ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

তানিয়া হক ভূইয়া

এক সুপার পাওয়ারের আত্মহনন

প্রকাশিত: ০৬:৪৭, ৬ ডিসেম্বর ২০১৭

এক সুপার পাওয়ারের আত্মহনন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম এশিয়ায় লম্বা সফরকালে যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক দশক ধরে এ অঞ্চলের কতৃত্বের ক্ষয়িষ্ণু দিকটি ফুটে উঠেছে। এটি আংশিকভাবে চীনের অবকাঠামোগত দ্রুত বৃদ্ধির ফলে ঘটেছে। যাকে একুশ শতকের নতুন আঞ্চলিক আদেশ ‘এশিয়া ফর এশিয়ানস’ বলা হচ্ছে। ২০১৩ সাল থেকে এশিয়ার দেশগুলোতে উন্নয়ন খাতে দ্রুত পরিবর্তন হতে শুরু করেছে। এতে সম্ভাব্য অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়েছে। চীন বিশ্বের অর্থনীতিতে মূল চালিকাশক্তি হিসেবে উদ্ভূত হয়েছে। এটা সক্রিয়ভাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে, যা এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। ট্রাম্প প্রশাসনকে এ জন্য ত্রিমুখী ঝড়ের বিধ্বংসী নীতির প্রতিদান দিতে হচ্ছে। ট্রাম্পের আমেরিকা ফার্স্ট বৈদেশিক নীতির কারণে এই অঞ্চলের সহযোগী ও প্রতিদ্বন্দ্বী উভয়কেই হতাশ করেছে। টুইটারে ট্রাম্পের উদারপন্থীদের ক্রমাগত আক্রমণ করা ও ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ বাণিজ্য চুক্তি থেকে সরে আসায় যুক্তরাষ্ট্র ক্রমেই একাকী হয়ে যাচ্ছে। এতে নিজের সবচেয়ে কাছের মিত্রদের বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। এই অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারদের একজন এ বছরের শুরুতে মহাপরাক্রমশালী দেশটি কি আত্মহত্যা করছে এমন প্রশ্নের উত্তরে হ্যাঁ বলেছিল। যুক্তরাষ্ট্র এখন তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীদের ওপর একটি উল্লেখযোগ্য সামরিক প্রকল্প বজায় রাখছে। এটি ক্রমশ এই শতাব্দীতে যে কোন উপায়ে যুদ্ধে হারাতে : বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রকে নির্ধারিত করা হয়েছে। এদিকে চীন বিশ্বজুড়ে নিজের ইমেজকে উজ্জ্বল ও জোরালোভাবে রূপায়ণ করতে ব্যস্ত রয়েছে। ঘটনাগুলোর একটি পরিক্রমা হলো কমিউনিস্ট সরকার এখন বৈশ্বিকীকরণের এক অভিভাবক ও বহুপাক্ষিক কূটনীতি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ট্রাম্পের ক্ষমতাসীন হওয়ার পর বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের একটি ভার্চুয়াল পতন হয়েছে। পিউ রিসার্চ সেন্টারের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বের আন্তর্জাতিক আস্থা গত বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি অনুভূত হয়েছে। বৈশ্বিক ভূরাজনীতিতে নতুন একটি দেশের সৃষ্টি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের এশিয়ান সহযোগীদের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্টের ক্ষমতাভিত্তিক বিশ্বাস কমে যথাক্রমে ৭১ ও ৫৪ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বের বৃহত্তম মুসলমান দেশ ইন্দোনেশিয়ায় এটি ৪১ শতাংশ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ধ্বংস হয়ে যাওয়া নমনীয় শক্তির অবশিষ্ট আর কিছুই নেই। কথাবার্তায় কঠোরতা সত্ত্বেও ট্রাম্প চীন সফরের সময় কোন বড় ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখাননি। বিশেষ করে উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ চীন সাগর সমস্যা নিয়ে মূল অর্থনৈতিক ও ভূতাত্ত্বিক অঞ্চলের মতনৈক্যের ক্ষেত্রকে সুরক্ষিত করতে তিনি কাজটি করেছিলেন। নিজ দেশের জনগণের ওপর নিজের ইচ্ছা আরোপ করা অসম্ভব। এমনকি নিজ দেশের নাগরিক সুবিধার জন্য অন্য দেশের সুবিধা নিতে বেজিংকে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। যদিও ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারাভিযানে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ভারসাম্যের কথা বলেছিলেন। ভিয়েতনামে অনুষ্ঠিত এশিয়া প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন (এপেক) শীর্ষ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র দৃশ্যত বিচ্ছিন্ন ছিল। ভিয়েতনামসহ জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও সিঙ্গাপুরসহ ১১টি দেশ টিপিপি থেকে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্তের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন বলে মনে করে। এই টিপিপি দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোকে মার্কিন বাজারে বাণিজ্য করার বিশেষ সুযোগ করে দিয়েছিল। তখন চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব বলয় থেকে জাপান ও অস্ট্রেলিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিভা বলে মনে করা হতো। মার্কিন মিত্ররা পুনর্নির্মাণের প্রত্যাশায় পুনর্নির্মানণ করেছে ও বাণিজ্য চুক্তির নাম পরিবর্তন করেছে। অনেক এশিয়ান সরকার ঘরোয়া সুরক্ষামূলক বিরোধীদের মধ্যে মূল টিপিপি চুক্তির সঙ্গে যুক্ত করতে যথেষ্ট রাজনৈতিক বিনিয়োগ বিস্তৃত করেছে। মূলত অর্থনৈতিক উদ্যোগের সঙ্গেত ওয়াশিংটনকে ছাড়িয়ে যায় এমন এক আলোচন হয়েছে।
×