ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

শান্তি মিশনে নারী পাইলট

প্রকাশিত: ০৩:৫২, ৭ ডিসেম্বর ২০১৭

শান্তি মিশনে নারী পাইলট

নারীরা পিছিয়ে নেই বললেও কম বলা হয়। এবার দুর্গম কঙ্গো শান্তি মিশনে যাচ্ছেন বাংলাদেশের দুই নারী পাইলট। উল্লেখ্য, দু’জন নারী পাইলট ছাড়াও ১৫ জন নারী অফিসারসহ কঙ্গোয় জাতিসংঘ শান্তি রক্ষী মিশনে নিয়োজিত বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর তিনটি কন্টিজেন্টের মোট ৩৫৮ জন শান্তি রক্ষী প্রতিস্থাপন শুরু করেছে। এরই অংশ হিসেবে এই দুই নারী পাইলট সাত ডিসেম্বর যাত্রা করেন গোলযোগ ও অশান্তিতে পরিপূর্ণ কঙ্গোর উদ্দেশে। এর মধ্য দিয়ে তারা একদিকে কঙ্গোর মতো দুর্গম পার্বত্য ও বনাঞ্চল অধ্যুষিত শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখতে সমর্থ হবেন, অন্যদিকে রাখতে পারবেন পেশাদারিত্বের স্বাক্ষর। এতে করে বহির্বিশ্ব তথা জাতিসংঘে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও সমুজ্জ্বল হবে নিঃসন্দেহে। উল্লেখ্য, কঙ্গোর বাইরেও অশান্তি ও গোলযোগপূর্ণ আফ্রিকা মহাদেশের আরও কয়েকটি দেশে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী এমনকি পুলিশ বাহিনীর সদস্যরাও। বিশ্বব্যাপী শান্তিরক্ষায় সার্বিকভাবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবস্থান দ্বিতীয়। এতে একদিকে যেমন মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পরিমাণ বাড়ছে, অন্যদিকে সাফল্য অর্জনের পাশাপাশি উজ্জ্বল হচ্ছে দেশের ভাবমূর্তি। সর্বোপরি পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও এগিয়ে এসেছে এক্ষেত্রে। নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের পাশাপাশি অর্থনৈতিক আয়-উপার্জন তথা ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রেও এটি নিঃসন্দেহে একটি বড় অগ্রগতি। এই গৌরবের ভাগিদার নারী ও পুরুষ উভয়েই। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস)-এর সর্বশেষ গৃহস্থালি বা খানা আয়-ব্যয় জরিপ বিশ্লেষণ করে দেখা যায় নারী পরিচালিত পরিবারগুলোর দারিদ্র্যের হার পুরুষ পরিচালিত পরিবারগুলোর তুলনায় কম। যে পরিবারের প্রধান নারী সেই পরিবারে দারিদ্র্যের হার কমে এবং ক্রয়ক্ষমতা বাড়ে। তথ্য হিসেবে এটি যে অভিনব ও চমকপ্রদ তাতে কোন সন্দেহ নেই। সময় ও চাহিদার অনিবার্য প্রয়োজনে বাংলাদেশের নারীরা রাজনীতি-অর্থনীতি-শিক্ষা-দীক্ষাসহ নানা ক্ষেত্রে এগিয়ে এসেছে। অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা অর্জনের ক্ষেত্রেও নারীর অগ্রগতিকে অস্বীকার করা যায় না। এর বাইরেও নারী-পুুরুষের বিভিন্ন কর্মস্থলে থাকার সুবাদে এবং প্রবাসে কর্মরত বাংলাদেশীদের পরিবারের ক্ষেত্রে সংসার পরিচালনাসহ সিদ্ধান্ত গ্রহণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন নারীরাই। এসব পরিবারের আর্থিক সক্ষমতা, আয়-ব্যয়, হাট-বাজার, শিক্ষা-স্বাস্থ্য, সর্বোপরি সুবিধা-অসুবিধা, সমস্যা-সঙ্কট মোকাবেলায় দেখা যায় পুরুষের তুলনায় নারীরাই সফল হচ্ছে বেশি সংসার পরিচালনায়। সাধারণভাবে নারী পরিচালিত পরিবারগুলোর ভালভাবে চলার অবশ্য কারণও আছে। নারীরা স্বভাবতই মায়ের জাত। পরিবারের সব সদস্যের মনমানসিকতা, চাওয়া-পাওয়া-আশা-আকাক্সক্ষা এমনকি সমস্যা ও সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে সে সুবিদিত। এক্ষেত্রে পুরুষরা রোজগার ও আয়-উপার্জনের নিমিত্ত অধিকাংশ সময় বাইরে অতিবাহিত করতে বাধ্য থাকায় পরিবারের সার্বিক চাহিদায় সম্পৃক্ত থাকতে পারেন না তেমনভাবে। ফলে তিনি সর্বদাই সংসারের রাশ টেনে ধরতে পারেন না। এর পাশাপাশি এটাও বলতেই হয় যে, নারীরা তুলনামূলকভাবে মিতব্যয়ী। তিনি আয়-উপার্জনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সংসার ব্যয় নির্বাহ করতে অধিকতর পারঙ্গম। পরিবারের সব সদস্যের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকায় এবং চাওয়া-পাওয়া সম্পর্কে সম্যক জানার ফলে খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আনুষঙ্গিক ব্যয় নিষ্পন্ন করা তার পক্ষে সম্ভব সুচারুভাবে। পুরুষ প্রধান প্রায়ই এক্ষেত্রে খেই হারিয়ে ফেলে। ফলে সংসারে অশান্তি ও খিটিমিটি লাগে প্রায়ই। অন্যদিকে নারীরা অনেক ক্ষেত্রে প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সক্ষম হন। আর যাই হোক, নারীর সহিষ্ণুতা তো সুবিদিত। তার পরও বলতেই হয়, নারী-পুরুষ একে অপরের পরিপূরক। একা নারী কিংবা পুরুষ কখনই ‘সম্পূর্ণ’ হয়ে ওঠে না অথবা বিকশিত হয় না। বরং একে অপরকে বোঝা, সমঝোতা ও সহযোগিতার মাধ্যমেই সংসারে সুখ-শান্তি নিশ্চিত করা সম্ভব। এমনকি দারিদ্র্য কমাতেও তা পালন করে সহায়ক ভূমিকা। অন্তত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি সেই সাক্ষ্যই বহন করে। বিদেশের বিভিন্ন দেশে শান্তিরক্ষা মিশনে পুরুষের পাশাপাশি নারীর অংশগ্রহণকে অভিনন্দন জানিয়ে আমরা তাদের সাফল্য কামনা করি।
×