু আর্চওয়ে নয়, পরীক্ষার্থীদের পাশাপাশি পরীক্ষাকেন্দ্রে দায়িত্বপালনকারী শিক্ষকসহ অন্যান্যের এবং যাতায়াতকারীদেরও সব ধরনের ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস বন্ধের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত শিক্ষকদের শাস্তিস্বরূপ তাদের চাকরিচ্যুত করা, অন্যান্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা, ছাত্রদের আজীবনের জন্য ছাত্রত্ব বাতিলসহ জড়িতদের ফৌজদারি আইনে কড়া শাস্তি নিশ্চিত করার সিদ্ধান্তের বিষয়ে আলোচনা চলছে। প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িতদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক সাজা নিশ্চিত করাসহ নানা পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যেই সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিটি ইউনিটকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা পৃথক সেল গঠন করে বিশেষভাবে তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের মাধ্যমে জাতির মেরুদ- ভেঙ্গে দেয়ার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করতে সিআইডি, ডিবি ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা সারাদেশে গোপনে অভিযান চালাচ্ছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে আরও জানা গেছে, বিশেষ নিরাপত্তা সেল গঠনের পর বিজি প্রেস থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ হয়ে গেছে। দ্বিতীয় দফায় পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষাকেন্দ্রে সব ধরনের ইলেকট্রনিক সামগ্রী ব্যবহার কড়াভাবে নিষিদ্ধ করা হয়। এর ফলে পরীক্ষার্থীদের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু শিক্ষকসহ অন্যদের অনেকেই এমন বিধি নিষেধের বাইরে রয়েছেন। এজন্য পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে মোবাইল ফোনে প্রশ্নপত্রের ছবি তুলে বাইরে পাঠানোর মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটছে। ডিবি পুলিশ, র‌্যাব, সিআইডি ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় ৪৬ জন গ্রেফতার হয়। আর চলতি বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা চলার সময় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ নানা অনিয়মের দায়ে ১৪ ছাত্রকে সিআইডির কাছে হস্তান্তর করে। উদ্ধার হয় বিপুল পরিমাণ ইলেকট্রনিক ডিভাইস। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ৫ জন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়। সিআইডির সংঘবদ্ধ অপরাধ বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার ও মুখপাত্র মোল্লা নজরুল ইসলাম গ্রেফতারকৃতদের জবানবন্দীর বরাত দিয়ে জনকণ্ঠকে জানান, ফেসবুক, ভাইবার, টুইটার, হোয়াটসএ্যাপ ও ইমোসহ বিভিন্ন প্রযুক্তিগত যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া ও আসল প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনাগুলো ঘটছে। এখন পর্যন্ত এসএসসি, এইচএসসি, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষা এবং একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পে নিয়োগ পরীক্ষার ভুয়া প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটার তথ্য মিলেছে। তিনি আরও জানান, ফাঁসকারীরা জঙ্গী স্টাইলে ছোট ছোট গ্রুপে কাটআউট পদ্ধতিতে কয়েকটি ধাপে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে। পরীক্ষাকেন্দ্রে দায়িত্বপালনকারীদের মধ্যে অসাধুরা মোবাইল ফোনে স্ক্রীনশটের মাধ্যমে প্রশ্নপত্রের ছবি তুলে তা বাইরে পাঠিয়ে দেয়। এসব প্রশ্নের উত্তর প্রস্তুত করে একটি গ্রুপ। আরেকটি গ্রুপ মোবাইল ফোনে সেই উত্তর পড়ে শোনায়। শোনার জন্য চুক্তিবদ্ধ থাকা পরীক্ষার্থীদের কানের ভেতরে অতিসুক্ষ্ম একটি ডিভাইস থাকে। যা বাইর থেকে দেখা যায় না। সেই ডিভাইস দিয়ে শুনে শুনে উত্তর লিখে পরীক্ষার্থীরা। মোল্লা নজরুল বলছেন, এজন্য পরীক্ষাকেন্দ্রের ভেতরে সবার সব ধরনেই ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার বন্ধ ও পরীক্ষাকেন্দ্রের প্রবেশ পথগুলোতে আর্চওয়ে মেটাল ডিটেক্টর বসানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান জনকণ্ঠকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে আগামী ভর্তি পরীক্ষায় প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে পরীক্ষার কেন্দ্রগুলোতে আর্চওয়ে মেটাল ডিটেক্টর বসানো হচ্ছে। যাতে কোন পরীক্ষার্থী ভেতরে কোন প্রকার ইলেকট্রনিক ডিভাইস লুকিয়ে নিয়ে যেতে না পারে। এছাড়া শিক্ষকসহ অন্যদেরও পর্যায়ক্রমে পরীক্ষাকেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার বন্ধের বিষয়ে আলোচনা চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অসাধু উপায়ে ভর্তি হওয়াদের বিষয়ে তদন্ত চলমান থাকবে। যারা অসাধু পন্থায় ভর্তি হয়েছে, আইন মোতাবেক তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। শিক্ষকসহ অন্য কেউ জড়িত থাকলেও তাদের ক্ষেত্রেও সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×