ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গাদের সব ধরনের অপরাধ থেকে বিরত রাখতে হবে ॥ ইনু

প্রকাশিত: ০৬:৫৫, ৬ ডিসেম্বর ২০১৭

রোহিঙ্গাদের সব ধরনের অপরাধ থেকে বিরত রাখতে হবে ॥ ইনু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের কারণে মাদক ও অস্ত্র চালান আসার ঘটনা সম্প্রতি বাড়ছে। মানবতার স্বার্থে আশ্রয় দেয়া রোহিঙ্গাদের এসব অপরাধমূলক কর্মকান্ড- দেশের তরুণ প্রজন্মকে আরও উসকে দিচ্ছে। এসব থেকে রোহিঙ্গাদের বিরত রাখতে না পারলে দেশে অপরাধ আরও ছড়িয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে মাদকবিরোধী সংগঠন ‘মানস’ আয়োজিত ‘রোহিঙ্গা সমস্যা ও মাদকাসক্তি : বর্তমান প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আলোচনা সভায় মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন ও সভাপতিত্ব করেন মানসের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক ড. অরূপরতন চৌধুরী। তথ্যমন্ত্রী বলেন, যতদিন রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অবস্থান করবে ততদিন তাদের সাম্প্রদায়িকতাসহ সব ধরনের অপরাধ থেকে বিরত রাখতে হবে। ইতিমধ্যে মাদক ও অস্ত্র চালানের সময় আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অনেক রোহিঙ্গাকে আটক করেছে। তারা বাংলাদেশের কারাগারে আটক। পুনরায় এসব ঘটনা ঘটলে বাংলাদেশ সরকার আরও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার বিষয় সম্পর্কে ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের জানাতে হবে। ক্যা¤েপর প্রতিটি রোহিঙ্গার ঘরগুলোকে তল্লাশি করতে হবে। শুধু রোহিঙ্গা পুরুষ নয়, নারীরাও মাদক চালানে যুক্ত রয়েছে। মাদক ও অস্ত্র পাচার রোধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি রয়েছে। হাসানুল হক ইনু বলেন, বাংলাদেশ থেকে মাদক নিরাময় করতে হলে এটিকে জাতীয় সমস্যা হিসেবে ঘোষণা করা প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রীর সমন্বয়ে একটি জাতীয় টাস্কফোর্স গঠন করতে হবে। দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাদকবিরোধী কমিটি গঠন করে এর কুফল সম্পর্কে প্রচার চালালে মাদক নিরাময় সম্ভব হবে। তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তায় নেয়াখালীর ভাষাণটেক চরে স্থানান্তর করা হবে। তবে এটি রোহিঙ্গাদের স্থায়ী ঠিকানা নয়, তাদের অস্থায়ীভাবে বসবাসের জায়গা দেয়া হচ্ছে। অনেকে এটি নিয়েও বিতর্ক তুলেছেন। রোহিঙ্গাদের নিরাপদ স্থানে রাখতে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি মাদক-ভোক্তাদের পুনর্বাসন এবং বিক্রেতাদের আইনের আওতায় এনে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানান তথ্যমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে উপস্থাপিত মূলপ্রবন্ধের তথ্যানুযায়ী, কক্সবাজার জেলার উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গারা দিন দিন অপরাধপ্রবণ হয়ে উঠছে। রোহিঙ্গাদের হামলার শিকার হচ্ছেন স্থানীয় সাধারণ মানুষ থেকে পুলিশ এমনকি এনজিও কর্মকর্তা ত্রাণ সহায়তা দিতে আসা লোকজন। এ পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের হামলার শিকারে প্রাণ হারিয়েছেন দু’জন। আর বিভিন্ন সময়ে আহত হয়েছেন পুলিশের কর্মকর্তাসহ কয়েকজন। অন্যদিকে টেকনাফ ও উখিয়ার বিভিন্ন শিবিরে অবস্থান করা রোহিঙ্গাদের মধ্যে ১৩৮ জন এইচআইভি পজিটিভ রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ অবস্থায় দেশে এইডসের ঝুঁকি আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। মানসের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক ড. অরূপরতন চৌধুরী এ বিষয়ে বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশে মাদকাসক্তদের পরিসংখ্যানের কোন তথ্য না থাকলেও বেসরকারীভাবে দেশে প্রায় ৭০ লাখের বেশি মাদকাসক্ত রয়েছে। যার ৮০ শতাংশই যুবক, তাদের ৪৩ শতাংশ বেকার। গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, শতকরা ৬০ ভাগ মাদকাসক্ত বিভিন্ন সন্ত্রাসীমূলক কর্মকা-ে জড়িত। কিছুদিন আগেও যারা ফেনসিডিলে আসক্ত ছিল তারা এখন ইয়াবাতে আসক্ত। প্রতিদিন যেমন ইয়াবা ধরা হচ্ছে তেমনি হাজার হাজার পিস ইয়াবা তরুণরা গ্রহণ করছে। অবস্থা পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, রোহিঙ্গা সমস্যার কারণে যেমন মাদক পাচার বৃদ্ধি পাচ্ছে তেমনি ভবিষ্যতে মাদকাসক্তির সংখ্যাও অধিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এখন থেকেই আমরা যদি রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান না করতে পারি তবে মাদকাসক্ত ব্যক্তির সংখ্যা ও মাদক পাচার রোধ করা আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। সেইসঙ্গে এইডস রোগের প্রাদুর্ভাব ও বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি বলে জানান তিনি। শিবিরে আশ্রয় নেয়া অনেক রোহিঙ্গাই জানে না এইডসের বিষয়ে। অথচ খুব সহজেই এইডস সাধারণ মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারে বলে জানান মানসের সদস্য সাদিয়া শারমিন। তিনি বলেন, এইডস রোগীর সামান্য হাত কেটে বের হওয়া রক্তের সুস্থ কারও ক্ষতে লাগলেও এইডস ছড়াতে পারে। রোহিঙ্গা শিবিরে সবাই মিশ্রিত অবস্থায় আছে। সেই জায়গাটি অনিরাপদ। শীঘ্রই সকল রোহিঙ্গার স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে এইডস নির্ণয় জরুরী হয়ে পড়েছে। এছাড়া অনেক রোহিঙ্গা নারী দেহব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। যার ফলে স্থানীয় পুরুষরাও এইডসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
×