ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

হুমায়ুন কবিরের জবানবন্দী

রাজাকার লিয়াকত আমার বাবাকে নৌকায় দাঁড় করিয়ে হত্যা করে

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ৭ ডিসেম্বর ২০১৭

রাজাকার লিয়াকত আমার বাবাকে নৌকায় দাঁড় করিয়ে হত্যা করে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে হবিগঞ্জের দুই রাজাকার লাখাই থানা রাজাকার কমান্ডার মোঃ লিয়াকত আলী ও আলবদর কমান্ডার আমিনুল ইসলাম ওরফে রজব আলীর বিরুদ্ধে অষ্টম সাক্ষী হুমাযুন কবির জবানবন্দী প্রদান করেছেন। জবানবন্দীতে সাক্ষী বলেন, আসামি মোঃ লিয়াকত আলী আমার বাবা রঙ্গু মিয়াকে ধরে হাত পা ও চোখ বেঁধে নৌকায় দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে। এরপর বাবার লাশ দত্তবাড়ির খালের পানিতে ফেলে দেয়। জবানবন্দী শেষে আসামি পক্ষের আইনজীবী সাক্ষীকে জেরা করেন। পরবর্তী সাক্ষীর জন্য আজ বৃহস্পতিবার দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যদিকে, সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল খালেক মন্ডলসহ চার রাজাকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ শুনানির জন্য ১৮ জানুয়ারি দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল। চেয়ারম্যান বিচারপতি মোঃ শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ বুধবার এ আদেশগুলো প্রদান করেছেন। হবিগঞ্জের মামলায় সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন, আমার নাম হুমায়ুন কবির। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৫৮ বছর। আমার ঠিকানা গ্রাম- ফান্দাউক, থানা- নাসিরনগর, জেলা- ব্রাহ্মণবাড়িয়া। আমি চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছি। আমি ঢাকায় রেস্টুরেন্টের ব্যাবসা করি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি আমাদের গ্রামের ফান্দাউক বাজারে পোস্ট অফিসের বারান্দায় ফাঁকা জায়গায় থাকা আমার বাবার পান বিড়ির সিগারেটের ব্যবসার কাজে তাকে সহযোগিতা করতাম। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে আমার বাবা রঙ্গু মিয়া, বাচ্চু মিয়াসহ এলাকার অনেকেই আওয়ামীলীগের সমর্থক হিসেবে স্বাধীনতার পক্ষে ছিলেন। আমার বাবা গোপনে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করতেন। অন্যদিকে আমাদের গ্রামের ফান্দাউক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাবরু মিয়া ও তার ভাইয়েরা ছিল পাকিস্তানপন্থী ও স্বাধীনতাবিরোধী। বাবরু মিয়া স্থানীয় শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ছিল। বাবরু মিয়ার ভাগ্নে আসামি মোঃ লিয়াকত আলী বাবরু মিয়ার বাড়িতে থেকে লেখাপড়া করতো। আসামি মোঃ লিয়াকত আলী রাজাকারদের নেতা ছিল। সাক্ষী জবানবন্দীতে আরো বলেন, ১৯৭১ সালের ভাদ্র মাসের প্রথম সপ্তাহে কোন একদিন বেলা আনুমানিক ১০টার সময় আমি আমার বাবার দোকানে আসলে বাবা আমাকে বাড়ি থেকে বিস্কুটের টিন আনার জন্য পাঠায়। তখন আমার বাবার দোকানে আমার বড় ভাই জুম্মন মিয়াও ছিল। আমি বাজার থেকে বাড়িতে যাওয়ার সময় দেখি আসামি লিয়াকত আলী ও আমিনুল ইসলাম ওরফে রজব আলী তাদের সঙ্গীয় ১০/১২ জন রাজাকার নিয়ে ফান্দাউক বাজারের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। বাড়ি থেকে বিস্কুটের টিন নিয়ে বাজারে বাবার দোকানে ফিরে এসে দেখি আমার ভাই জুম্মন মিয়া কাঁদছে। সে তখন বলে যে , আসািম লিয়াকত আলী ও আমিনুল ইসলাম ওরফে রজব আলীসহ ১০/১২ জন রাজাকার আমার বাবাকে ধরে ফান্দাউক বাজারের কামিউনিটি হলে অবস্থিত রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে গিয়েছে। আমার বাবাকে ধরার আগে বাজারে থাকা বাচ্চু মিয়াকে রাজাকারা ধরেছিল। এবং তাকেসহ আমার বাবাকে রাজাকাররা ঐ ক্যাম্পে নিয়ে যায়।
×