ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জীবন ও সময়ের সখ্য ॥ সুব্রতা রায়

সমাজ ভবনা ॥ বিষয় ॥ বাঙালীর সময়জ্ঞান

প্রকাশিত: ০৩:৫৬, ৭ ডিসেম্বর ২০১৭

সমাজ ভবনা ॥ বিষয় ॥ বাঙালীর সময়জ্ঞান

জীবন ও সময়ের সখ্য নিবিড়তম। মানুষ জন্মাবে এবং সময়ের ব্যবধানে একদিন মৃত্যুবরণ করবে, ছোট্ট জীবনটিতে তাই সময় মেনে চলা অত্যন্ত জরুরী। উন্নত দেশের মানুষেরা সময়ের সঙ্গে কাজ করেছে বলেই এতটা উন্নত হতে পেরেছে এবং আজও উন্নত আছে সময়ের সঙ্গে কাজ করে বলেই। আমাদের দেশে পরীক্ষার হল ব্যতীত খুব কম জায়গাই আছে যেখানে নির্দিষ্ট সময়ে উপস্থিত হই। তবে কোন একটি জায়গায় সময় মেইনটেইন করে চলতে পারি মানে আমরা সময়মতো চলতে পারি। কিন্তু বাস্তবে অন্য জায়গায় যেমন অফিস, বাস, ট্রেনসহ বিভিন্ন মিটিংয়ে কি দেখতে পাই? সর্বত্র সময়কে অবমাননা ও অবহেলা করার এমন একটা সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে যা ব্যক্তি, পরিবার ও সামাজিক-জীবনকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। অথচ ব্যক্তি জীবনে সময় মেনে চললে যেমন- সময়মতো অফিসে যাওয়া, মিটিয়ে যাওয়া, যে কোন কাজ করা, খাওয়া-দাওয়া করা এতে প্রচুর আত্মতৃপ্তি পাওয়া যায়- নিজেকে খুব সুখী রাখা যায়। একজন মানুষ সময়মতো খাওয়া-দাওয়া করলে শারীরিকভাবে সুস্থ থাকবেন, অনেক ছোটখাটো রোগ থেকে মুক্তি পাবেন। সময়ের কাজ সময়মতো করলে কোন তাড়াহুড়া থাকে না, শান্তিপূর্ণভাবে কাজ করা যায় এবং কাজে ভুল হবার আশঙ্কা কম থাকে। অফিসে বা মিটিংয়ে নির্দিষ্ট সময়ে উপস্থিত হতে পারলে নিজেকে সময়চোর বা অপরাধী মনে হবে না, মিটিং বা নির্দিষ্ট কাজটি প্লান মোতাবেক করা যায়। এছাড়াও এই মানুষগুলো আশপাশের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য ও ভাল মানুষ হিসেবে বিবেচিত হবে। যে ব্যক্তি নির্দিষ্ট সময়ে সুষ্ঠুভাবে অফিসের কাজ শেষ করতে পারেন তাঁর পরিবারে ফিরে সুন্দর মন এবং তিনি আনন্দের সঙ্গে পরিবারের মানুষকে সময় দিতে পারেন। তেমনিভাবে ছাত্রজীবনে যে ব্যক্তিটি ছাত্রের মূল কাজ ‘অধ্যয়ন’ করেন পরবর্তী জীবনে তার নিজের প্রতি কোন আক্ষেপ থাকে না- নিজেকে দোষী করতে পারেন না। পারিবারিক জীবনে অশান্তির সূত্রপাত মূলত সময়কে ঘিরেই। সন্তানকে ও পরিবারের সদস্যদের সময় না দেয়ার অভিযোগ ঘরে ঘরে। পরিবারে সময় না দেয়ার প্রভাবও লক্ষ্য করার মতো। কিন্তু একটুখানি সময়সচেতন হলে একজন মানুষ সব অভিযোগের উর্ধে উঠে প্রজন্মকে উপহার দিতে পারেন সময়সচেতন হবার কৌশল। আমাদের দেশে এমন একটা প্র্যাকটিস চলছে যে চিঠিতে লেখা সময় অনুযায়ী কোন কাজ শুরু হলে অবাক হই। সাধারণত চিঠিতে লেখা সময়ের প্রায় দেড় দু’ঘণ্টা পর মিটিং শুরু হয়। বাস বা ট্রেনে ৮ ঘণ্টার জার্নি ১২ ঘণ্টা বা এর থেকেও বেশি লম্বা হয়। ৯টার অফিস শুরু হয় ১১টায়। এভাবে চলে আমরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি এবং আগামীকালও যদি সময়ের সঙ্গে চলতে না পারি তাহলে প্রতিবন্ধী রাষ্ট্রে পরিণত হতে আর বেশি সময় লাগবে না। কিন্তু এভাবে কি একটি দেশ চলতে পারে বা চলতে দেয়া যায়? প্রয়োজন ব্যক্তি-পর্যায়ে সচেতনতা আর সরকার ও রাষ্ট্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের দৃষ্টিনিক্ষেপ। তাই আর দেরি নয়- জবাবদিহিতা, জোরদার মনিটরিং ব্যবস্থা, প্রয়োজনে জরিমানা গ্রহণের মাধ্যমে সময়ের সঙ্গে চলার ব্যবস্থাগ্রহণ জরুরী। --কুড়িগ্রাম থেকে
×