ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার যুক্তিতর্কে চীফ প্রসিকিউটর

উদ্ধার করা আলামত পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করা হয়

প্রকাশিত: ০৫:২২, ৭ ডিসেম্বর ২০১৭

উদ্ধার করা আলামত পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করা হয়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্পর্শকাতর ও বহুল আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনের মামলার ১৭ তম দিনের মতো যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছেন রাষ্ট্রপক্ষ । মামলার চীফ প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান বুধবার যুক্তি উপস্থাপন করে বলেন, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বকে হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলা বাস্তবায়নে ১১টি স্থানে ষড়যন্ত্রমূলক সভা হয়। এ ছাড়া রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী (পিডব্লিউ-৬৫) ডিজিএফআই-এর সাবেক ডিজি মেজর জেনারেল (অব) সাদিক হাসান রুমির সামনে ্ টি.এফ.আই. সেলে মুফতি হান্নান স্বীকার করেছে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামালায় আবদুস সালাম পিন্টু, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর এবং তারেক রহমান জড়িত ছিলেন। টি.এফ.আই. সেলে মুফতি হান্নান আরও বলেন, উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর সরকারী বাসভবনে আবদুস সালাম পিন্টু, লুৎফুজ্জামান বাবর, মওলানা তাইজউদ্দিন, মওলানা আবু তাহের এবং অন্যান্য হুজি নেতাগণ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার প্রস্তুতিমূলক মিটিং করেন। সেখানে আবদুস সালাম পিন্টু ও লুৎফুজ্জামান বাবর প্রশাসনিক সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দেন। অন্যদিকে সংঘটিত গ্রেনেড হামলা পরবর্তী উদ্ধারকৃত আলামত উদ্দেশ্যমূলক ও পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করা হয়েছে। মামলার রাষ্ট্রপক্ষের পরবর্তী যুক্তিতর্কের জন্য আগামী সোম, মঙ্গল ও বুধবার দিন ধার্য করা হয়েছে। রাজধানীর পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে এ মামলার বিচার চলছে। চীফ প্রসিকিউটরকে যুক্তিতর্কে সহায়তা করেন এ্যাডভোকেট আকরাম উদ্দিন শ্যামল, এ্যাডভোকেট ফারহানা রেজা, এ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আমিন। এ ছাড়াও রাষ্ট্রপক্ষে এ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল, মোঃ আমিনুর রহমান, আবুল হাসনাত ও আশরাফ হোসেন উপস্থিত ছিলেন। অপরদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী আব্দুস সোবহান তরফদারসহ অন্যরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় গত ২৩ অক্টোবর থেকে রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক শুরু হয়েছে। চীফ প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান যুক্তিতর্কে বলেন , মওলানা আবদুস সালামের মাধ্যমে তার তথ্যের ভিত্তিতে ডিজিএফআই সিলেট থেকে বিপুল নামীয় এক ব্যক্তি, যে ব্রিটিশ হাইকমিশনারের ওপর গ্রেনেড হামলা মোকদ্দমার অন্যতম আসামি, তাকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে সে ব্রিটিশ হাইকমিশনারের ওপর গ্রেনেড হামলাসহ, সব গ্রেনেড হামলার সঙ্গে জড়িত এবং অন্যান্য হুজি নেতারাও জড়িত এবং মুফতি আবদুল হান্নান তাকে গ্রেনেড সরবরাহ করেছে বলে। সেই সময়ে এই তথ্য পাবার পূর্বেই র‌্যাব মুফতি হান্নানকে গ্রেফতার করে এবং তাকে র‌্যাব এর টিএফআই বা টাস্ক ফোর্স ইনটেলিজেন্স সেল-এই জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছিল। এই সময়ে বিপুলের তথ্য টিএফআই-এর সেলে দেয়া হয়। মুফতি হান্নানকে টিএফআই সেলে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে ২০০৬ সালের আগস্ট মাসে মুফতি হান্নান বিপুলের দেয়া তথ্য হুবহু স্বীকার করেন। মুফতি