ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ক্ষতিপূরণ দাবি

বড়পুকুরিয়া অচলের হুমকি

প্রকাশিত: ০৭:১৩, ৭ ডিসেম্বর ২০১৭

বড়পুকুরিয়া অচলের হুমকি

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর ॥ আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা না হলে, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি ঘেরাও করে কার্যক্রম অচল করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন কয়লা খনি সংলগ্ন ১৩ গ্রামের মানুষ। বুধবার বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির সামনে এক মানববন্ধন কর্মসূচী চলাকালে এই ঘোষণা দেন তারা। বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত ১৩টি গ্রামের সমন্বয় কমিটির ব্যানারে বড়পুকুরিয়া-ফুলবাড়ী মহাসড়কের প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এই মানববন্ধন হয়। সেখানে কয়েক হাজার নারী-পুরুষ অংশ নেন। মানববন্ধন থেকে ৬ দফা দাবি বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো- ১৩টি গ্রামে কয়লা উত্তোলনের কারণে ক্ষতিগ্রস্তদের বকেয়া টাকা পরিশোধ, বাড়িঘরের ফাটলের ক্ষতিপূরণ যথাসময়ে পরিশোধ, ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেক পরিবার থেকে কাউকে চাকরি দেয়া, কয়লা উত্তোলনের ফলে দেবে যাওয়া রাস্তাঘাট সংস্কার করে চলাচলের উপযোগী করা, ৬২৭ একর অধিগ্রহণকৃত জমির বকেয়া পরিশোধ এবং পেট্রোবাংলা, খনি কর্তৃপক্ষ ও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসীর মধ্যে স্বাক্ষরিত ১০ দফা দাবি বাস্তবায়ন। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত ১৩টি গ্রামের সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক মশিউর রহমান বুলবুল, খনি এলাকার বৈগ্রামের মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম, চৌহাটি গ্রামের মিজানুর রহমান প্রমুখ। এলাকাবাসীর অভিযোগ, খনি থেকে কয়লা উত্তোলনের ফলে, ১৩টি গ্রামের বিভিন্ন ঘরবাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছে। একইসঙ্গে মাটি দেবে গিয়ে জলাশয়ের সৃষ্টি হওয়ায়, অনাবাদী হয়ে পড়ছে অধিকাংশ জমি। এলাকার লোকজন জানান, ফুলবাড়ি থেকে খয়েরপুকুর হাট ও চৌহাটি থেকে ধুলাউদাল পর্যন্ত জনগণের চলাচলের জন্য রাস্তাটি দেবে গেছে। বর্ষাকালে রাস্তাটি পানির নিচে ডুবে যায়। এতে এলাকার মানুষ, স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী এবং অসুস্থ রোগী নিয়ে চলাচল করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। এর আগে খনি কর্তৃপক্ষ এলাকার মানুষকে ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিয়ে মসজিদ, কবরস্থান, ঈদগাহ মাঠ, ফসলের জমি, বাসাবাড়ি, পুকুর সবকিছু ধ্বংস করে দিয়ে ৬২৭ একর জমি অধিগ্রহণ করে। কিন্তু এখনও অনেকেই তাদের ক্ষতিগ্রস্ত জমির ক্ষতিপূরণ পাননি। এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, বর্তমানে খনি কর্তৃপক্ষ ক্ষতিপূরণ প্রদান কিংবা জমি অধিগ্রহণ না করেই খনি এলাকার উত্তর-দক্ষিণ দিকে সমীক্ষার কাজ করছে এবং নতুন নতুন এলাকায় বোমা বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে। এর ফলে ঘরবাড়িতে ফাটল সৃষ্টি হচ্ছে। খনি কর্তৃপক্ষ এলাকাবাসীর দাবির বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ না নিয়েই এলাকার লোজনকে ভয়ভীতি দেখিয়ে, মামলা-মোকদ্দমা করে আন্দোলন বন্ধ করতে চাচ্ছে। বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত ১৩টি গ্রামের সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক মশিউর রহমান বুলবুল মানববন্ধনে বলেন, ‘আমাদের ছয় দফা দাবি খনি কর্তৃপক্ষকে মেনে নিতে হবে। এগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। এর মধ্যে কয়লা খনিতে ক্ষতিগ্রস্ত ১৩টি গ্রামের মধ্যে মোবারকপুর, বইগ্রাম, কাশিয়াডাঙ্গা, রসুলপুর, কালুপাড়া, মহেশপুর, পাতরাপাড়া, বাঁশপুকুর, বৌধনাথপুর, কাজিপাড়া, হামিদপুর, চৌহাটি, যবরপাড়া এলাকায় ভূগর্ভ থেকে কয়লা উত্তোলনের ফলে ঘরবাড়িতে নতুন করে ফাটলের ক্ষতিপূরণ দেয়া হচ্ছে না। ক্ষতিগ্রস্ত ওই সব বাসাবাড়ির উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেক পরিবার থেকে চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে ও কোটা রাখতে হবে। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ছয় দফা দাবির ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে বৃহত্তর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি ঘেরাও করে খনির উৎপাদনসহ সব কার্যক্রম অচল করে দেয়া হবে।’
×