ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

হারিয়েই গেলেন কারবার?

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ৬ ডিসেম্বর ২০১৭

হারিয়েই গেলেন কারবার?

মাহিয়ান দ্বীপ ॥ গত কয়েক মৌসুম ধরেই টেনিস বিশ্বের আলোচিত নাম এ্যাঞ্জেলিক কারবার। তবে ২০১৬ সালেই বিস্ফোরক ঘটে তার। অসাধারণ পারফর্মেন্সের সৌজন্যে নিজেকে নিয়ে যান অন্য এক উচ্চতায়। সে বছরের প্রথম গ্র্যান্ডস্লাম টুর্নামেন্ট অস্ট্রেলিয়ান ওপেন এবং শেষ মেজর টুর্নামেন্ট ইউএস ওপেনে চ্যাম্পিয়ন হন তিনি। শুধু তাই নয়, রিও অলিম্পিকেও মেলে ধরেন জার্মান টেনিসের এই প্রতিভাবান তারকা। সেইসঙ্গে বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থানটিও দখল করে নেন তিনি। কিন্তু দুর্ভাগ্য তার! পারফর্মেন্সের সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেননি কারবার। এই মৌসুমটাতে একেবারেই বাজেভাবে পার করেছেন ২৯ বছরের এই টেনিস তারকা। ব্রেমেন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী জার্মান-পোলীয় বংশোদ্ভূত এ্যাঞ্জেলিক কারবারের পেশাদার টেনিসে অভিষেক ঘটে ২০০৩ সালে। কিন্তু মাত্র তিন বছর বয়স থেকেই টেনিস খেলতে শুরু করেছিলেন তিনি। পরবর্তীতে কিশোরদের প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। জার্মানিতে খেলা শুরু করে ইউরোপের সর্বত্র অংশ নিতে থাকেন ধীরে ধীরে। কিন্তু ২০০৩ সালের পূর্ব-পর্যন্ত তিনি কোন শিরোপা লাভ করতে সক্ষম হননি। ১৫ বছর বয়সে পেশাদারি টেনিসের দিকে ধাবিত হন তিনি। আক্রমণধর্মী খেলোয়াড় হিসেবে পরিচিত কারবার আটটি এককের শিরোপাসহ ডব্লিটিএ ট্যুরের প্রত্যেক মাঠে কমপক্ষে একটি শিরোপা জয়ের স্বাদ পেয়েছেন। তার মধ্যে ২০১৬ সালের অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের প্রথম গ্র্যান্ড স্লামের শিরোপা অন্যতম। কেননা সেবার দুর্দান্ত ফর্মে থাকা আমেরিকান টেনিসের জীবন্ত কিংবদন্তি সেরেনা উইলিয়ামসকে হারিয়ে। কিংবদন্তি স্টেফি গ্রাফের পর মেয়েদের এককে প্রথম গ্র্যান্ডসøামজয়ী জার্মান তারকা হওয়ার রেকর্ডও গড়েন তিনি। ক্যারিয়ারের প্রথম মেজর ট্রফি হাতে নিয়ে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি কারবার। নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘এর জন্যই আমি সারাটা জীবন পরিশ্রম করেছি। এখন আমি বলতে পারি, আমি একজন গ্র্যান্ডসøামের চ্যাম্পিয়ন। সবাই আমাকে রোবট ভাবলেও আমি তা নই। প্রতিটি ম্যাচ জেতা তো আর কোনভাবেই সম্ভব নয়। আমি শুধু চেষ্টা করতে পারি।’ গত বছরের শেষটাও দুর্দান্তভাবে করেন তিনি। ফ্লাশিং মিডোতে চেক প্রজাতন্ত্রের ক্যারোলিনা প্লিসকোভাকে হারিয়ে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় গ্র্যান্ড স্লাম জিতেন কারবার। পাঁচ বছর আগে ফ্লাশিং মিডোতে সেমিফাইনাল খেলেছিলেন কারবার। তবে গত বছর স্বপ্নের ট্রফিটা উঁচিয়ে ধরেন তিনি। আনন্দে যেন আত্মহারা হয়ে পড়েছিলেন জার্মান ললনা, ‘এখানে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি হাতে দাঁড়ানোর অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। পাঁচ বছর আগে এখান থেকেই সবকিছু শুরু হয়েছিল, যখন আমি সেমিতে উঠেছিলাম। এখন আমার হাতে শিরোপা, এটা অবিশ্বাস্য!’ শুধু তাই নয়, দুটি গ্র্যান্ডস্লাম জয়ের পাশাপাশি প্রথমবারের মতো বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থানও দখল করেন কারবার। মহিলা এককে টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থানটি যেন নিজের করেই ফেলেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সেরেনা উইলিয়ামস। ২০১৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থানটি দখল করেছিলেন তিনি। এরপর থেকে ওই স্থান থেকে সরাতে পারেননি কেউ। একক রাজত্ব চলে তার টেনিসে। যেখানেই সেরেনা সাফল্যও যেন তার সঙ্গেই থাকত লেগে। তাই তো টানা ওই শীর্ষস্থান। অবশেষে তাকে হটিয়েই শীর্ষে উঠেন কারবার। কিন্তু গত বছরের সেই কারবারকে আর দেখা যায়নি এবার! ২০১৭ সালে কোন শিরোপাই জিততে পারেননি তিনি। বরং একের পর এক টুর্নামেন্ট থেকে লজ্জাজনকভাবে হেরে সমর্থকদের হতাশ করেন স্টেফি গ্রাফের এই উত্তরসূরি। যার ফলশ্রুতিতেই বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের সাবেক নম্বর ওয়ান তারকার অবস্থান এখন একুশে! গত দুই দশক ধরেই মেয়েদের টেনিসের আলোচিত নাম সেরেনা উইলিয়ামস। অসাধারণ সব পারফর্মেন্স উপহার দিয়ে নিজেকে নিয়ে গেছেন অন্য এক উচ্চতায়। টেনিস কোর্টে তার শ্রেষ্ঠত্বের কারণেই ভেনাস উইলিয়ামস, মারিয়া শারাপোভা, ভিক্টোরিয়া আজারেঙ্কা কিংবা ক্যারোলিন ওজনিয়াকিরা হয়ে উঠতে পারেননি মহাতারকা। কেননা বেশিরভাগ সময়েই যে শারাপোভা-ওজনিয়াকি-ভেনাসদের স্বপ্নকে ভেঙ্গে চুরমার করে শিরোপার হাসি হেসেছেন আমেরিকান টেনিসের এই জীবন্ত কিংবদন্তি। শারাপোভা-আজারেঙ্কার মতো তারকাদের অনুপস্থিতিতে এ মৌসুমে জ্বলে ওঠতে দেখা গেছে জেলেনা ওস্টাপেঙ্কো, গারবিন মুগুরুজা এবং স্লোয়ানে স্টিফেন্সের মতো প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের। তবে টেনিসবোদ্ধাদের ধারণা, মেয়েদের টেনিসে চলছে এখন তারকা সঙ্কট!
×