ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বন্ধুত্বের কম্বোডিয়া

প্রকাশিত: ০৩:৫৭, ৮ ডিসেম্বর ২০১৭

বন্ধুত্বের কম্বোডিয়া

গণহত্যার শিকার হয়েছিল দুটি দেশ। যুদ্ধবিধ্বস্ত দুটি দেশই পুনর্গঠনের পরিক্রমায় আজ অতি কাছাকাছি পৌঁছাতে চায়। কত কাছের দেশ অথচ রয়ে গেছে দূরে। ইতিহাসের সাদৃশ্য রয়ে গেছে দু’দেশের মধ্যে। কিন্তু নৈকট্য লাভ হয়নি। দীর্ঘ লড়াই সংগ্রাম আর যুদ্ধের পর স্বাধীনতা পেয়েছিল ওই এলাকার দুটি দেশ কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনাম। তুলনায় বাংলাদেশ স্বল্প সময়ের যুদ্ধে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিল। তবে দুটি দেশেই হানাদার বাহিনী ব্যাপক নির্যাতন, অত্যাচার এবং গণহত্যা চালিয়েছিল। সেই অবস্থান থেকে দেশ দুটি আজ বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পেরেছে। যার ফলে দেশ দুটি একটি শক্তিশালী এবং পারস্পরিক সুবিধাজনক অংশীদারিত্ব গড়ে তুলেছে এবং এখন এই অঞ্চলে উন্নয়ন, শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য বৃহত্তর আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার করার জন্য একসঙ্গে কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তিন দিনের কম্বোডিয়া সফরের মধ্য দিয়ে ভ্রাতৃপ্রতিম বন্ধুত্ব এবং সহযোগিতা আরও জোরদার হয়েছে। দুটি দেশের জনগণের স্বাধীনতা অর্জনের সময় অভিন্ন অভিজ্ঞতা এবং অত্যাচার সহ্য করার বিষয়টি ভুলে যাবার নয়। দু’দেশের আর্থ-সামাজিক দিক দিয়ে অনেক মিল রয়েছে। এমনকি উভয় দেশের জনগণই জীবনযাপনের মান উন্নয়নে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এখন প্রয়োজন দু’দেশের জনগণের কল্যাণে কৃষি, বাণিজ্য, বিজ্ঞান প্রযুক্তি এবং শিক্ষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানো। ভৌগোলিক নৈকট্য সত্ত্বেও দু’দেশের জনগণের মধ্যে একটি বড় ধরনের বিচ্ছিন্নতা ছিল। বাণিজ্যিক সম্পর্কের তেমন বিস্তার ঘটেনি। তবে ২০১৪ সালে কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের বাংলাদেশে সফরের মধ্য দিয়ে এই দূরত্ব ব্যাপকার্থে কমে আসে। একই লক্ষ্যে বাণিজ্যিক যোগাযোগের পথ সুগম হয়। দু’দেশই মনে করে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে স্থায়ী অগ্রগতির জন্য ভারসাম্যপূর্ণ বৈদেশিক বাণিজ্য খুবই জরুরী। তবে বাংলাদেশের রফতানির তুলনায় আমদানির পরিমাণই বেশি। সেবা ও পণ্যের বাজার তৈরিতে বাংলাদেশ এখনও পিছিয়ে আছে। সেই অবস্থানকে মাথায় রেখে দু’দেশের মধ্যে দশটি দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা স্মারক ও একটি চুক্তি সই হয়েছে। এতে দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য বিনিয়োগ পর্যটন ও তথ্যপ্রযুক্তিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা এগিয়ে নিতে সহায়ক হবে। উপকৃত হওয়ার ক্ষেত্র তৈরি হবে দু’দেশেরই। যা টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য বাস্তবায়নে সহায়ক হতে পারে। দু’দেশেই পারস্পরিক অঞ্চলে বিনিয়োগে এগিয়ে আসার বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। পাশাপাশি আঞ্চলিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে দুটি দেশই ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার অফুরন্ত সুযোগ রয়েছে। পূর্ব এশীয় দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক ঘনিষ্ঠতার তাগিদ থেকেই শুধু কম্বোডিয়া, ইন্দোচীন অঞ্চলের ভিয়েতনাম ও লাওসের সঙ্গেও সম্পর্ক এগিয়ে নেয়া জরুরী। সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘বোন’ সম্বোধন করেছেন কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী, বিষয়টি প্রতীকী হলেও এর মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্কের পথরেখা বোঝা যায়। দুই দেশের সহযোগিতা ও সম্ভাবনার সুযোগ কাজে লাগানোর মধ্যেই নিহিত পারস্পরিক কল্যাণ ও সমৃদ্ধি। শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে কম্বোডিয়ার যে সহযোগিতা চেয়েছেন তাতে সে দেশের সরকারের সাড়া পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সঙ্কটের সমাধানে বিশ্ব সম্প্রদায়ের যে সহযোগিতা বাংলাদেশ চেয়ে আসছে, তারই অংশ হিসেবে কম্বোডিয়ার সহযোগিতার হাত সম্প্রসারিত হবে বলে বাংলাদেশ বিশ্বাস করে। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিতে শেখ হাসিনার এই সফর মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।
×