ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ওয়ালিউর রহমান

কে বলে বাঙালী সময়ানুবর্তী নয়!

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ৭ ডিসেম্বর ২০১৭

কে বলে বাঙালী সময়ানুবর্তী নয়!

সময়ানুবর্তিতা মানুষের জীবনের শ্রেষ্ঠ শক্তি। সময়কে মূল্য দিতে শিখলে সেই জাতি, গোষ্ঠী ও ব্যক্তি সর্বোচ্চ উৎকর্ষ সাধন করবেই। বাঙালীর সময়ানুবর্তিতার জ্ঞান ও সাধনা নিয়ে বিবিধ কথা উঠলেও প্রকৃত অর্থে বাঙালীর সময়ানুবর্তিতার প্রসঙ্গটি এলে অনেকেই ঘাবড়ে যাই। অনেকেই তীর্যকভাবে বলে ফেলেন বাঙালীর সময়জ্ঞান নেই। বাঙালীর দূরপাল্লায় রেলগাড়ি, বাস, স্টিমার সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছে না এমন অভিযোগ করে বাঙালীর সময়ানুবর্তিতার প্রমাণ করা যথার্থ নয়। যে জাতি দীর্ঘ নয় মাস মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে একটি দেশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে পেরেছে সেই জাতির সময়জ্ঞান রয়েছে বৈকি। সেকেন্ড, মিনিট ও ঘণ্টার হিসাব করেই বাঙালী শত্রুর মোকাবেলা করেছিল ১৯৭১ সালে। সময়মতো বাঙালী অস্ত্র ধরেছে, শত্রুর ঘাঁটিতে বোমা মেরেছে, মাইন পুঁতেছে। ইতিহাস বাঙালী জাতিকে এভাবেই পর্যবেক্ষণ করবে। বাঙালী জাতি সমৃদ্ধির পথে একত্রে কাজ করে সরকারী প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে কল কারখানা ও খেতে খামারে। এ জন্যই বাঙালীর সামাজিক অগ্রগতি ও সাংস্কৃতিক চর্চার উন্নতি হচ্ছে। অভাবনীয়ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। রাজধানী ঢাকা শহরে যতগুলো আর্ট গ্যালারি রয়েছে পৃথিবীর অনেক শহরেই তা নেই আজ। মেডিটেরিয়ান দেশগুলোর মাঝে ইতালি ও স্পেনের মানুষেরা সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত কাজ করে। এরপর তারা দুপুরের খাবার খেয়ে বিশ্রাম করে। পাস্তা, রেড ওয়াইন, মাছ ও মাংস দিয়ে দুপুরের খাবার। আবার তারা সন্ধ্যা ৬টা অথবা ৭টায় কাজে যায় ও দিনের বাকি কাজ করে। ল্যাটিন সংস্কৃতির সঙ্গে বাঙালীর সংস্কৃতি এক হবে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানিতে প্রতি ঘণ্টায় এক ব্যক্তির উৎপাদন পৃথিবীর যে কোন দেশের চেয়ে বেশি। মার্কিনীদের লাঞ্চ হয় ১৫ মিনিটে। শনিবার ও রবিবার বন্ধুদের নিয়ে বিভিন্নভাবে সময় কাটায়। কোন কোন ক্ষেত্রে বাঙালী ভুল করে, অলসতা করে অথবা সময়জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছিল ঠিকই অথচ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজের ট্রাইব্যুনাল গঠিত হলো ২৫ মার্চ ২০১০ সালে ৩৯ বছর পর। দীর্ঘ ৩৯ বছর পর এদেশের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে। দীর্ঘ ২১ বছর পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারীদের বিচার হয়েছে। এসব রাজনৈতিক ঘটনা তবে বাঙালীর সমাজের মূল দাবি ও অস্তিত্বের প্রসঙ্গ। বাঙালী বরাবরই দেরিতে হলেও তার অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। বাংলাদেশের চলতি দশকে অভাবনীয় অগ্রগতি সময়জ্ঞানের উৎকৃষ্ট প্রতিফলন। এদেশের জিডিপি ৭.২৮ ও ব্যাংকের রিজার্ভ ৩৩ বিলিয়ন। সময়জ্ঞান রয়েছে বলেই এই অর্থনৈতিক পরিবর্তনও দৃশ্যমান। বাঙালীর মনস্তত্ত্বে ও জীবনধারায় সময়জ্ঞান এখন অনেক উন্নত। মূলত সময়ই মানবজাতির শ্রেষ্ঠ শক্তি। সেই শক্তিকে বাঙালী কাজে লাগাতে শিখেছে। ধানমণ্ডি, ঢাকা থেকে
×