ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কয়েকদিনে শতাধিক কর্মী আটক

মালয়েশিয়ায় রি-হায়ারিং কর্মসূচীর মধ্যে গ্রেফতার আতঙ্ক

প্রকাশিত: ০৪:৩২, ৮ ডিসেম্বর ২০১৭

মালয়েশিয়ায় রি-হায়ারিং কর্মসূচীর মধ্যে গ্রেফতার আতঙ্ক

ফিরোজ মান্না ॥ আর মাত্র ২৩ দিন বাকি। এই সময়ের মধ্যে মালয়েশিয়ায় কর্মীরা ‘রি-হায়ারিং’ কর্মসূচীর আওতা বৈধ হওয়ার সুযোগ পাবেন। যারা সুযোগ নিতে পারবেন না তাদের দেশে ফিরতে হবে। এ জন্য মালয়েশিয়া পুলিশের ভয় উপেক্ষা করে মালয়েশিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনে কর্মীরা ভিড় জমিয়েছেন। কর্মীদের কাগজপত্রসহ পাসপোর্ট নবায়ন করতে হাইকমিশন অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ করেছে। কিন্তু কর্মীরা হাইকমিশনে আসার পথে মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন পুলিশ গত কয়েকদিনে শতাধিক কর্মীকে আটক করে নিয়ে গেছে। যদিও হাইকমিশনের সঙ্গে ইমিগ্রেশন বিভাগের বৈঠকের পর মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন বিভাগ কাউকে আটক করবে না বলে কথা দিয়েছিল। এ কারণে হাইকমিশন বিভিন্ন এলাকায় কর্মীদের রি-হায়ারিং কর্মসূচীতে যোগ দিতে প্রচার চালিয়েছে। আগামী ৩১ ডিসেম্বর রি-হায়ারিং কর্মসূচীর শেষ দিন। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, রি-হায়ারিং কর্মসূচীর সময় আছে মাত্র ২৩ দিন। এই সময়ের মধ্যে হাইকমিশন মনে করে, ২ লাখের বেশি কর্মী রি-হায়ারিং কর্মসূচীর আওতায় আসার সুযোগ পাবেন। যদি এভাবে গ্রেফতার করা হয়, তাহলে এ সংখ্যা অনেক কম হবে। মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ রি-হায়ারিং কর্মসূচীর সুযোগ দিয়েছে। কিন্ত আবার গ্রেফতার অভিযানও চালিয়ে যাচ্ছে। গ্রেফতার অভিযানে যাতে কোন কর্মী হাইকমিশনে না আসতে পারে তার কৌশল হতে পারে। গত কয়েক দিনে রাজধানী কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশীসহ কয়েক শ’ অবৈধ অভিবাসীকে আটক করেছে দেশটির পুলিশ। প্রথমে অভিযান চালানো হয় বিনতাং জালান আলো এলাকায়। পরে অভিযানের সীমা বাড়িয়ে বাংলাদেশ হাইকমিশন পর্যন্ত নিয়ে যায়। মালয়েশিয়ার জাতীয় নিবন্ধন বিভাগ ডিবিকেএল বলেছে, জেনারেল অপারেশন সোর্স ও মালয়েশিয়ার কোম্পানি কমিশনের সমন্বয়ে বিভিন্ন সংস্থার মোট ২শ’ ৬৭ জন কর্মকর্তা অংশ নেন এ অভিযানে। দেশটির অভিবাসন বিভাগের মহাপরিচালক দাতুক সেরি মোস্তফা আলী জানান, ৯শ’ ১৫ জন অভিবাসীকে লক্ষ্য করে অভিযান চালানো হয়। আটক ব্যক্তিরা বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, ভারত, ওমানসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিক। যৌথ এ অভিযানে ৪শ’ ৪০ অবৈধ অভিবাসীকে আটক করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৩শ’ ৮৯ পুরুষ, ৪৭ নারী ও চার শিশু রয়েছে। আটককৃতদের মধ্যে বাংলাদেশের এক শ’ জন কর্মী রয়েছে। নতুন করে আটক অভিযানে শতাধিক বাংলাদেশী রয়েছেন। এদিকে বিএমইটি জানিয়েছে, মালয়েশিয়া অবৈধ কর্মীদের বৈধতা দেয়ার জন্য এনফোর্সমেন্ট কার্ড (ই-কার্ড) দেয়ার সময় শেষ হলেও রি-হায়ারিং কর্মসূচী চলমান রেখেছে কর্তৃপক্ষ। এ বছরের গোড়ার দিক থেকে অক্টোবর পর্যন্ত রি-হায়ারিং