হান্নান আরও স্বীকার করেন ২১ আগস্ট গ্রেনেড মামলাসহ সব গ্রেনেড মামলায় তিনি জড়িত এবং তিনি নেতৃত্ব ও পরিচালনা করেছেন। তিনি টিএফআই সেলে আরও জানান, গ্রেনেডগুলো মুফতি হান্নান মাওলানা তাইজউদ্দিনের কাছ থেকে সংগ্রহ করেন। মুফতি হান্নান আরও জানান, তাইজউদ্দিন তৎকালীন উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ছোট ভাই। টিএফআই সেলে মুফতি হান্নান আরও স্বীকার করেন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামালায় আবদুস সালাম পিন্টু, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর এবং তারেক রহমান জড়িত ছিলেন । উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর সরকারী বাসভবনে আবদুস সালাম পিন্টু, লুৎফুজ্জামান বাবর, মাওলানা তাইজউদ্দিন, মওলানা আবু তাহের এবং অন্যান্য হুজি নেতাগণ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার প্রস্তুতিমূলক মিটিং করেন। সেখানে আবদুস সালাম পিন্টু ও লুৎফুজ্জামান বাবর প্রশাসনিক সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দেন। চীফ প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান যুক্তি তর্কে বলেন ,সাক্ষী সাদিক হাসান রুমি তৎকালীন ডিজিএফআই কর্মকর্তা রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরীর বিভিন্ন কর্মকা-ে অসন্তোষ প্রকাশ করলে তাকে বদলি করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তি তর্কে জানায়, রেজ্জাকুলকে বদলি করলেও তাকে পদোন্নতি দেয়া হয়। ২১ আগস্ট হামলা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এ কর্মকর্তার সম্পৃক্ততার যুক্তি সাক্ষী ইউসুফ হোসেনের জবানবন্দীর আলোকে রাষ্ট্রপক্ষ ২১ আগস্ট হামলা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে হাওয়া ভবনে ষড়যন্ত্রমূলক বৈঠক এবং পরিকল্পনাকারীদের অপরাধের বিষয়ে যুক্তি তুলে ধরে। সাক্ষী এস এম মিজানুর রহমানের জবানবন্দীর আলোকে রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তিতর্কে উল্লেখ করে যে, ২১ আগস্ট ২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের সমাবেশে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এই সাক্ষীকে সমাবেশের ৩ ঘণ্টা আগে নিরাপত্তার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এ সাক্ষীকে ২১ আগস্ট ঘটনার সঠিক তদন্তে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তারা বিরত থাকতে বলেছেন। ঘটনার পর বঙ্গবন্ধু এভিনিউর বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধারকৃত আর্জেস গ্রেনেড মামলার আলামত হিসেবে সংরক্ষণ না করে তৎকালীন সরকার ও প্রশাসনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের পরস্পর যোগসাজশে তা ধ্বংস করা হয়। যারা এ মামলায় বর্তমানে আসামি রয়েছেন। যুক্তিতর্কে রাষ্ট্রপক্ষ জানায়, সাক্ষী এস এম মিজানুর রহমানের দেয়া জবানবন্দী অনুযায়ী অপরাধীদের অপরাধ সংঘটন নির্বিঘœ করতে পরিকল্পনা অনুযায়ী ভয়াবহ ওই গ্রেনেড হামলা ঘটানো হয়। বুধবার রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষি (পিডব্লিউ-৬৫) ডিজিএফআই-এর তৎকালীন ডিজি মেজর জেনারেল (অব) সাদিক হাসান রুমি, (পিডব্লিউ-৬৬) এনএসআই’র মাঠ কর্মকর্তা ইউসুফ হোসেন, (পিডব্লিউ-৬৭) তৎকালীন অতিরিক্ত ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম এ এইচ এম হাবিবুর রহমান ভূইয়া, (পিডব্লিউ-৬৮) লে. কমান্ডার মিজানুর রহমান (এক্সিকিউটিভ), (পিডব্লিউ-৬৯) পুলিশের নায়েক মোঃ হাবিবুর রহমান, (পিডব্লিউ-৭০) পুলিশ সদস্য মোঃ আল-মামুন, (পিডব্লিউ-৭১) পুলিশ সদস্য মোঃ আহসান হাবিব, (পিডব্লিউ-৭২) মেজর (অব) আতিকুর রহমানের দেয়া সাক্ষ্যের আলোকে যুক্তি তর্ক উপস্থাপন করা হয়। আতিকুর রহমানের দেয়া সাক্ষ্যের আলোকে যুক্তি উপস্থাপন অসমাপ্ত অবস্থায় মামলার পরবর্তী যুক্তি তর্কের জন্য ১১,১২ ও ১৩ ডিসেম্বর দিন ধার্য করা হয়েছে।
×