ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বস্তুক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ঘোষণা ইউনেস্কোর

শীতলপাটির আঁতুড়ঘর বাংলাদেশ, মিলল বিশ্ব স্বীকৃতি

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ৭ ডিসেম্বর ২০১৭

শীতলপাটির আঁতুড়ঘর বাংলাদেশ, মিলল বিশ্ব স্বীকৃতি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আরও একটি অর্জন বাংলাদেশের। এবার বিশ্বস্বীকৃতি লাভ করল ঐতিহ্যবাহী শীতলপাটি। ‘ট্র্যাডিশনাল আর্ট অব শীতলপাটি ওয়েভিং অব সিলেট’ এখন পৃথিবীর নির্বস্তুক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। জাতিসংঘের শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো এই স্বীকৃতি প্রদান করেছে। বুধবার শীতলপাটিকে ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ অব হিউম্যানিটি ঘোষণা করা হয়। আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পাশাপাশি, শীতলপাটি বুনন শিল্প বাঁচিয়ে রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে। ইউনেস্কোর ‘ইন্টারগবর্নমেন্টাল কমিটি ফর দ্য সেফগার্ডিং অব দ্য ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজে’র দ্বাদশ সম্মেলন এখন চলছে দক্ষিণ কোরিয়ার জেজু দ্বীপে। সেখান থেকেই আসে নতুন এই অর্জনের শুভ সংবাদ। আনুষ্ঠানিক ঘোষণার সময় সভাস্থলে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের ৮ প্রতিনিধি। জাতীয় জাদুঘরের সচিব শওকত নবী, কীপার ড. শিখা নূর মুন্সী, ডেপুটি কীপার আসমা ফেরদৌসী, সিলেটের প্রসিদ্ধ পাটি শিল্পী গীতেশচন্দ্র দাশ ও হরেন্দ্রকুমার দাশ। তারা এখনও কোরিয়ায় অবস্থান করছেন। সম্মেলনে আরও যোগ দিয়েছেন বাংলা একাডেমির পরিচালক ড. শাহেদা খাতুন ও লোক গবেষক ড. ফিরোজ মাহমুদ। মোবাইল ফোনে জনকণ্ঠকে তিনি জানান, আগে থেকেই আশা করা হচ্ছিল শীতলপাটি ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজের স্বীকৃতি লাভ করবে। মঙ্গলবারই ঘোষণা আসার কথা ছিল। সময়ের অভাবে সেটি হয়নি। পরে বুধবার আবেদন ফাইলের সর্বশেষ পয়েন্টটি নিয়ে আলোচনা হয়। নাতিদীর্ঘ আলোচনা শেষে আসে চূড়ান্ত ঘোষণা। ‘ট্র্যাডিশনাল আর্ট অব শীতলপাটি ওয়েভিং অব সিলেট’ লাভ করে বিশ্বের নির্বস্তুক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি। তিনি জানান, ইউনেস্কোর পাঁচটি শর্তই পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে শীতলপাটি। এটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল। এ ছাড়াও কিছু যুক্তি উপস্থাপনের বিষয় ছিল। সব মিলিয়ে কমিটি সন্তুষ্ট হয়েছে। তাই এসেছে স্বীকৃতি। এ প্রসঙ্গে ইমেলে জনকণ্ঠকে জাদুঘরের কীপার ড. শিখা নূর মুন্সী জানান, এর আগে প্রাথমিক আবেদনের যৌক্তিকতা যাচাই-বাছাইয়ের কাজ করেছিল ইউনেস্কোর বিশেষজ্ঞ কমিটি। ছয় দেশের ছয় প্রখ্যাত আইসিএইচ বিশেষজ্ঞ নিয়ে গঠিত সাবসিডিয়ারি বডি এক বছর ধরে বিভিন্ন দেশের মনোনয়ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাদের অভিমত জানায়। পরে ২৪ সদস্যবিশিষ্ট মূল কমিটির বিবেচনার জন্য প্রেরণ করে। সে কমিটি থেকেই পাওয়া হলো সুখবরটি। শীতলপাটির বিশ্বস্বীকৃতি লাভ করায় বেশ খুশি সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, সিলেটের শীতলপাটির অনেক সুনাম। দেশের সবাই জানেন। সেই সুনাম ও ঐতিহ্যকে আমরা ইউনেস্কার সামনে তুলে ধরেছি। যথাযথভাবে তুলে ধরতে পেরেছি বলেই সংস্থাটি গ্রহণ করেছে। এখন শীতলপাটির ঐতিহ্য ও চর্চা বাঁচিয়ে রাখার লক্ষ্যে বিশেষ উদ্যোগ নেয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে বলে জানান মন্ত্রী। জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী বলেন, শীতলপাটির আবেদন ফাইল তৈরি করেছে জাদুঘর। এ জন্য প্রায় এক বছর আমাদের মাঠপর্যায়ে কাজ করতে হয়েছে। ভাল রেজাল্ট আসায় শ্রম সার্থক হয়েছে বলে জানান তিনি। মানবজাতির উল্লেখযোগ্য মনোগত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের প্রয়োজনে ২০০৩ সালে ইউনেস্কো একটি সমঝোতা চুক্তি অনুমোদন করে। এই সমঝোতা চুক্তির অধীনে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মনোগত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়। ২০১৬ সাল পর্যন্ত ১৭১ রাষ্ট্র এই সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। ২০০৯ সালের ১১ জুন চুক্তিতে স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ। ২০১২ সাল থেকে সরকারের পক্ষে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় মানবজাতির মনোগত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতিনিধিত্বমূলক তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য উপাদান পাঠানো শুরু করে। ইউনেস্কোর প্রথম স্বীকৃতি লাভ করে বাংলাদেশের বাউল সঙ্গীত। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী জামদানি বুননশিল্প লাভ করে এই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। গত বছর মঙ্গল শোভাযাত্রা একই স্বীকৃতি লাভ করে।
×