ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের কোচ হওয়ার জন্য আজ বিসিবিতে সাক্ষাতকার দেবেন ;###;তিনি, সম্ভাব্য তালিকায় আছেন আরও কয়েকজন

আবারও রিচার্ড পাইবাস!

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ৬ ডিসেম্বর ২০১৭

আবারও রিচার্ড পাইবাস!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ দক্ষিণ আফ্রিকা সফর শেষ করে আপাতত আন্তর্জাতিক ব্যস্ততা নেই বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের। ওই সফর শেষে ৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করা চান্দ্রিকা হাতুরাসিংহে পদত্যাগ করেন। কোচের পদ শূন্য হলেও জানুয়ারির আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট না থাকায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) খুব ব্যস্ততা দেখায়নি বরং জানানো হয়েছিল আপাতত অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্বে কাউকে রাখা হতে পারে। সেই সঙ্গে পেশাদার ও ভাল মানের কোচের খোঁজ-খবরও চালিয়ে গেছে বিসিবি। সেই ধারাবাহিকতায় আজ বিসিবির সঙ্গে আলোচনায় বসবেন ৫৩ বছর বয়সী রিচার্ড পাইবাস। ২০১২ সালে মাত্র ৫ মাসের জন্য বাংলাদেশ দলের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে বোর্ডের সঙ্গে চুক্তির বিষয়াদি নিয়ে বনিবনা না হওয়াতে চলে যান তিনি। আবারও তিনিই ঢাকায় এসেছেন মঙ্গলবার সন্ধ্যায়। আজ দুপুরের আগেই বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনসহ বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনায় বসবেন তিনি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিসিবির মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস। হাতুরাসিংহে পদত্যাগের পর থেকেই এ বিষয়টি নিয়ে দেশের ক্রিকেট অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সফলতম কোচ হিসেবে স্বীকৃত হয়েছিলেন তিনি। তার অধীনে বাংলাদেশ দল ঘরের মাটিতে টানা ৬টি ওয়ানডে সিরিজ জয় করে। পরাজিতদের তালিকায় তিন ক্রিকেট পরাশক্তি পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাও ছিল। ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল এবং ২০১৭ আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালও খেলেছে দল। দুটিই ছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটে সেরা সাফল্য। আর এসব কারণে নিজেদের সেরা ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিং ৭ নম্বরে উঠে আসে তারা। ২০১৬ সালের টি২০ এশিয়া কাপে ফাইনাল খেলা এবং টেস্ট ক্রিকেটে দুই পরাশক্তি ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর মতো অভূতপূর্ব ঘটনারও জন্ম দেয় বাংলাদেশ দল হাতুরাসিংহের অধীনে। তবে শৃঙ্খলার ব্যাপারে দারুণ কঠোর এবং নিজস্ব পদ্ধতিতে দল সাজানো ইত্যাদি কারণে নানা সময়ে বিতর্কিতও হয়েছেন। সবচেয়ে বড় ঘটনাটি ছিল দেশসেরা ক্রিকেটার ও তিন ফরমেটের ক্রিকেটে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে শৃঙ্খলাভঙ্গ এবং অভদ্রতার জন্য বিসিবিকে অভিযোগ করে ৬ মাসের জন্য নিষেধাজ্ঞাও দিয়েছিলেন তিনি। একটা সময় স্পিননির্ভর দলটিকে তিনিই পেস নির্ভরও করেছেন। দেশের মাটিতেও পেসবান্ধব উইকেটে ৪ পেসার নিয়ে দল সাজিয়ে দলকে জিতিয়েছেন। তাই সব বিতর্ককেই শেষ পর্যন্ত মাটিচাপা দিতে পেরেছেন তিনি। কিন্তু তার কঠোরতার কারণেই গুঞ্জন রয়েছে সিনিয়র বেশ কয়েকজন ক্রিকেটারের সঙ্গে মতানৈক্য তৈরি হয়েছিল। সে জন্যই কোচের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এমনটাই