ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বগুড়ায় নব্য জেএমবির ৪ দুর্ধর্ষ জঙ্গী গ্রেফতার,অস্ত্র উদ্ধার

রাজধানীতে বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা নস্যাত

প্রকাশিত: ০৪:৩০, ৮ ডিসেম্বর ২০১৭

রাজধানীতে বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা নস্যাত

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস ॥ উগ্র জঙ্গীগোষ্ঠী নব্য জেএমবি রাজধানী ঢাকায় আবার বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা করেছিল। তবে এ হামলার পরিকল্পনা পুলিশ নস্যাত করে দিয়েছে। বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার মোকামতলা বাজার এলাকার সন্নিকট থেকে নব্য জেএমবি’র মোস্ট ওয়ান্টেড ২ জনসহ ৪ ভয়ঙ্কর জঙ্গী অস্ত্রসহ গ্রেফতার হওয়ার পর এ ধরনের তথ্য বেরিয়ে আসে। বুধবার রাতে নব্য জেএমবি’র উত্তরাঞ্চল সামরিক প্রধান ও শূরা সদস্য বাবুল আক্তার ওরফে বাবুল মাস্টার (৪৫) ও শূরা সদস্য দেলোয়ার হোসেন ওরফে মিজান মিস্ত্রী ওরফে মিজানুর রহমানসহ (৩৯) নব্য জেএমবি’র ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার অন্য ২ জঙ্গী আলমগীর হোসেন ওরফে আরিফ (২৮) ও আফজাল হোসেন ওরফে লিমন (৩২)। তারা ঢাকা যাওয়ার জন্য সমবেত হয়েছিল। বিদেশী পিস্তল, গুলি এবং ধারালো অস্ত্রসহ তাদের গ্রেফতার করা হয়। তাদের হামলার পরিকল্পনার বিষয়টি পুলিশ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নিশ্চিত হয়েছে। পুলিশ আশা করছে- আরও ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে ওই বিষয়ে বিস্তারিত জানা সম্ভব হবে। গ্রেফতারকৃত ৪ জঙ্গীকে আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কড়া পুলিশ প্রহরায় বৃহস্পতিবার বগুড়ার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। পুলিশ আদালতে গ্রেফতারকৃতদের ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়েছে। পুলিশের অভিযানের সময় জঙ্গীদের নিকট থেকে একটি বিদেশী পিস্তল, ১টি ম্যাগজিন, ১৫ রাউন্ড গুলি, ৪টি বার্মিজ চাকু ও একটি চাপাতি পাওয়া যায়। গোয়েন্দা সূত্রে খবর পেয়ে বুধবার রাত ১টার দিকে বগুড়া জেলা পুলিশ ও পুলিশ হেডকোর্য়টারের ইনটেলিজেন্স শাখা মোকামতলা বাজারের ২শ’ গজ উত্তরে বগুড়া-জয়পুরহাট মহাসড়কের পাশে যৌথভাবে এই অভিযান চালায়। বৃহস্পতিবার দুপুরে বগুড়া পুলিশ সুপার মোঃ আসাদুজ্জামান এক প্রেস ব্রিফিং-এ নব্য জেএমবি’র এই শীর্ষ জঙ্গীদের গ্রেফতারের বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, তারা রাজধানী ঢাকায় বড় ধরনের হামলা পরিকল্পনার জন্য পূর্ব-প্রস্তুতি নিতে ঢাকা যাচ্ছিল। এ গ্রেফতার অভিযানের মাধ্যমে রাজধানীতে বড় ধরনের হামলা প্রতিহত করা সম্ভব হয়েছে। ব্রিফিং-এ বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান ম-ল এবং সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী উপস্থিত ছিলেন। এ সময় গ্রেফতারকৃতদের বিস্তারিত কর্মকা- তুলে ধরা হয়। পুলিশ জানায়, নব্য জেএমবি’র উত্তরাঞ্চল সামরিক শাখার প্রধান বাবুল মাস্টারের বাড়ি দিনাজপুরের বিরামপুরের কসবা জালোপাড়া গ্রামে। নব্য জেএমবি’র মধ্যে সে সবচেয়ে পুরাতন জঙ্গী। এক সময় সে