কর্মসূচীর আওতায় বাংলাদেশের ৩ লাখ ২০ হাজার কর্মী নিবন্ধন করেছে। ডিসেম্বর পর্যন্ত আরও ২ লাখের মতো কর্মী নিবন্ধিত হতে পারবেন। ই-কার্ডের বিষয়ে হাইকমিশনের পক্ষ থেকে দু’দফা বৈঠকের পরও মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগ সাফ জানিয়ে দিয়েছে, এ কর্মসূচীর আর সময় বাড়ানো হবে না। এ বিষয়ে আর কোন আলোচনার সুযোগ তারা দেয়নি। এখন আমরা জোর দিয়েছি রি-হায়ারিং কর্মসূচীর ওপর। ফলে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালানো হয়। এতে কর্মীরা সাড়া দিয়ে নিবন্ধন করছে। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ২ লাখের বেশি কর্মী নিবন্ধনের আওতায় আসতে পারবেন। মালয়েশিয়ার মালিক পক্ষ এ কর্মসূচীতে সহযোগিতা দিচ্ছে। তারাও কোন অবৈধ কর্মী দিয়ে কাজ করাতে চান না। মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশন সূত্র জানিয়েছে, ই-কার্ড কর্মসূচীতে নিবন্ধিতদের মধ্যে ৫৭ শতাংশই বাংলাদেশের। অন্য সোর্স কান্ট্রি থেকে বাংলাদেশের কর্মীরা বেশি সংখ্যক কর্মী ই-কার্ডের আওতায় এসেছেন। কিছু কর্মী দালাল ও মালিকদের কারণে ই-কার্ড পাননি। তাদেরকেই পুলিশ আটক করছে। রি-হায়ারিং কর্মসূচীতে নিবন্ধিতদের সংখ্যা ৩ লাখের বেশি। যেহেতু বাংলাদেশীরা নিবন্ধনের সুযোগ নিচ্ছেন, তাই তারা যেন ভয় ভীতি ছাড়াই এই কর্মসূচীর সুযোগ নিতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে মালয়েশিয়ার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে হাইকমিশন। হাইকমিশনের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানোর পর মালয়েশীয় কর্তৃপক্ষ মালিকদের প্রতি নির্দেশ জারি করেছে, যারা রি-হায়ারিং কর্মসূচীর সুযোগ নিতে চান, তাদের যেন অনুমতিপত্র দেয়া হয়। এই অনুমতিপত্র হাতে থাকলে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করবে না। অন্যদিকে রি-হায়ারিংয়ের পাশাপাশি প্রবাসীদের মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) আবেদন জমা নেয়া হচ্ছে। মালয়েশিয়ার বিভিন্ন প্রদেশে অনেক অবৈধ কর্মী কাজ করছেন, তাদের ভিসা ও পাসপোর্ট তৈরির জন্য এ কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। সরাসরি হাইকমিশনে গিয়ে পাসপোর্ট করতে হবে। কোন দালালের মাধ্যমে গেলে পাসপোর্ট পাওয়া যাবে না বলে হাইকমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগ গত ৩০ জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশী ১৯ হাজার অবৈধ কর্মীকে আটক করা হয়েছে। একই সঙ্গে দেশটির ৪২৭ জন নিয়োগকারীকেও আটক করা হয়েছিল। নিয়োগকর্তারা পরবর্তীতে জামিনে মুক্ত হয়েছেন। আটক রয়েছেন শুধু কর্মীরা। এই কর্মীরা জেলখানায় মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন। চলতি বছর ৩০ জুন প্রবাসী কর্মীদের ই-কার্ড নিবন্ধন কর্মসূচী শেষ হওয়ার পর দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগ আটক অভিযান শুরু করে। টানা চার মাস এই অভিযান চালানো হয়। অভিযানে বিভিন্ন দেশের প্রায় ৩০ হাজার কর্মীকে আটক করা হয়েছিল। অনেক দেশের কর্মীদের কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে মুক্ত করে দেশে ফিরিয়ে নিয়েছে। মুক্তি পায়নি বাংলাদেশের কর্মীরা।
×