ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গী সংশ্লিষ্টতামুক্ত ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র! -স্বদেশ রায়

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ৭ ডিসেম্বর ২০১৭

জঙ্গী সংশ্লিষ্টতামুক্ত ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র! -স্বদেশ রায়

ব্যাংকিং খাত খুবই সেনসেটিভ খাত। এ খাত নিয়ে নাড়াচাড়া করতে হয় খুবই সাবধানে ও সতর্কতার সঙ্গে। এখানে কোনরূপ ভুল হলে বা ভুল প্রচার হলে, কোনরূপ কোন সন্দেহ দেখা দিলে বিরাট বিপর্যয় ঘটে যায়। কোন দেশে যদি কখনও ব্যাংক ফেল করা শুরু হয় তাহলে ওই দেশের অর্থনীতি কলাপসড হতে বাধ্য হয়। আরও সোজা কথায় বলা যায়, শেয়ার বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় নির্দিষ্ট কয়েক লাখ বা বাজার বড় হলে কয়েক কোটি মানুষের ব্যক্তিগত অর্থনীতি। অন্যদিকে ব্যাংক ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার ধাক্কাটা পড়ে গোটা অর্থ ব্যবস্থার ওপর। সরকার প্রধান শেখ হাসিনা এ বিষয়ে অনেক বেশি সচেতন শুধু নন, তিনি যে কতটা ধৈর্যের সঙ্গে এ বিষয়ে এগুচ্ছেন তা বোঝা যায় তাঁর সরকারের ইসলামিক ব্যাংক সম্পর্কিত সিদ্ধান্তের ভেতর দিয়ে। ২০১২, ১৩ ও ১৫ সালে জামায়াত-বিএনপি এ দেশে যে আরবান গৃহযুদ্ধের মাধ্যমে শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করে, গুলি করে, জবাই করে হত্যা করেÑ পাশাপাশি হাজার হাজার কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিগত সম্পদ নষ্ট করেÑ তাদের এই আরবান গৃহযুদ্ধের সকল ব্যয়ভার বহন করে ইসলামিক ব্যাংকসহ জামায়াত-বিএনপি নিয়ন্ত্রিত কয়েকটি ব্যাংক। জঙ্গী ও সন্ত্রাসী দিয়ে একটি গৃহযুদ্ধ পরিচালনা করতে হলে কী বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয় তা যারা সমর বিশেষজ্ঞ তারা ভাল বলতে পারবেন। আবার ব্যাংক থেকে এই অর্থ দিলেই চলে না, এই অর্থ বিভিন্ন স্থানে পৌঁছানোর জন্যও নিরাপদ রুট লাগে এবং সেই রুট তৈরি করার জন্যও বিপুল অর্থ ব্যয় করতে হয়। ২০১৫ সালে খালেদা জিয়া যখন তার গুলশান অফিসে বসে সরকারের বিরুদ্ধে ওই গৃহযুদ্ধের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন, সে সময়ে শুধুমাত্র সিরাজগঞ্জ শহরে বোমা হামলা পরিচালনার জন্য একটি গাড়িতে পাঠানো হচ্ছিল কয়েক কোটি টাকা। যা রাতে প্রশাসনের হাতে ধরা পড়লে ম্যাজিস্ট্রেটকে তাদের ছেড়ে দেয়ার জন্য তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সিনহার অফিস থেকে ফোন করা হয়। একজন প্রধান বিচারপতিকেও এই জঙ্গী অর্থ সরবরাহের কাজে লাগাতে হলে কত অর্থ ব্যয় করতে হয় সেটা বুঝতে কারও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। কোথায়, কীভাবে কারা এই অর্থ দিচ্ছিল ও কারা এ অর্থ সরবরাহ করছিল সবই সরকারের জানা। তার পরেও সরকার ওই ব্যাংকগুলোতে পরিবর্তন আনছে ধীরে ধীরে। সরকার জানে নিচের দিকে তারা এ পরিবর্তন এখনও আনতে পারেনি। তার পরেও সরকার খুব ধীরগতিতে যাচ্ছে। তবে জঙ্গী অর্থায়নের এই ব্যাংকগুলোতে এই পরিবর্তন আনা শুরু হওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশে বিএনপি ও জামায়াত নামক দুটি জঙ্গী সংগঠনের প্রাণভোমরায় হাত পড়েছে। এর পরে বিএনপি ও জামায়াতের মালিকানাধীন অনেক ব্যাংক থেকে টাকা অবৈধভাবে তুলে অফসোর ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে। যার অনেক কিছু ইতোমধ্যে সরকার জানে। আবার অনেক প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতিবাজ বড় কর্মকর্তাদের কারণে সঠিক ব্যবস্থা না নিয়ে খুবই নরমভাবে যাওয়া হয়েছে। সরকার যে সেগুলো জানে না তা মনে করা ভুল হবে। তার পরেও সরকার ওই সব দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে তাদের অবসরে যাওয়ার সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করছে। তারও মূল কারণ যাতে ব্যাংকিং খাতে বড় কোন ধাক্কা না লাগে। দেশের সার্বিক অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। সরকার প্রধান বা অর্থমন্ত্রী যেভাবে বিষয়টি নিয়ে এগুচ্ছেন সরকারের সকলে সেভাবে এগুতে পারছেন না। তাছাড়া আওয়ামী লীগ একটি মাল্টি কালচারের পার্টি। এখানে এখনও অনেকে আছেন যারা বাম অর্থনীতি থেকে পুরোপুরি বিশ্বাস তুলে নিতে পারেননি। তাঁরা এখনও ব্যক্তি খাতে সরকারের অনেক বেশি নিয়ন্ত্রণ চান। বাস্তবে তাঁরা ঠিক ক্যাপিটালিজমের এই মার্কেট ইকোনমি বোঝেন না। তাছাড়া শেখ হাসিনা যে অর্থনীতি প্রচলন করেছেন সংক্ষেপে তা মূলত ক্যাপিটালিজম ও সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার ইকোনমির এক সমন্বয়ের সঙ্গে সর্বোচ্চ ট্রাস্ট ইকোনমি। একে হাসিনোমিক্স বলা যেতে পারে। কথা বলে দেখেছি, শেখ হাসিনার দলের অনেকেই তঁাঁর এই অর্থনীতি বোঝেন না। তাই শেখ হাসিনা ও তাঁর অর্থমন্ত্রী যেভাবে ব্যাংকিং খাতকে নিয়ে এগুচ্ছেন, এটাকে সংস্কার করছেনÑ এটা অনেক জটিল কাজ। অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারকাতের সঙ্গে অনেকেই একমত নন। আমিও তাঁর গবেষণার সঙ্গে শতভাগ একমত নই। তবে এটা তো সত্য, পৃথিবীজুড়ে একটা মৌলবাদের অর্থনীতি, আর তাদের হেভেন ব্যাংকিং বা পরকালের চিন্তার ব্যাংকিং চালু হয়েছে। বাংলাদেশের ইসলামিক ব্যাংকসহ জামায়াতÑবিএনপি নিয়ন্ত্রিত ব্যাংকগুলো এই হেভেন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দেশে বড় আকারের মৌলবাদের অর্থনীতি কায়েম করেছে। আর যা কায়েম হয়েছে প্রায় চল্লিশ বছর ধরে তা ওভারনাইট পরিবর্তন করা যাবে না। সরকার প্রধান ও অর্থমন্ত্রী সেভাবেই কাজ করছেন। এই মৌলবাদী অর্থনীতি ও হেভেন ব্যাংকিং যারা পরিচালনা করছে তাদের ক্রমেই পরিবর্তন করতে হবে। অন্যদিকে এদের বিপরীতে নরমাল ব্যাংকিং খাতটি বড় করতে হবে। আর এটা মাথায় রেখে আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে নতুন ব্যাংক দিয়েছে। এ নিয়ে আওয়ামী লীগকে অনেক সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়। সমালোচনা যারা করেন তাদের একটু জীবনের কয়েনটির অপর পিঠের খবর নিলে জানতে পারবেন তারা কোন না কোনভাবে ওই জঙ্গীর অর্থ দ্বারা লালিত বা লাভবান। অন্যদিকে বাংলাদেশের মিডিয়ার সিংহভাগ নানাভাবে ওই জঙ্গী অর্থের কাছে জিম্মি। তাই ওই জঙ্গী অর্থের নড়াচড়াতে তারাও নড়াচড়া করে। দেশের প্রধানমন্ত্রী অধিকাংশ টক শো দেখেন না, দেশের দুটি পত্রিকা পড়েন না। এগুলোকে বাদ দিয়েই তাকে দেশ চালাতে হচ্ছে। কারণ তিনি জানেন ওইগুলো জঙ্গী অর্থে চলছে। জঙ্গী অর্থ সব সময় জঙ্গী রূপ নিয়েও আসে না। এরা সেই রূপকথার রাক্ষসের মতো। নানা রূপ ধারণ করে আসে। তাই এই জঙ্গী অর্থ অর্থাৎ বাংলাদেশের পাকিস্তানপন্থীদের প্রাণভোমরাকে হত্যা করা অনেক কঠিন কাজ। রূপকথার রাজপুত্ররা সে কাজ করতেন। এখন