কসবা নিম্ন মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক ছিল। শিক্ষকতা ও জঙ্গী কর্মকা-ে দক্ষতার কারণে নব্য জেএমবিতে সে মাস্টার হিসাবে পরিচিতি লাভ করে। ২০০৩ সালে সে জেএমবিতে যোগ দিয়ে পরবর্তী ১০ বছর সে জেএমবিতে ছিল। ২০১৪ সালে নব্য জেএমবিতে সে যোগ দেয়। হলি আর্টিজান হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী রাজীবগান্ধী গ্রেফতার হওয়ার পর চলতি বছরে সে জঙ্গী সংগঠনটির উত্তরাঞ্চল সামরিক শাখার দায়িত্ব পায়। এর কয়েক মাসের মধ্যে সে শূরা সদস্য হয়। এই বাবুল মাস্টার অত্যন্ত ভয়ঙ্কর জঙ্গী হিসেবে পরিচিত। অনেক জঙ্গী হামলার সঙ্গেই তার সরাসরি সম্পৃক্ততা ছিল। যে এলাকায় তার উপস্থিতি পাওয়া গেছে সেখানে নাশকতা বা জঙ্গী হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে পুলিশ জানায়। গত ৫ বছর সে এলাকা থেকে লা-পাত্তা ছিল। সে রংপুরের কাউনিয়ার খাদেম রহমত আলী হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি। ২০১৬ সালে মহিমাগঞ্জের জুতা ব্যবসায়ী দেবেশ চন্দ্র হত্যাকা-ে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলও সরবরাহ করেছিল। বাবুল মাস্টার সর্বশেষ নতুন সদস্য সংগ্রহ, টার্গেট ও হামলার স্থান নির্ধারণের দায়িত্ব পালন করছিল। গ্রেফতারকৃত অপর মোস্ট ওয়ান্টেড জঙ্গী দেলোয়ার ওরফে মিজান মিস্ত্রী নব্য জেএমবি’র প্রথম আত্মঘাতী হামলার পরিকল্পনাকারী বলে পুলিশ জানায়। সেও ভয়ঙ্কর জঙ্গী হিসেবে পরিচিত। তার বাড়ি নওগাঁ জেলার মান্দা থানার হাজীপাড়ায়। ২০১২ সাল থেকে সে জঙ্গী কার্যক্রমে সম্পৃক্ত এবং ২০১৪ সাল থেকে সে নব্য জেএমবি’র নওগাঁ, জয়পুরহাট, সিরাজগঞ্জ ও বগুড়ার দায়িত্বশীল হিসেবে কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। বগুড়ার শেরপুরের জোয়ানপুর কুঠিবাড়িতে সে জঙ্গী আস্তানা গড়ে তোলে। সেখানে বৃহৎ জঙ্গী আস্তানা গড়ে তুলে গ্রেনেড তৈরি করে দেশের অন্যান্য জঙ্গীদের হাতে সরবরাহ করা হতো। এই আস্তানায় তামিম চৌধুরীসহ নব্য জেএমবি’র শীর্ষ নেতারা আসা-যাওয়া করতো। ২০১৫ সালে শিবগঞ্জের শিয়া মসজিদে হামলায় ব্যবহৃত পিস্তুল ও রাইফেল এই আস্তানা থেকেই সরবরাহ করা হয়েছিল। কুঠিবাড়ি আস্তানায় বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরকের মজুদ এবং গ্রেনেড তৈরির সময় ২০১৬ সালের বছরের ৩ এপ্রিল বিস্ফোরণ ঘটলে ২ জঙ্গী মারা যায়। তবে মিজান রাইফেল ও বিদেশী পিস্তলসহ পালিয়ে যায়। মিজানের পুরো পরিবারই নব্য জেএমবি’র সদস্য। বাবুল মাস্টার ও মিজানুর রহমানকে পুলিশ দীর্ঘদিন খুঁজছিল। পুলিশ সূত্র জানায়, গ্রেফতারকৃত ৪ জঙ্গী কীভাবে এবং কোথায় লুকিয়ে থাকার পর বগুড়ার মোকামতলা বাজার এলাকায় সমবেত হয়েছিল তা এখনো জানা যায়নি। তবে তারা আশপাশের কোন এলাকায় লুকিয়ে ছিল এমনটি ধারণা করা হচ্ছে। কারণ দ্রুততম সময়ে তারা সমবেত হয়ে ঢাকায় যাচ্ছিল হামলার পরিকল্পনা ও টার্গেট লক্ষ্য করে। ৪ জন গ্রেফতার হলেও রাজধানীর কোথায় তারা হামলার পরিকল্পনা করছিল এমন কোন বিষয় জঙ্গীরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেনি। রিমান্ডে জিজ্ঞাসবাদে বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া যাবে বলে পুলিশ ধারণা করছে।
×