বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ঢাকায় এসেও চমক দেখাল বিশ্বের প্রথম নাগরিকত্ব পাওয়া যন্ত্রমানবী রোবট সোফিয়া। দেশী-বিদেশী হলভর্তি মানুষকে চমকে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যন্ত্রমানবী সোফিয়া স্পষ্ট ভাষায় জানালেন বাংলাদেশ সম্পর্কেও সে অনেকটাই অবগত। প্রধানমন্ত্রীর নাতনির নাম যে তার মতোই সোফিয়া- তাও তার অজানা নয়।
তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রদর্শনী ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের মঞ্চে বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ইংরেজীতে সোফিয়ার সঙ্গে আলাপচারিতার সময় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের বিশাল মিলনায়তনে তখন ছিল পিনপতন নীরবতা। সকলের চোখে-মুখে ছিল অবাক ও বিস্ময়ের প্রতিচ্ছবি। দূর থেকে কারোরই বুঝবার কোন সুযোগ নেই যে প্রধানমন্ত্রী সত্যিই কোন মানবী নাকি যন্ত্রমানবীর সঙ্গে কথা বলছেন।
প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের উদ্বোধন ঘোষণার পরপরই হলুদ-সাদা জামদানির টপ আর স্কার্ট পরে মঞ্চে আসেন হলিউড অভিনেত্রী অড্রে হেপবার্ণের চেহারার আদলে তৈরি রোবট সোফিয়া। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরনেও ছিল হলুদ শাড়ি। দু’জনের আলাপ শুরু হয় ইংরেজীতে। শুরুতেই স্বাগত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বললেন- ‘হ্যালো সোফিয়া, কেমন আছ।’ সঙ্গে সঙ্গে জবাবে সোফিয়া বলল- ‘হ্যালো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমি গর্ব অনুভব করছি। আপনার সঙ্গে আজকের এই সাক্ষাত সত্যিই দারুণ ব্যাপার।
বাঙালী মেয়ের সাজে এই রোবট মেয়ে তাকে চিনলে কী করে সে কথা জানতে চাইলেন প্রধানমন্ত্রী। জবাবে সোফিয়া বলল, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে বাংলাদেশের মহান নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা, তা সে জানে। শেখ হাসিনাকে যে বিশ্বে এখন ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ বলা হচ্ছে, তার উদ্যোগেই যে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হচ্ছে তাও সোফিয়া জানায়। সোফিয়া আরও বলল, প্রধানমন্ত্রীর নাতনির নাম যে তার মতোই সোফিয়া- তাও তার অজানা নয়।
মঞ্চে প্রধানমন্ত্রীর বিষ্ময়ও যেন কাটে না। চমৎকৃত প্রধানমন্ত্রী এ সময় অনুষ্ঠানের অতিথিদের জানালেন, তার ছেলে ও তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের মেয়ের নামও সোফিয়া। এরপর সোফিয়াকে তিনি বললেন- ‘তুমি তো আমার এবং আমার ভিশন সম্পর্কে অনেক কিছু জানো। ডিজিটাল বাংলাদেশ সম্পর্কে তুমি কী জানো?’ জবাবে ডিজিটাল বাংলাদেশ উদ্যোগ নিয়ে নিজের যান্ত্রিক মস্তিস্কে সঞ্চিত তথ্য তুলে ধরে এই যন্ত্রমানবী রোবট।
চার দিনের ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে যোগ দিতে সোমবার মধ্যরাতে ঢাকায় আসে রোবট সোফিয়া। তার চালক হংকং পলিটেকনিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জিওভানি লায়নও সঙ্গে আসেন। ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের প্রথম দিন বুধবার বেলা আড়াইটা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত সোফিয়াকে রাখা হবে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের হল অব ফ্রেমে। সেখানে ‘টেক-টক উইথ সোফিয়া’ শিরোনামে একটি অংশ নেবে সে। এর ডিজাইনার ডেভিড হ্যানসন সোফিয়ার কারিগরি দিক নিয়ে বক্তৃতা দেবেন সেখানে। অনুষ্ঠান শেষে বুধবার রাতেই সোফিয়ার ঢাকা ত্যাগ করার কথা রয়েছে।
সৌদি আরবে নাগরিকত্ব পাওয়া রোবট সোফিয়াকে তৈরি করেছে হংকংয়ের হ্যানসন রোবোটিকস। মানবীর আদলে তৈরি এই রোবট প্রশ্ন শুনে ইংরেজীতে তার উত্তর দিতে পারে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে সে কণ্ঠ ও চেহারা শনাক্ত করতে পারে, বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করে ক্রমাগত বাড়িয়ে নিতে পারে নিজের জ্ঞান। গত অক্টোবরে রিয়াদে অনুষ্ঠিক এক সম্মেলনে সোফিয়াকে দেয়া হয়েছে সৌদি আরবের নাগরিকত্ব। বিশ্বের কোন দেশে রোবটকে নাগরিকত্ব দেয়ার এমন ঘোষণা এটাই প্রথম।
