ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দুইজনের মৃত্যুদন্ড-ও ছয়জনের যাবজ্জীবন বহাল

প্রকাশিত: ০৪:৩১, ৮ ডিসেম্বর ২০১৭

দুইজনের মৃত্যুদন্ড-ও ছয়জনের যাবজ্জীবন বহাল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কমার্স কলেজের ছাত্র ও জাসদ ছাত্রলীগের ঢাকা মহানগর নেতা কামরুল ইসলাম মোমিন হত্যা মামলায় দুইজনের মৃত্যুদন্ড- ও ছয়জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড- বহাল রেখেছে হাইকোর্ট। একইসঙ্গে এ মামলার অন্যতম আসামি ওসি রফিক মৃত্যুবরণ করায় তাকে এ মামলা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। মৃত্যুদ- প্রাপ্ত দুজন হলো সাখাওয়াৎ হোসেন জুয়েল ও জিয়া ওরফে তারেক। তারা দুজনই পলাতক। যাবজ্জীবন প্রাপ্তরা হলে হাবিবুর রহমান তাজ, জাফর আহমেদ, মনির হাওলাদার, ঠোঁট উঁচা বাবু, আসিফুল হক জনি ও শরিফ উদ্দিন। এদের মধ্যে মনির, জনি, জাফর ও শরীফ পলাতক। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তদের ২৫ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়েছে। জরিমানার অর্থ দিতে ব্যর্থ হলে তাদের আরও ছয় মাস করে কারাভোগ করতে হবে। অন্যদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাপেক্সের সঙ্গে কানাডাভিত্তিক আন্তর্জাতিক কোম্পানি নাইকোর ও পেট্রোবাংলার সঙ্গে নাইকোর গ্যাস সরবরাহ চুক্তি অবৈধ ঘোষণা করে দেয়া হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে শুনানি আগামী ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত মুলতবি করেছে আপীল বিভাগ। বৃহস্পতিবার আপীল বিভাগ ও হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ এ আদেশ প্রদান করেছেন। কামরুল ইসলাম মোমিন হত্যা মামলায় দুইজনের মৃত্যুদন্ড ও ছয়জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড- বহাল রেখেছে হাইকোর্ট। ডেথ রেফারেন্স ও আপীলের শুনানি নিয়ে বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহ ও বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত দুই আসামিসহ মামলার ৬ আসামি এখনও পলাতক রয়েছেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল ড. মোঃ বশিরউল্লাহ , সহকারী এ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ ও নির্মল কুমার দাস। এদিকে হাইকোর্টের রায়ের পর মোমিনের বড় ভাই সামসুল ইসলাম সুমন সাংবাদিকদের বলেন, ‘ন্যায়বিচার পেয়েছি। আমরা বারবারই পুলিশ প্রশাসন দ্বারা প্রতারিত হয়েছি। তারা মামলাটিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে চেষ্টা করেছিল। এখন পর্যন্ত পুলিশ প্রশাসনের কাছ থেকে কোন সহযোগিতা পাইনি। অধিকাংশ আসামি এখনও পলাতক’। সুমন বলেন, ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী তাজের বাহিনী এখনও প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করছে। ফাঁসির আসামিদের গ্রেফতারে বারবার থানায় গিয়েও কোন ওয়ারেন্ট বের করতে পারিনি’। আসামিরা আপীল করলে সর্বোচ্চ আদালতেও এ রায় বহাল থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন মোমিনের ভাই। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি একেএম রফিকুল ইসলাম এ মামলার প্রধান আসামি ছিলেন। তিনি কারাবন্দী অবস্থায় ২০১৫ সালের ২২ ডিসেম্বর মারা যান। এ কারণে মামলাটি বহুল আলোচিত। ২০০৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর খুন হন কলেজ ছাত্র মোমিন। এ ঘটনায় ওইদিনই নিহতের পিতা আবদুর রাজ্জাক বাদী হয়ে ওসি রফিকসহ ২৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন এ মামলায় ওসি রফিককে আসামির তালিকা থেকে বাদ দিয়েছেন। ২০০৭ সালের ১৩ মে অভিযোগপত্র দাখিল করে সিআইডি। এর বিরুদ্ধে বাদী নারাজি আবেদন দিলে ডিবিকে তদন্তের দায়িত্ব দেয় আদালত। ডিবিও তদন্ত শেষে ওসি রফিককে বাদ দিয়ে ২০০৮ সালের ২ মার্চ অভিযোগপত্র দেয়। এরপর বিচার বিভাগীয় তদন্ত হয়। ২০০৮ সালের ৩০ অক্টোবর দেয়া এ তদন্তের রিপোর্টের ভিত্তিতে ওসি রফিকসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়া হয়। ওই বছরের ১১ নবেম্বর এ অভিযোগপত্র গৃহীত হয়। এরপর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৩-এ ২০০৯ সালের ৫ অক্টোবর অভিযোগ গঠন করা হয়। পরবর্তীতে মামলাটি দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনাল-৪-এ স্থানান্তর করা হয়। এ আদালতে ওসি রফিকের বিরুদ্ধে নতুন করে অভিযোগ গঠন করা হয় ২০১১ সালের ২ জানুয়ারি। এ আদালতেই বিচার শেষে ২০১১ সালের ২০ জুলাই রায় দেয়া হয়। রায়ে ওসি রফিকসহ তিনজনকে মৃত্যুদ-- ও পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী হাবিবুর রহমান তাজসহ ৬ জনকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেয়া হয়। এরপর নি¤œ আদালত থেকে ফাঁসি অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স পাঠানো হয় হাইকোর্টে। পাশাপাশি কারাগারে থাকা আসামিরা আপীল করেন। এ আপীল ও ডেথ রেফারেন্সের ওপর ১২ নবেম্বর হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়। ওসি রফিক মারা যাওয়ায় মামলায় মৃত্যুদন্ড-প্রাপ্ত আসামির সংখ্যা এখন দুজন। এরা হলেন-সাখাওয়াত হোসেন জুয়েল ও তারেক ওরফে জিয়া। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তরা হলেন-হাবিবুর রহমান তাজ, জাফর আহমেদ, মনির হাওলাদার, ঠোঁট উঁচা বাবু, আসিফুল হক জনি ও শরিফ উদ্দিন। নাইকোর রায় স্থগিতের শুনানি ১১ জানুয়ারি ॥ রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাপেক্সের সঙ্গে কানাডাভিত্তিক আন্তর্জাতিক কোম্পানি নাইকোর ও পেট্রোবাংলার সঙ্গে নাইকোর গ্যাস সরবরাহ চুক্তি অবৈধ ঘোষণা করে দেয়া হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে শুনানি আগামী ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত মুলতবি করেছে আপীল বিভাগ। রায়ের বিরুদ্ধে করা আপীল শুনানি ২০১৮ সালের ১১ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। বৃহস্পতিবার ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মোঃ আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপীল বিভাগের বেঞ্চ এই আদেশ দেয়। আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার রোকন উদ্দীন মাহমুদ ও ব্যারিস্টার তানজীব-উল আলম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এর আগেও এ বিষয়ে দু’দফা শুনানি মুলতবি করে আদালত।
×