বাংলাদেশে সে কাজ করতে হচ্ছে বাস্তবের রাজকন্যা শেখ হাসিনাকে। যে কারণে এই মিডিয়ার বিরুদ্ধে শেখ হাসিনা একাই বলেন। তাঁর দলের অনেকেই মিডিয়ার ওই অংশের সঙ্গে আপোস করে চলেন। শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়ে যে পত্রিকা পড়েন না তাঁর শিক্ষামন্ত্রী সেই পত্রিকার অফিসে যান। এই হচ্ছে শেখ হাসিনার জন্য বাস্তবতা। যাহোক, তার পরেও মিডিয়ায় এই জঙ্গীদের মূল মুখপাত্র কে তা ২০১৩তেই উন্মোচন হয়ে গেছে। আমার দেশের ‘বাইচান্স এডিটর’ মাহমুদুর রহমানই মিডিয়ায় এই জঙ্গীদের মুখপাত্র। আর তাকে ঘিরে কারা আছে তাও ওই সময়ে স্পষ্ট হয়ে যায়। মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করার পরে যে ১৫ সম্পাদক তার মুক্তির দাবিতে বিবৃতি দিয়েছিলেন, বাংলাদেশে মিডিয়ায় এরাই মূলত নামে বেনামে জঙ্গী অর্থের পৃষ্টপোষক, অন্যদিকে জঙ্গী অর্থই এদের পালছে। তাই যখনই জঙ্গী অর্থের মূল জায়গা অর্থাৎ জঙ্গী অর্থ পরিচালনার ব্যাংকগুলোকে সংস্কারের কাজে হাত দিয়েছে সরকার এ সময়ে জঙ্গীরাও বসে থাকবে না। কারণ তাদের হাতে আছে মিডিয়ার বিশাল অংশ। তারা মিডিয়ার ওই অংশকে ব্যবহার করে আওয়ামী লীগের দেয়া ব্যাংকগুলো বা আওয়ামী লীগার নিয়ন্ত্রিত ব্যাংকগুলোর ওপর আঘাত হানবে। আর জঙ্গীরা অর্থাৎ আইএসআইয়ের এই এজেন্টরা অত্যন্ত বুদ্ধিমান ও পরিপক্ক। তারা ইতোমধ্যে সে কাজ শুরু করেছে। যখনই জঙ্গী অর্থায়ন বন্ধ ও বিএনপির লোকজনের তাদের ব্যাংকগুলো থেকে টাকা তুলে নিয়ে অফসোর ব্যাংকে পাঠানো বন্ধ করার দিকে সরকার নজর দিয়েছেÑ জামায়াত-বিএনপিও একটু গুছিয়ে নিয়ে আওয়ামী লীগ বা আওয়ামী লীগার নিয়ন্ত্রিত ব্যাংকগুলোর ওপর আঘাত হানতে শুরু করেছে। আর এ কাজটি তারা খুব সহজে করতে পারবে। কারণ, মিডিয়া মিথ্যা বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এমনকি একটি নিউজকে যদি একটু অন্যভাবেই উপস্থিত করে তাতেই একটা ব্যাংকের সর্বনাশ হয়ে যেতে পারে। ব্যাংক ব্যবস্থাটি চলে ট্রাস্টের ওপর। মডার্ন ইকোনমির এই ডিলটি পুরোপুরি একটি ট্রাস্ট ডিল। সরকার জঙ্গী অর্থায়ন বন্ধ করার জন্য জামায়াত-বিএনপি নিয়ন্ত্রিত ব্যাংকগুলোতে সংস্কার এনেছে, তবে ব্যাংকগুলোর ওপর যাতে মানুষের ট্রাস্ট নষ্ট না হয় সেদিকে শতভাগ খেয়াল রেখেছে। সরকারের দায় আছে দেশের অর্থনীতি ঠিক রাখার। অন্যদিকে জামায়াত-বিএনপি শুধু জঙ্গী অর্থায়ন করতে চায় তা নয়, তারা জানে দেশে জঙ্গীবাদ কায়েম করতে হলে দেশের ইকোনমি ধ্বংস করতে হবে। অর্থনীতি ধ্বংস করার অন্যতম উপায় হলো ব্যাংকগুলোতে লালবাতি জ্বালানো। তারা ইতোমধ্যে সে কাজে হাত দিয়েছে। তাদের প্রস্তুতি ছিল অনেক আগে থেকে, তবে সরকারকে ভয় পাচ্ছিল। সম্প্রতি খালেদার জনসভায় কয়েক হাজার মানুষ দেখে তারা মনে মনে সাহসী হয়ে উঠেছে। তাই তারা আওয়ামী লীগ আমলে দেয়া ব্যাংকগুলোর ওপর আঘাত করতে শুরু করেছে। এখানে তাদের অস্ত্র হচ্ছে মিডিয়া। মিডিয়ার মাধ্যমে তারা আওয়ামী লীগ আমলে বিভিন্ন সময়ে দেয়া ব্যাংক ও সরকারী ব্যাংকগুলো সম্পর্কে এমন সব নিউজ করাবে যাতে ওই সব ব্যাংকের ওপর থেকে মানুষের বিশ্বাস চলে যায় বা সন্দেহ হয়। আমানতকারীরা যাতে টাকা উঠিয়ে নেয়। এ কারণে সরকারকে, বিশেষ করে সরকার প্রধানকে সজাগ হতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে এখানে যাতে কোন সর্ষের ভেতরের ভূত ওই কাজে সাহায্য না করে।
×