ধারণা করা হয়। বিসিবি দাবি করে পদত্যাগের কোন কারণ জানাননি হাতুরাসিংহে। তাই তারজন্য অপেক্ষা করা হবে এবং হাতুরাসিংহের সঙ্গে আলোচনা করেই পরবর্তী কোচ নিয়োগের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছিল বিসিবি। কারণ প্রতিটি সিরিজ শেষে কোচের মূল্যায়ন প্রতিবেদন থাকে, সেটি হাতুরাসিংহে এবার দক্ষিণ আফ্রিকা সফর শেষে দেননি। তবে প্রায় একমাস অপেক্ষার পরও হাতুরাসিংহে আসার ব্যাপারে তেমন কোন সবুজ সঙ্কেত দেয়নি। এ কারণে আর বসে থাকেনি বিসিবি। ভাল মানের পেশাদার কোচ সন্ধান করেছে। সে তালিকায় পাইবাস ছাড়াও ফিল সিমন্স ও জিওফ মার্শ আছেন এমনটাই জানা গেছে। যদিও জালাল এ বিষয়ে জানিয়েছেন, ‘জাতীয় দলের কোচের পদের জন্য পছন্দের তালিকায় পাইবাস ছাড়াও বিসিবির পছন্দের তালিকায় আরও দুইজন আছেন। তাদের সাক্ষাতের দিনক্ষণ নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত নাম প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না।’ পাইবাস অবশ্য প্রাথমিক আলোচনার জন্যই আসছেন। জানুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে হোমসিরিজের আগে একজনকে কোচ হিসেবে নিয়োগের তোড়জোড় শুরু করেছে বিসিবি। নিজের আগ্রহেই এসেছেন পাইবাস, বিসিবিও তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। ইংলিশ বংশোদ্ভূত এ দক্ষিণ আফ্রিকান কোচের বিষয়ে জালাল আরও বলেন, ‘হাতুরাসিংহের দায়িত্ব ছাড়ার পর থেকেই হাইপ্রোফাইল কোচ খুঁজছে বিসিবি। আমরা ইতোমধ্যে বেশ কয়েজন হাইপ্রোফাইল কোচের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা করেছি। এতে ভালভাবেই সাড়া দিয়েছেন রিচার্ড পাইবাস। তিনি পাকিস্তানের কোচ ছিলেন, দক্ষিণ আফ্রিকার বিভিন্ন প্রদেশের কোচ ছিলেন। কোচ হিসেবে এর আগে আমাদের সঙ্গে তার কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার জাতীয় দলের কোচ হিসেবে তিনি বিবেচিত হয়েছিলেন। চলতি বছর ভারতীয় দলেরও কোচের সংক্ষিপ্ত তালিকায় তার নাম ছিল।’ ২০১২ সালের মে মাসে অস্ট্রেলিয়ান স্টুয়ার্ট ল-এর স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন বাংলাদেশের কোচ হিসেবে। বিসিবির সঙ্গে তিক্ততায় ভরা ছিল তার ৫ মাসের কোচিং অধ্যায়। চুক্তিতে সই না করেই প্রধান কোচের দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি। বিসিবির বার্ষিক ৪৫ দিনের ছুটির শর্তেও আপত্তি ছিল পাইবাসের। অনুশীলনে খেলোয়াড়দের স্বাস্থ্যসম্মত খাবার না দেয়ার অভিযোগও তুলেছিলেন পাইবাস। বিসিবির বিপক্ষে এতসব অভিযোগের পর টিকে থাকাটা কঠিনই হয়ে গিয়েছিল পাইবাসের জন্য। পরে ২০১২ সালের অক্টোবরে দায়িত্ব ছেড়ে যান তিনি। বর্তমানে এ কোচ ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডের ক্রিকেট পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু দলের শৃঙ্খলা ধরে রাখার ক্ষেত্রে ইস্পাত কঠোরতার অনেক দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হাতুরাসিংহের বিকল্প হিসেবে ক্ষুরধার ক্রিকেট মস্তিষ্ক এবং উপমহাদেশের উইকেট, পরিবেশ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল এবং এর পাশাপাশি কঠোর এক কোচকেই খুঁজছে বিসিবি। সেক্ষেত্রে আপাতত বিসিবির পছন্দের তালিকায় ওপরের দিকে পাইবাস। অবশ্য বিসিবির একটি সূত্র জানিয়েছে, সম্ভাব্য কোচদের যে সম্ভাব্য তালিকা আছে সেটিতে আছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও আয়ারল্যান্ডের সাবেক কোচ সিমন্স এবং সাবেক অস্ট্রেলিয়ান খেলোয়াড়, কোচ ও নির্বাচক জিওফ মার্শ।
×