ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সুমন্ত গুপ্ত

মঞ্চ নাটক ॥ ২৭ বছর পূর্ণ করল নাট্যমঞ্চ

প্রকাশিত: ০৬:৩৯, ৭ ডিসেম্বর ২০১৭

মঞ্চ নাটক ॥ ২৭ বছর পূর্ণ করল নাট্যমঞ্চ

শ্রীভূমি সিলেটে ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার পতনের উত্তাল সময়ে এক ঝাক তরুণ ‘অপসংস্কৃতি নয়, চাই জাতীয় সংস্কৃতির বিকাশ’ এই স্লোগানে সিলেট শহরে গড়ে তুলে নাট্যমঞ্চ নামে নাট্যদল। অদম্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নাট্যমঞ্চ তাদের পথ চলা শুরু করে। দীর্ঘ ২৭ বছরের পথ পরিক্রমায় নাট্যদলটি সিলেটের নাট্য আন্দোলনে রেখেছে গৌরবের কিছু কর্মকান্ড-। সিলেট অডিটরিয়াম মঞ্চ কিংবা কেন্দ্রী শহীদ মিনার বা অন্য যে কোন উম্মুক্ত স্থানে নাট্যমঞ্চ বার বার গিয়েছে দর্শকের সামনে। কখনও মুক্তিযুদ্ধ, কখনও দুর্নীতি, গণতন্ত্র, সাধারণ মানুষের অধিকার, যুদ্ধাপরাধির বিচারসহ বিভিন্ন বিষয়ে তাদের ছিল দীপ্ত পদচারণা। নাট্যমঞ্চ সিলেট এ পর্যন্ত ৭টি বিভাগ নিয়ে জাতীয় মঞ্চ নাট্য উৎসব, জাতীয় পথনাট্য উৎসব আয়োজন করে। এছাড়াও ৭টি পথনাট্য উৎসব আয়োজন করে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। বিরম্বিত আর্তনাদ, ময়নারচর, রঙ্গমালা, কালান্তর, সুখের খুঁজে সুখলাল, বধ্যভূমিতে শেষদৃশ্য নাট্য মঞ্চের উল্লেখযোগ্য মঞ্চ নাটক। প্রায় ২০টিরও বেশি পথনাটকের অর্ধশতাধিক প্রদর্শনী রয়েছে তাদের। নাট্যমঞ্চ সিলেট নাটকের পাশাপাশি বিভিন্ন উৎসব আয়োজনে দেশের স্বনামধন্য বিভিন্ন নাট্যদলকে আমন্ত্রণ জানিয়ে এনেছে সিলেটের মঞ্চে যা থেকে সিলেটের নাট্যমোদি দর্শক ভাল কিছু নাটক উপভোগ করেছেন। উৎসব উপলক্ষে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষা, সংস্কৃতি, ভাষা, সাংবাদিকতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সিলেটের অনেক গুণীজনকে তারা জানিয়েছে নাট্যমঞ্চ সম্মাননা। মূল ধারার নাটকের পাশাপাশি প্রাথমিক শিক্ষা, কর্মজীবী শিশুর শিক্ষা, স্বাস্থ্য সচেতনতা, এসিড নিক্ষেপসহ বিভিন্ন বিষয়ে সিলেট জেলার প্রতিটি উপজেলায় তারা প্রায় দুই শতাধিক জনসচেতনতামূলক নাটক মঞ্চস্থ করেন। নাট্যমঞ্চ সিলেট বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন, বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার ফেডারেশন, সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেট ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সিলেটের সদস্য সংগঠন। আজ ৭ ডিসেম্বর নাট্যমঞ্চ তাদের ২৭ বছর পূর্তি উপলক্ষে সিলেটে কবি নজরুল অডিটোরিয়ামে আয়োজন করেছে, গৌরবের ২৭ বছর শীর্ষক অনুষ্ঠান মালার। আজ মঞ্চস্থ হচ্ছেÑ নাট্যমঞ্চের নাটক বধ্যভূমিতে শেষদৃশ্য। বধ্যভূমিতে শেষদৃশ্য নাটকটি রচনা করেছেন কাজী মাহমুদুর রহমান, নির্দেশনা দিয়েছেন ও সুজা চরিত্রে অভিনয় করেছেন রজতকান্তি গুপ্ত। এটি ছিল নাটকের পঞ্চম প্রদর্শনী। নাটকের অন্যান্য চরিত্রে বাপ্পি মজুমদার, ইয়ামিন ওসমান, মাহমুদ হাসান, টুম্পাসহ অনেকেই অভিনয় করেন। বধ্যভূমিতে শেষদৃশ্য নাটকটিতে একাত্তরে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের শত শহ¯্র বধ্যভূমির কথা বলা হয়েছে। নাটকে গল্লামারী বধ্যভূমির নিঃশংসতার চিত্র ফুটে উঠেছে। যা নিরস্ত্র মুক্তিকামী বাঙালীর উপর পাকিস্তানীদের বর্বরতার একটি চিত্র। কাহিনীর চরিত্র কিংবা পাত্রপাত্রী শুধুমাত্র কল্পনা বিলাসের জন্য নয়, ওরা ছিল একাত্তরের যুদ্ধ সময়ের ঘটনার প্রতিচ্ছবি। নাটকে একজন পাক আর্মি ও তিনজন সৈনিক কিভাবে নির্যাতন চালিয়ে কয়েকজন মানুষের স্বপ্ন ও মুক্তির চিন্তাকে হত্যা করে তা ফুটে উঠেছে। নাটকে নিঃশংসতায় অন্ধ সুজা বন্দীদের মাঝে খুঁজে পায় তার স্বপ্নের মেয়েটিকে। যাকে সে বিদেশে থাকাকালীন সময়ে মায়ের পাঠানো ছবিতে দেখেছিল। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিণতি গল্লামারী বধ্যভূমিতে তার স্বপ্নের সেই মেয়েটি তাঁর কাছে অন্যদের মতোই বন্দী, সে তাকে দেখতে পারছে না। বন্দী মেয়েটিকে তাঁর স্বপ্ন আর মেয়েটি নিয়ে কল্পনার কথা বলতে গিয়ে শেষ মুহূর্তে জানতে পারে তার সমস্ত ভালবাসা বন্দী মেয়েটিকে নিয়ে। পাকিস্তানী সুবেদারের কূটকৌশলে নাটকে একপর্যায়ে সকল বন্দীদের ছেড়ে দেয়ার শর্ত দেয়া হয়, এই বলে যদি বন্দী সুজা নিজের হাতে মেয়েটিকে হত্যা করে। সুজা শর্তে রাজি না হলেও মেয়েটি তার জীবনের লজ্জা, ঘৃণা ও অপমানের কথা সুজাকে স্মরণ করিয়ে দেয় এবং বলে সে এই নরপশু নয়, সুজার হাতেই জীবনের মুক্তি চায়। কিন্তু নাটকের শেষ দৃশ্যে পাকিস্তানী সুবেদার মেয়েটির করুণ পরিণতি দেখে উল্লাস করতে থাকলে সুজা মেয়েটিকে ছুড়ি দিয়ে হত্যা না করে সুবেদারকে ছুরিকাঘাত করে মেরে ফেলে। অন্য সৈন্যরা তখন সুজা ও মেয়েসহ সকল বন্দীকে বধ্যভূমিতে হত্যা করে। এ রকম নানা মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ভয়াবহ দিনগুলোকে নাটকের মধ্য দিয়ে স্মরণ করিয়ে দেয়।
×